শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ইসলামে আসার কাহিনী ১ ২য় পর্ব

১ম পর্বের পরে === (আমিও সাথে সাপোর্ট করি :-P ) । সিহিন্তা বিয়ে করতে রাজী হয় কিন্তু মেয়েদের বিয়ের জন্য দরকার একজন ওয়ালি। বাবাকে তো বলা যাবেনা মুসলিম হবার কথা,তাই সিহিন্তা দাদীমার সাথে দেখা করে তাকে জানালো সব। সিহিন্তা বার বার নিষেধ করে দিয়েছিলো সবাইকে যেন কেও বাবা মা কে কিছু না জানায়। কিন্তু আমার ছোট চাচা হয়তো খুশি হয়েই বাবাকে ফোনে সব বলে দেন। কিন্তু আমরা যে ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো। বাবার মাধ্যমে মাও সব জেনে যায়। এরপর যে ভয় আমরা মুসলিম হওয়র পর থেকে করছিলাম তার সম্মুখীন হবার সময় আসলো। আজকাল দাড়িওয়ালা, ইসলামিক বেশভূষার পাত্র হলে অনেক মুসলিম মায়েরাই মেয়ে বিয়ে দিতে চায়না। সেখানে একজন অমুসলিম মা - যার সঠিক ইসলাম সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই তিনি যে রাজী হবেন না এটাই তো স্বাভাবিক। সিহিন্তা মুসলিম ছেলের সাথে বিয়ে হতে চায় জানতে পেরে মা স্বাভাবিকভাবেই অনেক কষ্ট পান, এবং পরে তা রাগে পরিণত হয়। সিহিন্তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় আর দিন রাত শুধু কাঁদতেন। । অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে দেখে ও বাসায় বলে দেয় যে ও মুসলিম হয়েছে। কিন্তু সবাই ভেবেছে যে ও অপু ভাইয়াকে আগে থেকে পছন্দ করতো এবং ভাইয়াকে বিয়ে করতে মুসলিম হয়েছে। ও যে মনে প্রানে ইসলামকে নিজের দ্বীন হিসেহে গ্রহন করেছে এটা কেউ বুঝতে চাইল না। অবশেষে মা অপু ভাইয়ার সাথে কথা বলতে রাজি হলেন। কিন্তু ভাইয়ার ইসলামিক পরিবার ও ভাইয়ার দাড়ি দেখে না করে দেয়। মা কিছুতেই সিহিন্তাকে ইসলামিক পরিবারে বিয়ে দিতে চায়নি। সিহিন্তা যাতে ইসলামিক ভাবে চলতে না পারে সেদিকেও কড়া নজর রাখা হয়। সবাই ভাবতো ভাইয়াকে ভুলে গেলে ও ইসলামকেও ভুলে যাবে। মার আরো ধারনা ছিলো যে সিহিন্তার মুসলিম বান্ধবিরা ওর মগজ ধোলাই দিচ্ছে মুসলিম হওয়ার জন্য। তাই সবার থেকে ওকে দূরে রাখার চেষ্টা করতো। অবস্থা এতোই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো যে এভাবে প্রেশারে থাকা আর সম্ভব হচ্ছিলোনা। জোর করে তো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস,ইসলামের প্রতি ভালোবাসা,আল্লাহর ইবাদত করা বন্ধ করে দেয়া যায়না। তাই প্রচুর মানষিক কষ্টের মধ্য দিয়ে ওকে যেতে হয়েছে। মা অনেক কষ্ট পাচ্ছিলো,অনেক কান্নাকাটি করতো। না পারছিলো সিহিন্তা মার কষ্ট দূর করতে না পারতো সঠিক পথ থেকে ভুল পথে যেতে। আমার এখনো মনে আছে সিহিন্তা শুকিয়ে কালো হয়ে গিয়েছিলো টেনশনে। আমার কথা কেও সন্দেহ করেনি বলে আমাকে তখন এই যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়নি।তবে সিহিন্তার অবস্থা দেখে খুব কষ্ট লাগতো। মা যখন আমার কথাও জানবে তখন যে কি হবে আল্লাহই জানেন। আমি নিজেও মানসিক কষ্ট পাচ্ছিলাম। আগেই বলেছি কারো ধারনাও ছিলোনা যে আমরা ইসলামকে সঠিক ধর্ম মানি। ভাবতো হয় সিহিন্তা ব্রেইন ওয়াশড হয়েছে না হয় প্রেমে পরেছে। সিহিন্তা বিয়ে করে ইসলাম পালনের সুযোগ পাবে। কিন্তু আমার কথা জানতে পারলে এই কষ্টের মধ্য দিয়ে কতোদিন যেতে হবে তার ঠিক নাই। আর মার কষ্ট কমানোর জন্যও তো কাওকে এখন মার সাথে থাকা লাগবে। তাই আমার মুসলিম হওয়ার কথা আর প্রকাশ করিনি কারো কাছে।খ্রীস্টান সেজেই থাকতে লাগলাম সবার সাথে। এবং খুবই সাবধানে নামায পড়তাম। বাসার সব ইসলামিক বই লুকিয়ে ফেলেছিলাম। মাকে কোনো ভাবেই মুসলিম ছেলের সাথে সিহিন্তার বিয়ের জন্য রাজী করানো গেলোনা। সিহিন্তা সিদ্ধান্ত নিয়ে পারছিলোনা কি করা উচিত এখন। আগেও বলেছি এই কঠিন সময়ে এনাম আঙ্কেল,হুমায়রা আন্টি,রেহনুমা আপু,তারিনাপু মানসিক ভাবে সাপোর্ট দেয় ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। এরপর অনেক আলাপ আলোচনার পর ঠিক হলো মা-বাবাকে না জানিয়েই সিহিন্তার বিয়ে দেয়া হবে। আমার এক চাচা হবেন ওয়ালি, যার সাথে সারা জীবনে মাত্র কয়েকবার আমাদের দেখা হয়েছে। বিয়ে হবে দাদীর বাসায়। যেহেতু কর্মদিবস ছাড়া ছুটির দিন ও বাসা থেকে বের হতে পারবে না, আবার সন্ধ্যার পরও বের হওয়া যাবেনা, তাই দিন ঠিক হল ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯; সোমবার সকালে। রামাদানের ২৬ তারিখ। ঐ পক্ষ থেকে বিয়ের হালকা পাতলা শপিং করা হলো। আমিও টিউশনির টাকা থেকে টুকটাক কিছু শপিং করলাম ওর জন্য। কলেজে যাওয়ার পথে লুকিয়ে ওর কিছু জামা-কাপড় দিয়ে আসতাম অপু ভাইয়ার কাছে। এদিকে ভাইয়া ওর এফিডেবিটের কাজটাও সেরে ফেললো। বিয়ের আগের দিন খুব বৃষ্টি ছিল, বৃষ্টির মধ্যে আমরা দুই বোন শেষবারের মত ঘুরতে বের হলাম। বসুন্ধরা সিটিতে ইফতার করলাম একসাথে। সিহিন্তার যে বিয়ে হয়ে যাবে,ও দূরে চলে যাবে সবই জানতাম কিন্তু তখনো মন থেকে মেনে নেইনি। সব এতো দ্রুত হচ্ছিলো যে কখন কিভাবে কি হয়ে যাচ্ছে বুঝে উঠতেই পারছিলাম না। যেন সব আগে থেকেই প্ল্যান করা। আল্লাহ কখন কি হবে সব ঠিক করে রেখেছিলেন। বাসায় ফিরে সিহিন্তা সারা রাত জেগে মাকে একটা চিঠি লিখল। ওর এই কাজের জন্য মা যেন ওকে ভুল না বুঝে, ওর এভাবে চলে যাওয়ার মূল কারন সংক্ষেপে বর্ননা করা হল। পরদিন সকালে মা অফিসে, আমি কলেজে চলে যাওয়ার পর ও মার আলমারিতে চিঠিটা রেখে কাউকে কিছু না জানিয়ে বের হয়ে আসল। কিছু দ্বিনী বোন একটু দূরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। ওদের সাথে ও দাদীর বাসায় চলে গেল। ওরা ছিল NSU এর রিদিতা, মাহমুদা, আয়শা, আইনুর এবং আরো কিছু বোন যাদের নাম এখন মনে পড়ছে না। দাদীর বাসায় খুব দ্রুত বিয়েটা হয়ে গেলো। আমি কলেজ থেকে গিয়েছিলাম। বিয়ের পরপরই ওকে নিয়ে ভাইয়ারা ওদের বাসায় চলে গেলো। আমি বাসায় চলে আসলাম। বাসায় আসার পর হটাত করেই কেমন জানি খালি খালি লাগছিলো। এই প্রথম বুঝতে পারলাম সিহিন্তা চলে গেছে। আর আগের মতো একসাথে পড়তে বসবোনা,একসাথে রাত জেগে গল্প করা হবেনা,একসাথে লুকিয়ে সালাত পড়া হবেনা। কলেজ থেকে এসে সারাদিনের কাহিনী বলার কেও নাই। এতো একা লাগছিলো! ওর বিয়ের পর প্রথম বার এতো কাঁদলাম। মা আসলে বাসায়, সবাই জানতে পারলে বিয়ের কথা কি হবে এসব তখন মাথায় আসেনি। শুধু বুঝতে পারছিলাম আমি একা হয়ে গেছি। [এখন থেকে আমার কাহিনী থাকবে ইন শা আল্লাহ। ] সিহিন্তার বিয়ে হয়ে গেলো। মা- বাবা জানতে পেরে ওর বাসায় ছুটে গেলো। তারা বিশ্বাস করতে পারছিলোনা। সিহিন্তা যে না জানিয়ে বিয়ে করার মতো কাজ করতে পারে তা আসলে কেও ভাবতেও পারেনি। শুধু মা বাবা না,আমার কোনো আত্মিয়ও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি। বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আর কিছু করার নাই। মা-বাবা বিয়েটা মেনে নিলো। কিন্তু মা অনেক কষ্ট পেয়েছিলো। সারাদিন কাঁদতো।মাঝে মাঝে মনে হতো এমন আঘাতে মার মানসিক অবস্থায়ও প্রভাব পরেছিলো। কষ্ট পেলেও মা রোজ সিহিন্তাকে কল করে খোঁজ নিতেন। ওর বাসায়ও যেতেন ওকে দেখতে। মা আসলে আমাদের অনেক বেশি ভালোবাসতো। সিহিন্তার বিয়ে হয়ে গেলো,আর তখন থেকেই আমার আসল পরীক্ষা শুরু হলো। মা রোজ কাঁদতো আর বলতো যে "তোমার বোন আমাকে কষ্ট দিয়েছে,তুমি এমন কষ্ট দিওনা,তাহলে আমি মারা যাবো।" আমি কিছুই বলতে পারতাম না। চুপ করে থাকতাম। সব আত্মীয়রাও একি কথা বলতো। বলতো যে তুমি তো দেখতেই পাচ্ছো তোমার বোন তোমার মাকে কতো কষ্ট দিয়েছে,তুমি কষ্ট দিওনা। আমি জানতাম আমাকেও এমন কষ্ট দিতে হবে। না পারতাম মাকে কথা দিতে না পারতাম মার কষ্ট সহ্য করতে। এবং এর ফল হলো ভয়াবহ। আমি ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করলাম। সিহিন্তা আমার কষ্ট বুঝতো,কিন্তু ওর কিছুই করার ছিলোনা। আমি সবার থেকে দূরে দূরে থাকা শুরু করলাম। আত্মীয়দের বাসায় কম যেতাম। ক্লাস থেকে দেরি করে বাসায় যেতাম। ক্যাম্পাসে বসে থাকতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। যেদিন ফ্রেন্ডরা থাকতোনা এই দুপুরে রাস্তায় হাটতে থাকতাম। বাসায় যেতে ইচ্ছা করতোনা। অনেক বেশি ডিপ্রেশনে ভুগতাম। কেও যাতে না জানে আমি মুসলিম তাই সকল ইসলামিক বই লুকিয়ে রেখেছিলাম। নেটেও আমার ভালো ইসলামিক ফ্রেন্ড ছিলোনা যে সাহায্য করবে। সিহিন্তাও সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ইসলামের জ্ঞান অর্জনের দিকে আগালে মনে হতো মাকে কষ্ট দিচ্ছি,আবার মার কথা শোনাও অসম্ভব। অসম্ভব মানসিক কষ্টে থাকতাম প্রতিনিয়ত। রুমের দরজা আটকাতে দিতোনা মা। তাই রাতে একসাথে সব ওয়াক্তের সালাত পড়তাম। মনে যাতে কি হবে এই চিন্তা না আসে তাই ক্লাস, পড়া, টিউশনি দিয়ে সারাদিন এতো ব্যস্ত রাখতাম নিজেকে যে রাতে ২/৩ ওয়াক্তের সালাত পড়েই টায়ার্ড হয়ে কখন জানি সেভাবেই ঘুমিয়ে পরতাম। নামায পড়া কমতে লাগলো। ইসলামের থেকে দূরে থাকার ফলে ঈমানও কমতে লাগলো। সিহিন্তার বাসায় যখন যেতাম খুব ভালো থাকতাম। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়তাম। মাথায় কাপর দিয়ে থাকতেও একটুও কষ্ট হতোনা। ওদের বাসার সবাই আমাকে অনেক আদর করতো। অপু ভাইয়া হাজ্ব করতে গিয়েছিলেন। কুরবানীর ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে ঈদ পর্যন্ত ওদের বাসায় থেকেছিলাম। কুরবানীর ঈদ যে আসলে কেমন হয় প্রথম বুঝলাম ওদের বাসায় ঈদ করে।ঈদের আগেরদিন সবাই মিলে গল্প করতে করতে চালের আটারর রুটি বানালাম।ঈদের দিন কুরবানী দেয়া,গোস্ত ভাগ করা ইত্যাদি অনেক কাজ। প্রথম ভুড়ি সাফ করা শিখলাম হাতে কলমে শরীফুন্নেসা আন্টির কাছ থেকে।ডিপ্রেশনের কথা ভুলেই যেতাম সিহিন্তার সাথে থাকলে। বাসায় আসার পর আবার শুরু হতো সেই পুরান কষ্ট।সিহিন্তা কি সুন্দর ইসলাম পালন করতে পারছে আর আমি পারছিনা। নামাযটাও পড়তে পারছিনা,পর্দা করা,কুরআন তেলাওয়াত শিখে ইত্যাদি তো দূরের কথা।ইসলামিক হালাকা গুলোতেও যেতে পারতাম না কারন বাইরে গেলেই মা কল দেয়। না ধরলে রেগে যাবে। আর হালাকা হয়ও আসরের ওয়াক্তে যখন আমার ক্লাস থাকেনা। আমাকে ফোনে না পেলে ফ্রেন্ডদের কল করলেই জেনে যাবে যে ক্লাস নাই তাও আমি বাইরে আছি। সিহিন্তা আর আমার মাঝে কতো মিল সবাই জানতো। এবং আমিও যে মুসলিম হয়ে যাবো তা সবাই বুঝতো। সরাসরি জোর করতে পারতোনা যদি পালিয়ে বিয়ে করে চলে যাই এই ভয়ে। ইমোশনাল্লি আমাকে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলতো। তখন থেকে আমার একটা সমস্যা শুরু হয়। আমি একা থাকতে পারতাম না।একা হলেই মাথায় দুনিয়ার দু:শ্চিন্তা আসতে থাকতো আর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেত।সারারাত ঘুমাতে পারতাম না,ছটফট করে কাটিয়ে দিতাম। ইসলাম পালন করতে পারছিনা ঠিক মতো,আল্লাহ যদি নারাজ হয়?ভয় লাগতো। আবার পালন করতে গেলে যদি মা জেনে যায়,আমি কোথায় যাবো,কিভাবে সব সামলাবো এসব ভেবে ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে যেতাম। ঈমান খুব কমে গিয়েছিলো। চিন্তা যাতে মাথায় না আসে তাই নিজেকে ব্যস্ত রাখা শুরু করলাম। ক্লাস শেষে ইচ্ছা করে দেরি করে আসতাম। টিউশনির সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টায় লেগে গেলাম। মার সামনে কম যেতে লাগলাম। মা অনেক বলতো অফিস থেকে আসলে যেন মার সাথে একটু গল্প করি, একসাথে টিভি দেখি। কিন্তু আমি মার কাছে যেতাম না, জানি সিহিন্তার কথা উঠবেই আর আমি যেন এই কাজ না করি বলবেই। কিছু করার না থাকলে গল্পের বই পড়ে বা নেটে ফ্রেন্ডদের সাথে রাত জেগে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতাম। যতোক্ষন না টায়ার্ড হয়ে নিজে থেকে চোখ বন্ধ হয়ে আসতো,ঘুমানোর চেষ্টা করতাম না। মাসের পর মাস কেটে যেতে লাগলো এভাবে। সবাই ভাবতো আমি অনেক হাসিখুশি আছি। কেও বুঝতোনা আমার ভিতরে কি চলছে। নিজের সাথে যুদ্ধ করে করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। অনেকদিন হয়ে গেছে। আমি থার্ড ইয়ারে পড়ি।আমার বোনের বড় ছেলে আনাসের জন্ম হয়ে গেছে। উমারের জন্ম হবে সে বছর্। আমি ডিপ্রেশন থেকে পালাতে নিজেকে এতোই ব্যস্ত করে নিয়েছিলাম যে আমার আর নিজের জন্য সময় ছিলোনা। একটা কোচিং এ পড়াতাম। ৪/৫টা টিউশনি করতাম। একটু সময় ফ্রী পেলে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিয়ে বা ঘুরে কাটিয়ে দিতাম। সালাত পড়তাম,আবার ছাড়তাম। মাঝে মাঝে মাথায় কাপর দিতাম,মাঝে মাঝে দিতাম না। দিন চলতে লাগলো। আমি সুখি ছিলাম না। সারাক্ষন মাথার মাঝে ঘুড়তো যে আমি মুসলিম হয়েও ইসলাম পালন করছিনা। কোনো কিছুতেই শান্তি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। টিউশনি করে মাসে ভালোই এ্যামাউন্ট হাতে আসতো, পড়ালেখায়ও খারাপ ছিলাম না। তবুও মনে শান্তি ছিলোনা। একদিন দুপুরে বাসায় ছিলাম। কি ভেবে খুঁজে একটা বাংলা কুরআন বের করলাম। সিহিন্তার ছিলো কুরআন টা। অজু করে কুরআন নিয়ে বসলাম। সুরা আল- বাকারা পড়তে লাগলাম। যতোই পড়তে লাগলাম হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগলো। যখন ৭ নাম্বার আয়াতটা পড়লাম কান্না আটকাতে পারলাম না আর। ৭ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, " আল্লাহ তাদের মন ও শ্রবণ-শক্তির ওপর 'মোহর' অঙ্কিত করে দিয়েছেন। এবং তাদের দৃষ্টিশক্তির ওপর আবরণ পড়েছে; বস্তুত তারা কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। " আল্লাহ চাইলে আমার মনের ওপর মোহর অঙ্কিত করে দিতে পারতেন,তাহলে আমাকে জাহান্নামের আগুন হতে কেও রক্ষা করতে পারতোনা। কিন্তু আল্লাহ তা করেননি। আমি ঠিক মতো সালাত পড়িনা,পর্দা করিনা,তাও তিনি আমাকে সুজোগ দিয়ে যাচ্ছেন! আল্লাহু আকবর! আর আমি কিনা তাও আল্লাহর থেকে দিন দিন দূরে চলে যাচ্ছি! যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত এতোদিনে, আল্লাহকে আমি কি জবাব দিতাম?কি মুখ নিয়ে তাঁর সামনে যেতাম!সঠিক পথের সন্ধান পাওয়ার পরেও,সত্য জানার পরেও কিভাবে আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করে,আল্লাহর ইবাদাত না করে থাকতে পারছি! কাঁদতে কাঁদতে দুআ করতে লাগলাম,আল্লাহ আমার মনের ওপর মোহর অঙ্কিত করে দিওনা কখনও। আর আমার মার মনের ওপর মোহর অঙ্কিত করে থাকলে তা সরিয়ে দাও। আমাকে যেভাবে হেদায়েত দিয়েছো আমার মাকেও হেদায়েত দাও। আমি যদি জান্নাতে যেতে পারি আমার মা যেন আমার পাশে থাকে। অনেক কেঁদেছি সেদিন। কাঁদতে কাঁদতে আরো পড়তে লাগলাম। আল্লাহ আরো কি কি বলেছেন জানার চেষ্টা করলাম। সুরা আল-বাকারা এর ৬২ নাম্বার আয়াতে এসে আবার কেঁদে দিলাম। এই আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, "নিশ্চয় জেনো, শেষ নবীর প্রতি বিশ্বাসী হোক, কি ইহুদি, খ্রিস্টান কিংবা সাবীই - যে ব্যক্তিই আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনবে ও নেক কাজ করবে, তার পুরষ্কার তার রব্ব এর নিকট রয়েছে এবং তার জন্য কোনো প্রকার ভয় ও চিন্তার কারন নেই। " আলহামদুলিল্লাহ!! এতোদিনের ডিপ্রেশন ওই এক মূহুর্তেই শেষ হয়ে গেলো। আল্লাহ আছেন,নিজে বলেছেন আমার কোনো ভয় বা চিন্তার কারন নেই। তাহলে কি জন্য আমি হতাশ হবো! আমি সব সময় দুআ করতাম আমার যেন মাকে না জানিয়ে পালায় বিয়ে করা না লাগে। মা যেন আমার বিয়েতে উপস্থিত থাকে। খুশি মনে মুসলিম ছেলের সাথে আমার বিয়ে দেন। এতোদিন দুআ করতাম আর এখন বিশ্বাস করা শুরু করলাম যে আল্লাহ চাইলে তাই হবে! আবার সালাত পড়া শুরু করলাম। মাথায় কাপর দিতে তখনও সমস্যা হতো তবুও চেষ্টা করতে লাগলাম। অযথা অনলাইনে আড্ডা দেয়া কমিয়ে দিতে দিতে বন্ধই করে দিলাম। আগেই বলেছি নিজেকে এতোই ব্যস্ত করে ফেলেছিলাম যে নিজের জন্যই সময় ছিলনা আমার্। তবুও ইসলাম নিয়ে পড়া শুরু করলাম আবার্। ধীর গতিতে যদিও তা আগাতে লাগলো তবে এবার আর পথভ্রষ্ট হতে হয়নি।কারণ এবার আমার কথা বলার ও শোনার জন্য একজন আছেন। যখনই কষ্ট লাগতো সেজদায় আল্লাহকে সব বলতাম। খুব আপনদের সাথে যেভাবে মানুষ কথা বলে আল্লাহর সাথে সেভাবেই কথা বলতাম (এখনও বলি)। মন হালকা হয়ে যেত। কোনো কষ্টকেই আর কষ্ট মনে হতোনা। আলহামদুলিল্লাহ!! আবার আমি নিজেকে ফিরে পেলাম! ২০১২ সাল,কিছুদিন পরেই রামাদান মাস শুরু হবে। নিয়ত করে রেখেছি এবার যতো বাঁধাই আসুক সব রোজা রাখতে চেষ্টা করবো,কুরআন তেলাওয়াত করতে পারতাম না তখনও তাই ঠিক করেছি বাংলা অনুবাদ টাই পুরাটা পড়ে শেষ করবো। তারাবির সালাত পড়বো,কি কি দুআ করবো,কি কি আমল করবো অনেক কিছুই প্ল্যান করে রেখেছিলাম। এমনকি সা'বান মাসেও কয়েকটা রোজা রেখেছি। পুরাপুরি প্রস্তুত আমি রমাদানের জন্য। রমাদান মাসের আগের দিন হটাত করেই প্রচন্ড জ্বর উঠে। ১০৩ এর নীচে জ্বর নামেই না। সারারাত জ্বরে ছটফট করলাম। তিনটার দিকে যাও একটু ঘুমালাম,এই রাতে সবার "চোর এসেছে, চোর এসেছে" ডাকাডাকিতে ঘুম ভাংলো। উঠে দেখি চার তালার জানালা দিয়ে চোর আমার প্রিয় মোবাইলটা নিয়ে গেছে! মন খারাপ হয়ে গেলো। পরের দিনও জ্বর কমেনা। ডাক্তারের কাছে গেলাম,টেস্ট করে ধরা পরলো আমার জন্ডিস হয়েছে। ডাক্তার আরও টেস্ট দিলেন,ধরা পড়লো হেপাটাইটিস A ভাইরাস। জন্ডিস হয়েছে,রোজা তো রাখতেই পারবোনা,এতো প্ল্যান এতো প্রস্তুতি কিছুই আর কাজে লাগাতে পারছিনা। মন ভেঙ্গে গেলো। দিন রাত কাঁদতাম। সুস্থ্য হবার নামও নাই এদিকে রমাদান মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে! হেপাটাইটিস A এর চিকিতসা হলো মানসিক ও শারীরিক বিশ্রাম। শারীরিক বিশ্রাম ঠিকই ছিলো কিন্তু মানসিক অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। কোথায় সুন্নাত সহো সালাত পড়বো,তারাবি পড়বো,সেখানে ফরজ সালাত গুলাই কোনো রকমে ইশারায় পড়তে হচ্ছে। কিছু খেতে পারতাম না। মা বাবা চিকিতসার কোনো ত্রুটি রাখেননি। তাও রমাদানের শেষের দিকে এতোই দুর্বল হয়ে পরেছিলাম যে সেলাইন দেয়া লেগেছে ৩টা। ডাক্তারও বার বার বলতো যে কি নিয়ে এতো দুশ্চিন্তা করেন যে অবস্থা দিন দিন এভাবে খারাপ হচ্ছে? সবাইকে বলতাম সামলে 4th year ফাইনাল পরীক্ষা,পড়তে পারছিনা তাই টেনশন হচ্ছে। রমাদান মাস শেষ হয়ে গেলো,কিছুই প্ল্যান মতো করতে পারিনি। পরের রমাদানে বেঁচে থাকবো কিনা তাও জানিনা। মোবাইলটাও ছিলোনা যে নেট থেকে ইসলামিক লেকচার পড়বো বা শুনবো। পুরা রমাদান হসপিটাল আর আমার রুমের মধ্যে থেকেই কেটে গেলো। আল্লাহর ইচ্ছা ভেবে মেনে নিলাম। প্রায় দুই মাস কষ্ট করে এরপর সুস্থ্য হলাম। একা সারাদিন থাকাতে চিন্তা করার অনেক সুজোগ পাই। অতীতে কি ভুল করেছি, হেদায়ের পাওয়ার পরেও কি ভুল করেছি সব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। নিজের মাঝে কি কি পরিবর্ত্ন আনতে হবে ঠিক করলাম। সেই রমাদান মাস আমার জন্য অনেক বড় শিক্ষা ছিলো। যখন সুজোগ পেয়েছিলাম সালাত পড়িনি,পর্দা করিনি,গুনাহে লিপ্ত ছিলাম। আর যখন এতো প্ল্যান করলাম আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কিছুই করতে পারলাম না। বুঝতে পারছিলাম হেদায়েত পাওয়ার পরেও আর আমার এভাবে পথভ্রষ্ট হওয়া চলবেনা। আল্লাহর এতো বড় রহমত কে আমি এভাবে for granted নিয়ে নিলে হবেনা। আমার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা হয়ে গেলেও এখনও যে গুনাহ করে যাচ্ছি তার শাস্তি তো কম হবেনা। কবরের আজাব,জাহান্নামের আগুন থেকে আমাকে কে রক্ষা করবে তখন! অনেক ভুল করেছি আর না। একটা একটা করে ভুল সংশোধন করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম। ভুলের জন্য তওবা করে নিলাম। সময় খুব ভালো কাটছিলো। সারাদিন টিউশনি করতাম। স্টুডেন্টদের সাথে থাকতে নিজেকেও বাচ্চা মনে হতো,যেন আমিও আবার ছোট হয়ে গেছি। এছাড়া সময় পেলেই হয় আমার ভার্সিটি ফ্রেন্ড শ্বাশতীর বাসায় চলে যেতাম নাহলে সিহিন্তার বাসায় যেতাম। এই দুইজনের সাথে থাকলে হাজার মন খারাপ হলেও তা ভালো হয়ে যেতো। আর আমার দুই পুতুল আনাস,উমার তো আছেই। ওদের সাথে থাকলে দিন কিভাবে চলে যেত বুঝতেও পারতাম না। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। uoda তে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স এ ভর্তি হলাম। মজা লাগতো খুব পড়তে। মাঝে একটা স্কুলেও পড়াই কিছুদিন। সময় কেটে যাচ্ছিলো ভালোই আলহামদুলিল্লাহ। ডিপ্রেশন আর ছিলোনা।ইসলাম প্র্যাক্টিস করার প্রতিও দিন দিন আরো বেশি সচেতন হচ্ছিলাম।তবে মাঝে মাঝে নিজেকে একটু একা একা লাগতো। সব মেয়ের মতো আমিও একদিন নিজের সংসার হবার স্বপ্ন দেখতাম। মাস্টার্স করছি, বয়সও তো কম হয়নি তখন! ২০১২ এর শেষের দিকে,নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে একদিন ঠিক করলাম যে আর না,জীবনে যা ভুল করার করেছি। এখন থেকে সব বাদ,সম্পূর্ণ আল্লাহর পথে চলবো।যেই ভাবা সেই কাজ। প্রথমেই fb থেকে খুব পরিচিত আর হাতে গুনা কয়েকজন ইসলামিক ভাইয়াদের বাদ দিয়ে বাকি সব male id ডিলেট করে দিলাম। আগে fb ব্যবহার করতাম চ্যাট করতে কিন্তু এবার ইসলাম জানার কাজে লাগালাম। প্র্যাক্টেসিং বোনদের খুঁজে খুঁজে এ্যাড করা শুরু করলাম। Authentic কয়েকটি ইসলামিক fb পেইজের নাম জোগার করলাম সিহিন্তার থেকে। সেসব পেইজের পোস্ট রেগুলার পড়তাম। সিহিন্তার থেকে বই এনেও পড়তাম। বাসায় সিহিন্তার ইসলামিক বই গুলো সব খুঁজে বের করলাম। আরো বেশি জ্ঞান অর্জনের দিকে মনোযোগ দিলাম। নিজেকে অনেকটাই বদলে ফেললাম। আর তখনই আমার জীবনের আরেকটি বড় ঘটনার সূচনা হলো! আমার ফেন্ড লিস্টে একজন ছিলেন, যাকে ইসলামিক পোস্টের জন্য এ্যাড করেছিলাম আরো আগে। তবে কথা হতোনা তার সাথে। সেই ছেলে আমার স্ট্যাটাস পড়ে যখন জানতে পারলো আমি রিভার্টেড মুসলিম, সে আমাকে ম্যাসেজে একজন বয়ষ্ক মহিলার id দিলো এ্যাড করার জন্য। এবং বললো যে আমার ইসলাম পালনে সমস্যা হলে ওই মহিলার সাথে আলাপ করতে। এ্যাড করলাম উনাকে। উনার নাম ফয়জুন নাহার। খুব ভালো লাগতো উনার সাথে কথা বলতে। উনার কাছ থেকেই জানতে পারলাম উনি সৌদি আরবে থাকেন। যদিও তিনি ইউসুফের আপন মা না তবে ইউসুফ তাকে আপন মার মতোই দেখেন। তিনিও ইউসুফকে তার ছেলের মতো দেখেন। তিনি আমার থেকে আমার বাসার অবস্থা,আমার অবস্থা ইত্যাদি জেনে নিলেন ও বললেন যে তিনি আমার জন্য ছেলে দেখবেন। প্রায়ই উনার সাথে চ্যাটে কথা হতে লাগলো। আমিও আপন ভেবে উনার সাথে আমার সকল সমস্যা নিয়ে আলাপ করতাম। একদিন উনি আমার জন্য একটি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলেন.... ফয়জুন নাহার আন্টির সাথে আমার সম্পর্ক খুব ভালো ছিলো। অনেক কথাই তার সাথে শেয়ার করতাম। তো একদিন উনি আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলেন। উনি ছেলের বর্ণনা দিতে লাগলেন। কী রকম ইসলামিক মাইন্ডের,পরিবার কেমন ইত্যাদি। কিন্তু যতবার প্রশ্ন করতাম ছেলে কী করে, নাম কি, উনি কথা এড়িয়ে যেতেন। তখনই আমি সন্দেহ করি উনি ইউসুফ হোসেনের কথাই বলছে। কারণ উনি কী করেন আমি জানি। আমি উনার কথা শুনছিলাম আর হাসছিলাম মনে মনে। ইউসুফ হোসেন কেন আমাকে উনাকে এ্যাড করার জন্য ম্যাসেজ দিয়েছিলেন তা পরিষ্কার হয়ে গেলো। সেদিন উনার pc তে সমস্যা থাকায় বেশি কথা হয়নি। পরেরদিন উনি জানান যে তিনি ইউসুফের কথাই বলছিলেন। আমি আমার বিয়ের পাত্র খোঁজার দ্বায়িত্ব অপু ভাইয়াকে দিয়েছিলাম। সুতরাং আমি উনাকে বললাম ইউসুফকে বলতে উনি যেনো অপু ভাইয়ার সাথে কথা বলেন। ভাইয়ার পছন্দ হলে এরপর আমি কথা বলবো। ইউসুফ জানতোনা শরীফ আবু হায়াত আমার দুলাভাই,জানার পর তো উনি মহা খুশি। ভাইয়ার ফোন নাম্বার দিয়েছিলাম আমি ফয়জুন নাহার আন্টির কাছে। ইউসুফ ভাইয়ার সাথে কথা বলে দেখা করলেন। ভাইয়া উনাকে খুব পছন্দ করলেন। কথায় কথায় বের হয়ে গেলো উনার ছোট বেলার বন্ধু আমার চাচাতো বোনের হাসবেন্ড। ভাইয়া আমাদের সামনাসামনি দেখা করতে বললেন। এক সপ্তাহ পর ভাইয়ার বাসায় দেখা করবো ঠিক হলো। এই এক সপ্তাহে আমি ফয়জুন নাহার আন্টির কাছ থেকে উনার সম্পর্কে মোটামুটি যা জানার জেনে নিলাম। উনার মা আর বোনও আমার ছবি ও বায়োডাটা দেখে পছন্দ করলেন। এক সপ্তাহ পর শুক্রবার জুম্মার সালাতের পর উনি আসলেন আপুর বাসায়। সাথে আমার চাচাতো বোন ও তার হাসবেন্ডও আসলো। আমার জন্য একটা বই "আদর্শ নারী" ও চকলেট নিয়ে এসেছিলেন। যখন সামনে গেলাম কথা বলতে, উনি আমাকে প্রথম প্রশ্ন করেছিলো যে আমার দৃষ্টিতে বিয়ে মানে কী! আমার মাথা তখন পুরাই ব্ল্যাঙ্ক। কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে ছিলাম। আমি অনেক বেশি ইমোশনাল তা উনি আন্টির থেকে জানতে পেরেছিলেন। এরপর আমাকে ইমোশন নিয়ে কিছু লেকচার দিলেন। আমি মাথা নাড়ানো ছাড়া আর কিছুই বলিনি। এমনকি উনাকে একটা প্রশ্নও করিনি। আমার যা জানার ছিলো তা তো আগেই আন্টির থেকে জেনে নিয়েছিলাম,তাছাড় া কেনো জানি মুখে কোনো প্রশ্নও আসছিলোনা। যাই হোক আমি প্রশ্ন না করাতে উনি মনে কষ্ট পেলেন। উনার ধারণা হলো যে আমার উনাকে পছন্দ হয়নি। মন খারাপ হয়ে গেছিলো উনার। দুপুরে সিহিন্তার বাসায় খেয়ে উনারা চলে গেলেন। বিকালে অপু ভাইয়া আমাদের দুজনকেই কল করে জানতে চাইলেন আমাদের কী মত। আমরা জানালাম যে আমরা রাজি আছি। এপর্যন্ত সব ঠিক মতোই এগিয়েছে। এখন আসল পরীক্ষা শুরু। তা হলো আমার মাকে রাজি করানো! মাকে জানানোর দায়িত্য অপু ভাইয়া আর সিহিন্তা নিলো। টেনশনে আমার খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো। মুসলিম হবার পর থেকে যে পরীক্ষা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম সেই পরীক্ষার দিন এখন সামনেই। দুআ করতে লাগলাম মা বাবা যেন রাজি হয়ে যায় আর আমার বিয়েতে যেন হাসি মুখে উপস্থিত থাকেন। ইউসুফ আর আমি রাজি,ওর পরিবার রাজি,এখন আমার বাসায় জানানোর পালা। অপু ভাইয়া একদিন উনার বাসায় মা আর বাবাকে যেতে বললেন। মা বাবা যাওয়ার পর সন্ধ্যায় সিহিন্তা আর ভাইয়া উনাদের জানালেন ইউসুফের কথা। মা তো শুনেই না করে দিলো। মুসলাম ছেলের সাথে উনি কিছুতেই আমার বিয়ে দিবেন না। রাগ করেই সিহিন্তার বাসা থেকে চলে আসলো। এদিকে আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। মা বাবা যে রাজি হবেনা তা তো ভালো মতোই জানতাম। এখন বাসায় এসে আমাকে ইসলাম গ্রহনের কথা জিজ্ঞেস করলে কি বলবো,কি করবো এসব ভাবছিলাম। আর দুআ করছিলাম বার বার আল্লাহ যেন সব সহজ করে দেন। আমি চাই মা বাবা বিয়েতে রাজি হয়ে খুশি মনে উপস্থিত থাকুক। তাদের না জানিয়ে বিয়ে করতে চাইনি কখনোই। মা বাসায় আসার পর প্রথমে শান্ত ছিলেন। আমাকে ডেকে বললেন ভাইয়া আমার জন্য উনার মতো ইসলামিক দাড়িআলা ছেলে ঠিক করেছেন। আমিও কি দাড়ি আলা ছেলে বিয়ে করতে চাই? আমি শুধু বলেছি যে ভাইয়া যদি ঠিক করেন তবে ভালো ছেলেই হবে। তখন আর মার বুঝতে বাকি নাই আমিও মুসলিম হয়ে গেছি। এরপরের প্রতিক্রিয়া হলো ভয়ংকর। অনেক রাগারাগি করলেন,কান্নাকাট ি করলেন,বারবার ইমোশনাল্লি বুঝাতে লাগলেন। আমি পাথর হয়ে দাড়িয়ে ছিলাম। একটা টু শব্দও আর করিনি। এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলিনি। মার কোন প্রশ্নের জবাব দেইনি। মাথা নীচু করে শুনে যাচ্ছিলাম সব। মা পাগলের মতো করছিলেন। একটু পর পর আমার রুমে এসে বকে যেতেন। একবার এসে মোবাইল নিয়ে গেলেন, হাতে যা টাকা ছিলো নিয়ে গেলেন। পরে আবার এসে মোবাইল ফেরত দিয়ে গেলেন। রুমের দরজা আটকাতে নিষেধ করে গেলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন