সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১৬

মা

"মা" কিছুই বুঝেনা, ব্যক্ত করতে পারেনা, কোনো শক্তি নেই কিছু বলার ও বুঝার, ক্ষুধা পেলে শুধু কান্নাই যার ভাষা, এমন একটি শিশুকে হাজারো বাঁধা বিপত্তির পর্বতমালা পেরিয়ে, বহু ত্যাগ তিতিক্ষার সাগর পাড়ি দিয়ে আঁচলে বাঁধা সুখের পরশে স্বযত্নে লালন-পালন করে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলা সেই মমতাময়ী নারীই হলেন মা। মা অতি ছোট্ট একটি শব্দ হলেও এর ভালবাসার বিশালতা সীমাহীন। পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর শব্দটি হচ্ছে মা। জগৎ সংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মাঝে যে মানুষটির একটু সান্ত্বনা আর স্নেহ-ভালোবাসা আমাদের সমস্ত বেদনা দূর করে দেয় তিনিই হলেন মা। মায়ের চেয়ে আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। দুঃখে-কষ্টে, সংকটে-উত্থানে যে মানুষটি স্নেহের পরশ বিছিয়ে দেয় তিনি হচ্ছেন আমাদের সবচেয়ে আপনজন মা। প্রত্যেকটি মানুষ পৃথিবীতে আসা এবং বেড়ে ওঠার প্রধান ভূমিকা মায়ের। মায়ের তুলনা অন্যকারো সঙ্গে চলে না। মা হচ্ছেন জগতের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ সবকিছুর উর্দ্ধে মা। মা মানে একরাশ অন্ধকারে এক বুক ভালবাসা, মা মানে সুন্দর জীবন, মা মানে সুন্দর জাতির উপহার। মা এমনই এক মমতাময়ী, চিরসুন্দর, চির শাশ্বত, যার নেই কোন সংজ্ঞা। মধু মিশ্রিত এক মহৌষধের নাম মা। ছোট্ট শিশুর প্রথম ভালবাসা, নিরাপত্তা আর মমতায় গড়া মায়ের কোল, সেই উষ্ণতার পরশে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে চায় মন। বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে মা'কে ঘিরে জমা হয় ভালবাসা, অভিমান আর দুষ্টুমির শত শত গল্প। সঙ্কটকালে কেবলই মনে হয় যদি সব কিছু ছেড়ে মা"য়ের স্নেহমাখা কোলে মুখ লুকাতে পারতাম, তবে পৃথিবীর কোন কষ্টই আমাকে স্পর্শ করতে পারতোনা। পৃৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত মা। মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত। মায়ের সেবা শুশ্রুষার দ্বারা জান্নাতের হকদার হওয়া যায়। বাবার তুলনায় ইসলাম মায়ের অধিকার অধিক ঘোষণা করেছে। প্রিয় নবী (সা.) পরিণত বয়সে মায়ের সান্নিধ্য পাননি। এ জন্য তিনি আফসোস করতেন। মায়ের সেবা করতে না পারার কষ্ট তার অন্তরে সর্বদা উপলব্দি করতেন। এ জন্য তিনি দুধমাতা হালিমা সাদিয়াকে (রা.) নিজের গায়ের চাদর বিছিয়ে দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেছেন। সন্তানের জন্য মায়ের এক রাতের কষ্টের বিনিময় আদায় করা যাবে না কোনোভাবেই। মায়ের সঙ্গে নম্র আচরণ, যথাসাধ্য সেবা শুশ্রুষা এবং কায়মনোবাক্যে তার প্রতিদানের জন্য প্রভুর দরবারে দোয়া করলে মায়ের হক যৎকিঞ্চিত আদায় হতে পারে। মা সন্তানের জন্য জান্নাতের পথ করে দেন। যে সন্তান মায়ের সান্নিধ্য গ্রহণ করার পাশাপাশি মাকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে তারাই সাফল্যের সন্ধান পেয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, 'আর তোমার পালনকর্তা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সুব্যবহার করবে। যদি তাদের মধ্যে একজন কিংবা দু’জনই তোমার কাছে বৃদ্ধ বয়সে অবশ্যই পৌঁছে যায়, তাহলে (তাদের খিটখিটে ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে) তাদের তুমি উহ্ শব্দও বলবে না এবং তাদের ধমকও দেবে না। আর তাদের সঙ্গে তুমি সম্মানজনক কথা বলবে এবং তাদের জন্য দোয়ার মধ্য থেকে নম্রতার বাহু ঝুঁকিয়ে দাও। সাহাবি আবু উমামাহ (রা.) বলেন, একজন লোক বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) সন্তানের ওপর পিতা-মাতার অধিকার কী? তিনি (সা.) বললেন, তারা দু’জন তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইসলামের আদর্শ মোতাবেক মায়ের মর্যাদা প্রদান করে জান্নাত অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন