সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১৬
মা
=মা=
আল্লাহ বলেন,
‘আমি মানুষকে তাদের মাতা-পিতার ব্যাপারে উত্তম আচরণের তাকিদ প্রদান করেছি। কেননা তার মা কষ্টের পর কষ্ট স্বীকার করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছর পর সে বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে। তুমি তোমার নিজের সৃষ্টির জন্য আমার শোকর আদায় করো এবং তোমার লালন-পালনের জন্য পিতা-মাতারও কৃতজ্ঞতা আদায় করো।’ (সূরা লুকমান, আয়াত নং-১৪)।
পবিত্র কুরআন মজিদের এ বর্ণনাভঙ্গিতে এটা সুস্পষ্ট হয় যে, মা সেবা, ভালবাসা, আনুগত্য, ভাল আচরণ ও কৃতজ্ঞতা পাওয়ার বেশি অধিকারী।
সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একজন সাহাবী নবী করিম সা: এর কাছে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমার কাছে খেদমত পাবার সবচেয়ে বেশি হকদার কে?
রাসূলে করিম সা: বললেন তোমার মা।
-তারপর?
-তোমার মা।
-তারপর?
-তোমার মা।
-তারপর?
-তোমার পিতা এবং তারপর পর্যায়ক্রমে তোমার আত্মীয়-স্বজন।’(বুখারী, মুসলিম)
একবার এক ব্যক্তি রাসূলে করিম সা:-এর কাছে হাজির হয়ে অভিযোগ করল হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা খারাপ মেজাজের মানুষ।
প্রিয় নবী সা: বললেন ‘নয় মাস পর্যন্ত অব্যাহতভাবে যখন সে তোমাকে পেটে ধারণ করে ঘুরে বেড়িয়েছে, তখনতো সে খারাপ মেজাজের ছিল না।’
-হজরত! আমি সত্য বলছি সে খারাপ মেজাজের।’
-তোমার খাতিরে সে যখন রাতের পর রাত জাগত এবং নিজের দুধ পান করাত, সে সময়তো সে খারাপ মেজাজের ছিল না।’
-আমি আমার মায়ের সেসব কাজের প্রতিদান দিয়ে ফেলেছি।’
-সত্যিই কি তুমি তার প্রতিদান দিয়ে ফেলেছ?’
-আমি আমার মাকে কাঁধে চড়িয়ে তাঁকে হজ করিয়েছি।’
-তুমি কি তাঁর সেই কষ্টের বদলা বা প্রতিদান দিতে পার, যা তোমার ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় সে স্বীকার করেছে?’
একবার হজরত জাহিমাহ রা: রাসূলে করিম সা:-এর খিদমতে হাজির হয়ে বললেন হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করাই আমার ইচ্ছা। এখন এ ব্যাপারে পরামর্শ গ্রহণের জন্য আপনার কাছে এসেছি, বলুন এ ব্যাপারে আপনার নির্দেশ কি?
-তোমার মা কী জীবিত আছেন?
-জ্বী, জীবিত আছেন।
-তাহলে তুমি ফিরে যাও এবং তার খিদমতেই লেগে থাক। কেননা তার পায়ের নিচেই জান্নাত। (ইবনে মাযাহ, নাসায়ি শরিফ)।
মায়ের খেদমতের গুরুত্ব সম্পর্কে সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেছেন ‘আল্লাহর নৈকট্য এবং সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মায়ের সাথে উত্তম আচরণের চেয়ে বড় আমল আমার জানা নেই।’
মা যদি অমুসলিমও হয় তবুও তার সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে এবং তার সম্মান ও খেদমত করতে হবে।
হজরত আসমা রা: বলেন ‘রাসূল সা:-এর জীবিতাবস্খায় আমার মা মুশরিকা থাকাকালীন আমার কাছে আসে। আমি রাসূল সা:-এর খিদমতে আরজ করলাম
-আমার মা আমার কাছে এসেছে অথচ সে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন। সে ইসলামকে ঘৃণা করে, এমতাবস্খায়ও কী আমি তার সাথে উত্তম ব্যবহার করব?
-অবশ্যই তুমি তোমার মায়ের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে থাক।’ (সহিহ বুখারি শরিফ)।
পৃথিবীতে মায়ের খিদমত না করলে কিংবা মায়ের প্রতি কোনোরূপ খারাপ আচরণ করলে, মাকে কষ্ট ও দু:খ দিলে সন্তান যত ইবাদত-বন্দেগি আর নেকের কাজই করুক না কেন, তার পক্ষে জান্নাত লাভ করা কখনোই সম্ভব হতে পারে না।
পরিশেষে বলা যায়, মায়ের সন্তুষ্টি ও তার মমতাপূর্ণ অন্তরের দোয়া দীন ও দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য। পক্ষান্তরে দীন ও দুনিয়ার সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ভাগ্য হলো সন্তানের প্রতি মায়ের দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয়ের বদদোয়া।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন