GS Islam
ভাই এর পোষ্ট থেকে কপি
ঘটনাটা কয়েকদিন আগের...!
আমার এক চাচা এবং আমার মাঝে
ফোনে কথা হচ্ছে মাঝহাব বিষয়ে...।।
উনি হানাফি মাজহাবের অনুসারী।
উল্লেখ্য যে উনি মাদ্রাসার লাইনে
উচ্চ শিক্ষিত একজন ব্যক্তি।
মাজহাব কেন মানতে হবে সে
উদ্দেশ্যে উনি আমাকে রেফারেন্স
হিসেবে সূরা নিসার ৫৯ নং হাদিসের
উদ্ধৃতি দিলেন।
আয়াতটি পড়ার পরে
উনার কাছে আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল...
প্রশ্ন(১) চাচা, আয়াতটি তো পড়লাম । এখন আমাকে
বলেন যে উক্ত আয়াত দিয়ে চার মাজহাবের
এক মাজহাব মানা ফরজ বুঝাচ্ছে
নাকি ওয়াজিব নাকি,
সুন্নত, নফল , মুস্তাহাব, মাকরুহ, কোনটি
বুঝাচ্ছে ?
...
উনি উত্তর দিয়েছেন ঠিক এভাবে...
=> আমি যতদুর লেখাপড়া শিখেছি
তাতে আমি জেনেছি ...
কুর-আনে সবকিছুর সমাধান
দেয়া থাকলেও সেগুলো সংক্ষিপ্তভাবে
বলা হয়েছে যেমন ... কুর-আনে সালাত
আদায় করার কথা বলা হয়েছে কিন্তু কিভাবে
আদায় করতে হবে তা বলা নাই। এজন্য বিস্তারিত
জানতে হলে আমাদেরকে হাদীস দেখতে হবে।
রাসুলের কথা বা কাজ এসব কিছুই হাদীস। কিন্তু
রাসুলের তেইশ বছর নবুয়তের জিন্দেগিতে যত হাদীস সব কিছুই
তো আর লিখে রাখা সম্ভব হয় নাই। বা পুরা তেইশ বছর
জুড়ে মাত্র এই কয়েক হাজার হাদীস ছিল ?? নিশ্চই
অনেক হাদীস বাদ পড়ে গেছে।
তাহলে দেখা গেল হাদীস দিয়েও তুমি
সবকিছু সমাধান করতে পারবে না।
যার কারণে বলা হচ্ছে (সূরা নিসা ৫৯)
উলিল আমরি মিনকুম
অর্থাৎ ফকিহগনের আদেশ মানতে হবে।
...
উনার বলা শেষ হলে আমি বললাম
ঠিক আছে এবার আমি কিছুক্ষণ বলি..
.
=> আমি উনাকে প্রথমে বললাম উক্ত
আয়াতের শেষের অংশটুকুতে তো একথা বলা
হচ্ছে যে, "যদি মতবিরোধ হয় তাহলে (ফারদ্দুহু ইলাল্লহি ওয়া রাসুলিহি)
আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের দিকে ফিরে যাও।"
তখন উনি জবাব দিলেন ...
"তার মানে আদেশদানকারীর কথা যদি
মত বিরোধপূর্ণ হয় তাহলে আবার
সেই কুর-আন হাদীসের দিকে ফিরে যেতে
হবে..!
আমি বললাম...
"তারমানে আবার গোড়ায় চলে যাও
।"
......
আমি তখন আনন্দিত হয়ে আরো
কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলাম...
প্রশ্ন(২) মনে করুন আমি শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী।
আর আমি যাকে বিয়ে করব সে হানফী মাজহাবী।
এখন প্রশ্ন হলো আমি কি তাকে বিয়ে করতে পারবো?
=> ( আমি প্রশ্নটি করার পর তিনি কিছুক্ষণ চুপ হয়ে গেলেন)
পরে উত্তরে তিনি বললেন...... '' তাকে বিয়ে করতে পারবা কিনা এটা
আমি সঠিক বলতে পারলাম না... তবে আমি যতদুর লেখাপড়া শিখেছি
তাতে মনে হচ্ছে বিয়ে করা যাবে কোনো সমস্যা নেই। কারণ শাফেয়ী
মাজহাবের অনুসারীরাও জান্নাতে যাবে হানাফীরাও জান্নাতে যাবে।
তবে তুমি যে মাজহাব মানবা তোমাকে সে মাজহাব পুরোপুরি ভাবে
মানতে হবে তুমি যদি হানাফী মানো তাহলে তোমাকে পুরোপুরীভাবে
হানাফী মানতে হবে আর যদি শাফেয়ী মানো তাহলে পুরোপুরিভাবে
শাফেয়ী মানতে হবে। অর্ধেক হানাফী আর অর্ধেক শাফেয়ী মানা
যাবে না।
............
প্রশ্ন(৩) আচ্ছা ঠিক আছে মানলাম যে আমার বউ
পুরোপুরিভাবে হানাফি মানবে আর আমি পুরোপুরিভাবে
শাফেয়ি মাজহাব মানবো। এখন ধরেন... আমরা দুজন নামাজ
পড়বো বলে ওজু করে আসলাম। কোনো কারণে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে
আমার বউয়ের শরীরে কোথাও আমার একটু হাত লেগে গেল বা স্পর্শ হলো।
এখন আমার কি ওজু থাকবে নাকি ভেঙে যাবে ?
=> উত্তরে তিনি বললেন, গায়ে টাচ করলে ওজু ভাঙবে বলে হানাফী মাজহাবে
কোথাও উল্লেখ নাই। এটা ওজু ভঙ্গের কারণের মধ্যে পড়ে না।
আমি উনাকে বললাম যে হ্যা... হানাফী মাঝহাবে এমতাবস্থায় ওজু
ভাঙবে না বলা হলেও শাফেয়ী মাঝহাবে কিন্ত এটা বলা হচ্ছে যে
ওযু ভেঙে যাবে। এখন..
.
প্রশ্ন (৪) আমি আমার স্ত্রীকে বলতেছি যে আমাদের ওজু
ভেঙে গেছে আর আমার স্ত্রী বলতেছে না ওজু ভাঙ্গে নাই।
তাহলে আমাকে বলেন সমাধান টা কি হবে ??
=> উত্তরে তিনি বললেন, " তুমি যেহেতু শাফেয়ী মাজহাব মানো
তাহলে তোমার মাজহাবের নিয়মানুসারে তোমার ওজু ভেঙে গেছে। আর তার মাজহাবের নিয়মানুসারে তার ওজু ভাঙে নাই।
=> আমি তখন বললাম এইটা কেমনে হলো ??
.
((বিঃদ্রঃ হানাফীদের চামড়ায় কি তেলের পরিমান বেশি যে তাদের ওযু ভাঙবে না পক্ষান্তরে শাফেয়ীদের চামড়া কি এতই খসখসে যে শরীরে সামান্য হাতের টাচ লাগাতেই ওযু ভেঙে গেল ??))
.
তখন আমি উত্তর দিলাম....
আবু দাউদ এর এক নম্বর খন্ড
অধ্যায় সত্তর হাদীস নম্বর ১৭৯,
অনুসারে এমতাবস্থায় ওযু
ভাঙ্গবে না..!
এছাড়া সহিহ বুখারী এর এক নম্বর খন্ড
হাদীস নম্বর ৫১৯ অনুসারে একই কথা
বলা হচ্ছে যে এমতাবস্থায় ওযু
ভাঙ্গবে না..!
.
প্রশ্ন (৫) এখন আমি কোনটা মানবো ?? হাদীস মানবো নাকি শাফেয়ী মাজহাবের ঐটাই মানবো ??
.
=> উনি একটু দায় সারার মতো কোনো
রকমে উত্তরে বললেন, "" তুমি যদি শাফেয়ী
মানো তাহলে তো সমস্যা নেই কেননা তিনি কিন্তু কুর-আন হাদীসের উপর ভিত্তি করেই সমাধান দিয়েছেন....!!""
.
তখন আমি বললাম
প্রশ্ন (৬) তাহলে
সুরা নিসার ৫৯ নং আয়াতের শেষের
সেই ফারদ্দুহু ইলাল্লাহি ওয়া রাসুলিহি (মতবিরোধ হলে আল্লাহ এবং তার রাসুলের দিকে ফিরে যাও)... একথার কি হবে ??
তাছাড়া প্রত্যেক ইমামই বলেছেন যে.....
""যখন সহিহ হাদীস পাবে সেটাই গ্রহণ করবে "" অর্থাৎ
তিনি নিজেই বলেছেন সহিহ হাদীস গ্রহন করার কথা।
তাহলে আমি কি করবো ??
হাদীস গ্রহণ করবো ? নাকি ওজু ভেঙে গেছে ধরে নিব ?
.
তখন তিনি জবাবে বললেন,... হাদীসটা
যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে হাদীস মানলে
তো সমস্যা নাই।
.
=> এরপর আরো অনেক কথা হয়েছিল
যা লিখতে গেলে ছোট খাটো একটা
বই হয়ে যাবে....
.
যা হোক...
কিছু প্রশ্ন বলে রাখি পারলে
মাজহাবী ভাইয়েরা উত্তর দেয়ার চেষ্টা
করবেন...
.
প্রশ্ন (৭) বিয়ের বছর দুই পর
আল্লাহ আমাদের একটা
ছেলে সন্তান দিলেন।
বাপ বলতেছে ওজু ভাঙবে আর
মা বলতেছে ওযু ভাঙবে না.... কার কথা মানবে সে ??
কিংবা মা বলতেছে
তোমাকে নাভীর নিচে হাত বাধতে হবে
আর বাপ বলতেছে নাভীর উপরে বাধতে
হবে। কার কথা মানবে সে ??
.
প্রশ্ন (৮) যেহেতু আমার স্ত্রী হানাফী
আর আমি শাফেয়ী তাহলে আমার
সন্তানের পরিচয় কি হবে ?? দুইটা কম্বাইন করে অর্থাৎ হানাফীর "হা" এবং শাফেয়ীর "শা" মিলে কি হাশায়ী হবে ??
নাকি চার মাজহাবের যেকোনো এক মাজহাব মানবে??
.
যদি বলেন সে তার পছন্দসই
যেকোনো একটা মাজহাব মানবে...
তাহলে দেখা গেলো সে বড় হয়ে হয়তো
হাম্বলি মাজহাব মানা শুরু করে দিল।
এক্ষেত্রে কিন্তু
কোনো আপত্তি দেখাতে পারবেন না।
.
প্রশ্ন: (৯) কোনো একটা কারণে রাগের মাথায় আমি
আমার বউকে এক সঙ্গে তিন তালাক
দিয়ে ফেললাম...
পরে আমি অনুতপ্ত হলাম যে কাজটা
করা উচিৎ হয়নি।
আমার বউয়ের কাছে শুনলাম সেও আমার কাছে থাকতে চায়।
কিন্ত সে হানাফী
মাজহাবের ফতুয়াটা দাড় করিয়ে বলল
যে, আমিতো থাকতে চাই কিন্ত আমার
মাজহাব তো বলছে পারবো না। একসঙ্গে
তিন তালাক দেয়াকে তিন তালাক হিসেবেই ধরার কথা বলা হয়েছে।
আমি বললাম ওটাকে এক তালাক
ধরতে হবে।
.
ছেলেকে বললাম তোমার মাকে ম্যানেজ
করো....
.
ছেলে কুর-আন হাদীসের রেফারেন্স
দিয়ে বলল যে আব্বা আমার মাকে
ফিরিয়ে নিতে পারবে....!
# দলিল: সুরা বাকারা ২২৯-২৩১
.
এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে
সেটা এক তালাক হিসেবে?
ধরা হবে।
# দলিলঃ আবু দাউদ হা/২১৯৬, সূরা ত্বলাক আয়াত ০১
.
এখন
তাহলে সমাধানটা কি হবে ??
.
প্রশ্ন(১০) এটার কি কোনো
সমাধান আছে নাকি নতুন কোনো
ফতুয়া তৈরি হবে যে "এক মাজহাবের ছেলের
সাথে আরেক মাজহাবের মেয়ের
বিবাহ হারাম .!!
.
প্রশ্ন (১১) ""চার মাজহাবের এক মাজহাব
পুরোপুরিভাবে মানতে হবে বা চার মাজহাবের এক মাজহাব মানা ফরজ""
এই কথাটা কুর-আনের কোন সুরায় বর্ণিত
হয়েছে ?
বা কোন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে ?
অথবা চার ইমামের কোন ইমাম বলে গেছেন ??
.
প্রশ্ন(১২).......আরো প্রশ্ন লাগবে.........???
.
বাজে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।
গঠনমূলক এবং দলিলভিত্তিক
আলোচনা/সমালোচনা করতে পারেন।
আপনাকে স্বাগতম।
লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার/কপি
যেভাবে পারেন অন্যকে পড়ার সুজোগ
করে দিন।
আল্লাহ আমাদেরকে মাজহাবের গোঁড়ামি
থেকে দূরে রেখে সঠিক জিনিষ জেনে বুঝে
আমল করার তাওফিক দান করুন।
(আমিন)
শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
চার মাযহাব
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন