শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬
আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১১নামার খন্ড, মনছুর হাল্লাজের জিবনী
(আল-বিদায়া ওয়ান
নিহায়া ১১নামার খন্ড,
মনছুর হাল্লাজের
জিবনী।)
ﻭﻧﺤﻦ ﻧﻌﻮﺫ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﺃﻥ ﻧﻘﻮﻝ
ﻋﻠﻴﻪ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻗﺎﻟﻪ ﺃﻭ
ﻧﺘﺤﻤﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﻓﻲ ﺃﻗﻮﺍﻟﻪ
ﻭﺃﻓﻌﺎﻟﻪ
আমরা আল্লাহ
তায়ালার নিকট আশ্রয়
প্রার্থনা করছি’
কারো বিরুদ্ধে এমন
মতবাদ বা এমন কাজের
কথা বলতে যা তার
মধ্যে নাই
বা যা সে করে নাই।
নাম; হুসাইন
ইবনে মানছুর
ইবনে মাহমী আল-
হাল্লাজ আবু মুগীছ।
এবং তাকে আব্দুল্লাহ ও
বলা হত। তার দাদা ছিল
অগ্নি পূজক। তার
(দাদার) নাম ছিল
মাহমী। সে ছিল
পারস্যের বাইযা শহরের
অধিবাসী।
মানছুর হাল্লাজ
প্রথমে বাগদাদে আসে।
আর মক্কায় বার বার
আসা যাওয়া করত।
প্রচন্ড ঠান্ডা ও গরমের
সময়েও
সে মসজিদে হারামে খোলা আকাশের
নীচে বসে থকত।
সারা বৎসর
ব্যাপী সে নাস্তার সময়
কিছু রুটি খেত ও
পানি পান করত।
সে জাবালে আবি-
ক্বুবাইসে প্রচন্ড গরম
পাথরের উপর
বসে থাকত। সে সূফী স
¤্রাটদের সংশ্রব গ্রহন
করেছিল। যেমন;
জুনাইদ ইবনে মুহাম্মদ,
আমর ইবনে উসমান
মাক্কী, আবুল হুসাইন
নুরী।
খতীব বাগদাদী বলেন,
সুফিরা মানছুর
হাল্লাজের
ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন
মত পোষণ করেছে।
সুফিদের অধিকাংশই
হাল্লাজকে তাদের
দলভুক্ত মনে করত না।
এবং তারা অসম্মত ছিল
হাল্লাজকে তাদের
মধ্যে গণণা করতে। কিছু
সূফী হাল্লজকে তাদের
অর্ন্তভূক্ত মনে করত।
যেমন; আবুল আব্বাস
ইবনে আতা বাগদাদী,
মুহাম্মদ ইবনে খাফিফ
সিরাজী, ইব্রাহিম
ইবনে মুহাম্মদ
নাছরাবাজী নাইছাবোরী।
তারা মানছুর হাল্লাজের
অবস্থা গুলোকে ছহীহ
বলে প্রচার করত ও তার
কথাগুলো লিখে রাখত।
এমন কি ইবনে খাফিফ
বলত; হাল্লাজ
হচ্ছে আলেমে রব্বানী।
আবু আব্দুর রহমান
আস-সালামী বলেন;
(তার নাম
হচ্ছে মুহাম্মদ
ইবনে হুসাইন)
আমি ইব্রাহিম
ইবনে মুহাম্মদ
নাছরাবাজীকে বলতে শুনেছি;
কেউ হাল্লাজকে কোন
কারণে তিরষ্কার
করছিল,তখন
সে বললঃ যাকে তোমরা নিন্দা করছ
প্রকৃতপক্ষে নবী ও
সিদ্দীক্বীনদের
পরে যদি কোন মুয়াহ্হীদ
থেকে থাকে তাহলে সে হচ্ছে হাল্লাজ।
আবু আব্দুর রহমান
বলেন আমি মনছুর
ইবনে আব্দুল্লাহকে বলতে শুনেছি,
আমি শিবলীকে বলতে শুনেছি;
সে বলত
আমি এবং হাল্লাজ
একই। তবে হাল্লাজ
হচ্ছে প্রকাশ্যে আমি হচ্ছি গোপনে।
এবং তার থেকে ভিন্ন
আরেকটি বর্ণনা আছে তা হল;
সে যখন
হাল্লাজকে শুলিবিদ্ধ
অবস্থায় দেখল তখন
সে বলল,
আমি তোমাকে পৃথিবী থেকে নিষেধ
করি নাই।
খতিব বাগদাদী বলেন;
যারা হাল্লাজকে সূফীদের
অর্ন্তভূক্ত মনে করত
না তারা হাল্লাজকে সম্পৃক্ত
করত ধোকাবাজদের
সাথে।
এবং তারা মনে করত
সে হচ্ছে একজন
যিন্দিক। আর হাল্লাজ
ছিল মিষ্ট
ভাষী এবং সূফী তরীকার
উপর তার অনেক
কবিতা রয়েছে।
খতিব বাগদাদী বলেন,
হাল্লাজের কতল
পর্যন্ত তার বিষয়
নিয়ে মানুষের
মধ্যে মতবিরোধ ছিল।
অথচ ফোকাহায়ে কেরাম
এর ইজমার উপর
ভিত্তি করেই
তাকে কতল
করা হয়েছে। সে ছিল
একজন কাফির,
যিন্দিক ও ধোঁকাবাজ।
আর সূফীদের অধিকাংশ
এই মতই পোষণ করতেন।
মানছুর হাল্লাজের
বাহ্যিকতা ছুফিদের
ধোকায় ফেলেছে।
তারা তার অদৃশ্যের
ব্যাপারে জানত না।
কারণ; প্রথমে সে খুব
ইবাদত করত;
এবং সূলূকের
লাইনে চলত। কিন্তু
সে ছিল মূর্খ। তার
কাজের কোন
ভিত্তি ছিল না। তার
বাহ্যিক অবস্থা ছিল
তাকওয়ার উপর।
এজন্যই সে ভালর
চেয়ে খারাপটাই
বেশী করত। সুফিয়ান
ইবনে উয়াইনা বলেন-
ﻣﻦ ﻓﺴﺪ ﻣﻦ ﻋﻠﻤﺎﺀﻧﺎ :ﻛﺎﻥ
ﻓﻴﻪ ﺷﺒﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻴﻬﻮﺩ: ﻣﻦ ﻓﺴﺪ
ﻣﻦ ﻋﺒﺎﺩﻧﺎ: ﻛﺎﻥ ﻓﻴﻪ ﺷﺒﻪ ﻣﻦ
ﺍﻟﻨﺼﺎﺭﻱ .
অথ্যাৎ, “আমাদের
আলেমদের মধ্য
থেকে যে ভ্রান্ত
হয়ে যায় তার
মাঝে ইয়াহুদীদের
সাদৃশ্য পাওয়া যায়। আর
আবেদগণের মধ্য
থেকে যে ভ্রান্ত
হয়ে যায় তার
মাঝে খৃষ্টানদের সাদৃশ্য
পাওয়া যায়।”
আর এজন্যই
হাল্লাজের
মধ্যে হুলোলের (বান্দার
মাঝে আল্লাহ্
তা’আলার মিশ্রণ হওয়া)
আক্বিদাহ প্রবেশ
করেছিল।
মানছুর হাল্লাজ
বিভিন্ন
শহরে আসা যাওয়া করত
এবং সে মানুষের
সামনে নিজেকে একজন
দায়ী হিসাবে প্রকাশ
করত। এবং ছহীহ
ভাবে প্রমাণিত
আছে সে হিন্দুস্থানে এসেছিল
এবং যাদু শিখিয়েছিল।
এবং সে বলত আমি এর
(যাদু)
মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর
দিকে আহ্বান করি।
হিন্দুস্থানের
লোকেরা তাকে মুগীছ
(সাহায্যকারী)
বলে ডাকত।
ছুরকিছানের
লোকেরা তাকে মুক্বীদ
(খাদ্য দানকারী)
বলে ডাকত। খুরাসান
বাসীরা তাকে মুমাইয়িয
(পার্থক্যকারী)
বলে ডাকত।
পারস্যবাসীরা তাকে আবু
আব্দিল্লাহ যাহেদ
বলে ডাকত। খুজেসতান
বাসীরা তাকে আবু
আব্দিল্লাহ যাহেদ
হাল্লাজ আল-আসরার
বলে ডাকত। আর বাগদাদ
বাসীরা তাকে মুসতালাম
বলে ডাকত। আর
বসরাবাসীরা তাকে মুহাইয়ির
বলে ডাকত।
মানছুরকে হাল্লাজ নাম
করণের কারণ হচ্ছে,
সে মানুষের গোপন বিষয়
প্রকাশ করত। কেউ
বলেন হাল্লাজ একবার
কোন এক
ব্যক্তিকে বলল,
তুমি আমার অমুক
কাজগুলো করে দাও।
অতপর ঐ ব্যক্তি বলল
আমি তুলার বীজ বাছাই
করতে ব্যাস্ত আছি।
তখন মানছুর হাল্লাজ ঐ
ব্যক্তিকে বলল, যাও
আমি তোমার কাজ
করে দিচ্ছি। ঐ
লোকটি দ্রুত কাজ
সমাপ্ত করে এসে দেখল
মনছুর হাল্লাজ
তুলা থেকে বীজ
আলাদা করে বাছাই
করে রেখেছে। বলা হয়
হাল্লাজ সুরমার
কাঠি দিয়ে ইশারা করলে তুলার
বীজ আলাদা হয়ে যেত।
(ইবনে কাছীর রহঃ)
বলেন শয়তান তার
সাথীদেরকে এ জাতীয়
কাজে সাহায্য
করে এবং তাদের
মাধ্যমে কাজ নেয়। আর
সে হুলোলের
বিশ্বাসী ছিল যা তার
কবিতা থেকে বুঝে আসে।
ﺟﺒﻠﺖ ﺭﻭﺣﻚ ﻓﻲ ﺭﻭﺣﻲ ﻛﻤﺎ ...
ﻳﺠﺒﻞ ﺍﻟﻌﻨﺒﺮ ﺑﺎﻟﻤﺴﻚ ﺍﻟﻔﻨﻖ ...
ﻓﺈﺫﺍ ﻣﺴﻚ ﺷﻲﺀ ﻣﺴﻨﻲ ...
ﻭﺇﺫﺍ ﺃﻧﺖ ﺃﻧﺎ ﻻ ﻧﻔﺘﺮﻕ
১. তোমার রুহ আমার
রুহে এমন ভাবে প্রবেশ
করেছে,
যেমনিভাবে মৃগনাভীর
সাথে কোমল পানির
মিশ্রণ হয়।
সুতরাং যখন কোন
জিনিস তোমাকে স্পর্শ
করে তা যেন আমাকেই
স্পর্শ করে। অতএব
তুমিই আমি, আমাদের
মাঝে কোন পৃথকতা নেই।
ﻭﻗﻮﻟﻪ ... ﻣﺰﺟﺖ ﺭﻭﺣﻚ ﻓﻲ
ﺭﻭﺣﻲ ﻛﻤﺎ ... ﺗﻤﺰﺝ ﺍﻟﺨﻤﺮﺓ
ﺑﺎﻟﻤﺎﺀ ﺍﻟﺰﻻﻝ ... ﻓﺈﺫﺍ ﻣﺴﻚ
ﺷﻲﺀ ﻣﺴﻨﻲ ... ﻓﺈﺫﺍ ﺃﻧﺖ ﺃﻧﺎ
ﻓﻲ ﻛﻞ ﺣﺎﻝ
২. তোমার রুহ আমার
রুহের সাথে এমন
ভাবে মিশ্রণ
ঘটেছে যেভাবে পানির
মিশ্রণ ঘটে রঙ্গের
সাথে। সুতরাং যখন কোন
জিনিস তোমাকে স্পর্শ
করে তা যেন আমাকেই
স্পর্শ করে। অতএব
সর্ব অবস্থায় তুমিই
আমি, এবং আমিই তুমি ।
ﻭﻗﻮﻟﻪ ﺃﻳﻀﺎ ... ﻗﺪ ﺗﺤﻘﻘﺘﻚ
ﻓﻲ ﺳﺮ ... ﻱ ﻓﺨﺎﻃﺒﻚ
ﻟﺴﺎﻧﻲ ... ﻓﺎﺟﺘﻤﻌﻨﺎ ﻟﻤﻌﺎﻥ ...
ﻭﺍﻓﺘﺮﻗﻨﺎ ﻟﻤﻌﺎﻥ ... ﺇﻥ ﻳﻜﻦ
ﻏﻴﺒﺘﻚ ﺍﻟﺘﻌﻈﻲ ... ﻡ ﻋﻦ ﻟﺤﻆ
ﺍﻟﻌﻴﺎﻥ ... ﻓﻠﻘﺪ ﺻﻴﺮﻙ ﺍﻟﻮﺝ ...
ﺩ ﻣﻦ ﺍﻷﺣﺸﺎﺀ ﺩﺍﻥ৩. নিঃসন্দেহে আমিই
তুমি , সুতরাং তোমার
পবিত্রতা ঘোষণা করা মানেই
হচ্ছে আমার
পবিত্রতা ঘোষণা করা।
এবং তোমার একাত্ব
মানেই হচ্ছে আমার
একাত্ব, এবং তোমার
অবাধ্যতা মানেই
হচ্ছে আমার অবাধ্যতা।
ﻭﻗﺪ ﺃﻧﺸﺪ ﻻﺑﻦ ﻋﻄﺎﺀ ﻗﻮﻝ
ﺍﻟﺤﻼﺝ ... ﺃﺭﻳﺪﻙ ﻻ ﺃﺭﻳﺪﻙ
ﻟﻠﺜﻮﺍﺏ ... ﻭﻟﻜﻨﻲ ﺃﺭﻳﺪﻙ
ﻟﻠﻌﻘﺎﺏ ... ﻭﻛﻞ ﻣﺂﺭﺑﻲ ﻗﺪ ﻧﻠﺖ
ﻣﻨﻬﺎ ... ﺳﻮﻯ ﻣﻠﺬﻭﺫ ﻭﺟﺪﻱ
ﺑﺎﻟﻌﺬﺍﺏ ...
ﻓﻘﺎﻝ ﺑﺎﻧﻦ ﻋﻄﺎﺀ ﻗﺎﻝ ﻫﺬﺍ ﻣﺎ
ﺗﺰﺍﻳﺪ ﺑﻪ ﻋﺬﺍﺏ ﺍﻟﺸﻐﻒ ﻭﻫﻴﺎﻡ
ﺍﻟﻜﻠﻒ ﻭﺍﺣﺘﺮﺍﻕ ﺍﻷﺳﻒ ﻓﺈﺫﺍ
ﺻﻔﺎ ﻭﻭﻓﺎ ﻋﻼ ﺇﻟﻰ ﻣﺸﺮﺏ
ﻋﺬﺏ ﻭﻫﺎﻃﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﺤﻖ ﺩﺍﺋﻢ
ﺳﻜﺐ ﻭﻗﺪ ﺃﻧﺸﺪ ﻷﺑﻲ ﻋﺒﺪﺍﻟﻠﻪ
ﺑﻦ ﺧﻔﻴﻒ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﺤﻼﺝ ...
ﺳﺒﺤﺎﻥ ﻣﻦ ﺃﻇﻬﺮ ﻧﺎﺳﻮﺗﻪ ...
ﺳﺮﺳﻨﺎ ﻻﻫﻮﺗﻪ ﺍﻟﺜﺎﻗﺐ ... ﺛﻢ
ﺑﺪﺍ ﻓﻲ ﺧﻠﻘﻪ ﻇﺎﻫﺮﺍ ... ﻓﻲ
ﺻﻮﺭﺓ ﺍﻵﻛﻞ ﻭﺍﻟﺸﺎﺭﺏ ... ﺣﺘﻰ
ﻗﺎﻝ ﻋﺎﻳﻨﻪ ﺧﻠﻘﻪ ... ﻛﻠﺤﻈﺔ
ﺍﻟﺤﺎﺟﺐ ﺑﺎﻟﺤﺎﺟﺐ ...
ﻓﻘﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺧﻔﻴﻒ ﻋﻼ ﻣﻦ
ﻳﻘﻮﻝ ﻫﺬﺍ ﻟﻌﻨﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻘﻴﻞ ﻟﻪ
ﺇﻥ ﻫﺬﺍ ﻣﻦ ﺷﻌﺮ ﺍﻟﺤﻼﺝ ﻓﻘﺎﻝ
ﻗﺪ ﻳﻜﻮﻥ ﻣﻘﻮﻻ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻳﻨﺴﺐ
ﺇﻟﻴﻪ ﺃﻳﻀﺎ ... ﺃﻭﺷﻜﺖ ﺗﺴﺄﻝ
ﻋﻨﻲ ﻛﻴﻒ ﻛﻨﺖ ... ﻭﻣﺎ ﻻﻗﻴﺖ
ﺑﻌﺪﻙ ﻣﻦ ﻫﻢ ﻭﺣﺰﻥ ... ﻻ ﻛﻨﺖ
ﻻ ﻛﻨﺖ ﺇﻥ ﻛﻨﺖ ﺃﺩﺭﻱ ﻛﻴﻒ
ﻛﻨﺖ ... ﻭﻻ ﻻ ﻛﻨﺖ ﺃﺩﺭﻱ ﻛﻴﻒ
ﻟﻢ ﺃﻛﻦ ...
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺧﻠﻜﺎﻥ ﻭﻳﺮﻭﻯ
ﻟﺴﻤﻨﻮﻥ ﻻ ﻟﻠﺤﻼﺝ ﻭﻣﻦ ﺷﻌﺮﻩ
ﺃﻳﻀﺎ ﻗﻮﻟﻪ ... ﻣﺘﻰ ﺳﻬﺮﺕ
ﻋﻴﻨﻲ ﻟﻐﻴﺮﻙ ﺃﻭ ﺑﻜﺖ ... ﻓﻼ
ﺃﻋﻄﻴﺖ ﻣﺎ ﺃﻣﻠﺖ ﻭﺗﻤﻨﺖ ...
ﻭﺇﻥ ﺃﺿﻤﺮﺕ ﻧﻔﺴﻲ ﺳﻮﺍﻙ
ﻓﻼ ﺯﻛﺖ ... ﺭﻳﺎﺽ ﺍﻟﻤﻨﻰ ﻣﻦ
ﻭﺟﻨﺘﻴﻚ ﻭﺟﻨﺖ ... ﻭﻣﻦ ﺷﻌﺮﻩ
ﺃﻳﻀﺎ ... ﺩﻧﻴﺎ ﺗﻐﺎﻟﻄﻨﻲ ﻛﺄﻥ ...
ﻱ ﻟﺴﺖ ﺃﻋﺮﻑ ﺣﺎﻟﻬﺎ ... ﺣﻈﺮ
ﺍﻟﻤﻠﻴﻚ ﺣﺮﺍﻣﻬﺎ ... ﻭﺃﻧﺎ
ﺃﺣﺘﻤﻴﺖ ﺣﻼﻟﻬﺎ ... ﻓﻮﺟﺪﺗﻬﺎ
ﻣﺤﺘﺎﺟﺔ ... ﻓﻮﻫﺒﺖ ﻟﺬﺗﻬﺎ ﻟﻬﺎ ...
ﻭﻗﺪ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﺤﻼﺝ ﻳﺘﻠﻮﻥ ﻓﻲ
ﻣﻼﺑﺴﻪ ﻓﺘﺎﺭﺓ ﻳﻠﺒﺲ ﻟﺒﺎﺱ
ﺍﻟﺼﻮﻓﻴﺔ ﻭﺗﺎﺭﺓ ﻳﺘﺠﺮﺩ ﻓﻲ
ﻣﻼﺑﺲ ﺯﺭﻳﺔ ﻭﺗﺎﺭﺓ ﻳﻠﺒﺲ
ﻟﺒﺎﺱ ﺍﻷﺟﻨﺎﺩ ﻭﻳﻌﺎﺷﺮ ﺃﺑﻨﺎﺀ
ﺍﻷﻏﻨﻴﺎﺀ ﻭﺍﻟﻤﻠﻮﻙ ﻭﺍﻷﺟﻨﺎﺩ
ﻭﻗﺪ ﺭﺁﻩ ﺑﻌﺾ ﺃﺻﺤﺎﺑﻪ ﻓﻲ
ﺛﻴﺎﺏ ﺭﺛﺔ ﻭﺑﻴﺪﻩ ﺭﻛﻮﺓ
ﻭﻋﻜﺎﺯﺓ ﻭﻫﻮ ﺳﺎﺋﺢ ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ
ﻣﺎ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺤﺎﻟﺔ ﻳﺎ ﺣﻼﺝ ﻓﺄﻧﺸﺄ
ﻳﻘﻮﻝ ... ﻟﺌﻢ ﺃﻣﺴﻴﺖ ﻓﻲ
ﺛﻮﺑﻲ ﻋﺪﻳﻢ ... ﻟﻘﺪ ﺑﻠﻴﺎ ﻋﻠﻰ
ﺣﺮ ﻛﺮﻳﻢ ... ﻓﻼ ﻳﻐﺮﺭﻙ ﺃﻥ
ﺃﺑﺼﺮﺕ ﺣﺎﻻ ... ﻣﻐﻴﺮﺓ ﻋﻦ
ﺍﻟﺤﺎﻝ ﺍﻟﻘﺪﻳﻢ ... ﻓﻠﻲ ﻧﻔﺲ
ﺳﺘﺘﻠﻒ ﺃﻭ ﺳﺘﺮﻗﻰ ... ﻟﻌﻤﺮﻙ
ﺑﻲ ﺇﻟﻰ ﺃﻣﺮ ﺟﺴﻴﻢ ... ﻭﻣﻦ
ﻣﺴﺘﺠﺎﺩ ﻛﻼﻣﻪ ﻭﻗﺪ ﺳﺄﻟﻪ
ﺭﺟﻞ ﺃﻥ ﻳﻮﺻﻴﻪ ﺑﺸﻲﺀ ﻳﻨﻔﻌﻪ
ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻪ ﻓﻘﺎﻝ ﻋﻠﻴﻚ ﻧﻔﺴﻚ ﺇﻥ
ﻟﻢ ﺗﺸﻐﻠﻬﺎ ﺑﺎﻟﺤﻠﻖ ﻭﺇﻵ
ﺷﻐﻠﺘﻚ ﻋﻦ ﺍﻟﺤﻖ ﻭﻗﺎﻝ ﻟﻪ
ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻋﻈﻨﻲ ﻓﻘﺎﻝ ﻛﻦ ﻣﻊ
ﺍﻟﺤﻖ ﺑﺤﻜﻢ ﻣﺎ ﺃﻭﺟﺐ
(ইমাম ইবনে কাছীর
(রহঃ) বলেন), হাল্লাজ
শেষে স্থির
থাকতে পারেনি ।
এবং সে ভুলে পতিত
হয়েছে এবং সে বক্রপথ
অবলম্বন
করেছে,গোমরাহী ও
বিদআতে লিপ্ত হয়েছে।
আমরা আল্লাহর
কাছে এর থেকে পানাহ
চাই।
আবু আবদুর রহমান
সালামী আমর
ইবনে উসমান
মাক্কী থেকে বর্নণা করেন,
তিনি বলেন,
আমি হাল্লাজের
সাথে মক্কার কিছু
জায়গায় হাটছিলাম ও
কোরআন তিলাওয়াত
করছিলাম হাল্লাজ
আমার তিলাওয়াত
শুনে বলল কোরআনের
মত আমিও বলতে পারি।
অতপর আমি তার
থেকে পৃথক হয়ে গেলাম।
খতীব বাগদাদী বলেন
মাসউদ ইবনে নাসের
বর্র্নণা করেন,
ইবনে বাকু
সিরাজী থেকে বর্ননা করেন,
আমি আবু যুর’আ
তাবারী থেকে শুনেছি তিনি বলেন,
মানুষ এর মধ্যে কেউ
হাল্লাজকে গ্রহন
করেছে আবার কেউ
প্রত্যাখান করেছে।
মুহাম্মাদ
ইবনে ইয়াহ্ইয়া রাজী বলেন,
আমি শুনেছি আমর
ইবনে ওসমান
হাল্লাজকে লানাত
করেছে এবং সে বলত
আমার
শক্তি থাকলে হাল্লাজ
কে আমি নিজ
হাতে হত্যা করতাম।
আমি তাকে বললাম
হাল্লাজকে কিসের
উপর পেয়েছ? সে বলল
আমি কোআনের আয়াত
তিলাওয়াত করলাম,
তখন সে বলল,
আমি ক্ষমতা রাখি এমন
কোরআন
লিখতে এবং বলতে। আবু
যুর’আ তাবারী বলেন
আমি আবু ইয়াকুব
আকতাহ্
কে বলতে শুনেছি,
সে বলল আমি আমার
মেয়েকে বিবাহ দিলাম,
যখন সুলুকের
লাইনে হাল্লাজের
সুন্দর পদ্ধতি ও প্রচন্ড
চেষ্টা দেখলাম। তার
কিছুদিন পরে আমার
কাছে বিকশিত হল
যে সে হল একজন
যাদুকর ও ধোঁকাবাজ
ভেল্কীবাজ ও কাফের।
ইমাম ইবনে কাসীর
বলেন, এই বিবাহ
মক্কায় হয়েছিল।
মেয়ের নাম ছিল উম্মুল
হুসাইন বিনতে আবু
ইয়াকুব আক্তা।
মেয়েটির
ঘরে একটি সন্তান
হয়ে ছিল যার নাম
আহমদ ইবনে হুসাইন
ইবনে মানসুর। আহমদ
(হাল্লাজের পুত্র) তার
বাবার জীবনিতে ঐ
কথাগুলোই উল্লেখ
করেছেন যেগুলো খতীব
বাগদাদী বলেছেন।
আবুল কাসেম
কুশায়রী তার রেসালায়
উল্লেখ করেছেন হেফজ
কুলুবুল মাশায়েখ
অধ্যায়ে যে, আমর
ইবনে ওসমান মক্কায়
হাল্লাজের নিকট
গিয়েছিল। তখন
সে একটি পাতায় কিছু
লিখছিল।
তাকে জিজ্ঞেস
করা হল, এটা কি?
সে বলল,
“ইহা কেরআনের
বিপরীত লিখা হচ্ছে।”
কুশায়রী বলেন অতপর
হাল্লাজের জন্য বদ
দু’আ করা হল। এরপর
সে আর সফল
হতে পারেনি। আর
ইয়াকুব
আক্তা হাল্লাজের
সাথে তার মেয়ের
বিবাহের
ব্যপারটি অস্বীকার
করল । আমর
ইবনে ওসমান
চিঠি লিখে বিভিন্ন
প্রান্তে পাঠিয়ে দিল
যাতে মানুষদেরকে হাল্লাজের
ব্যাপারে সতর্ক
করা হয়েছে। অতপর
হাল্লাজ বিভ্রান্ত
অবস্থায়
শহরে ঘুরতে লাগল। আর
লোকদের
সামনে নিজেকে আল্লাহর
দিকে আহবানকারী হিসাবে প্রকাশ
করত। আর
এতে বিভিন্ন ভেল্কির
সাহায্য নিত। এভাবেই
সে চলতে ছিল।
এমনকি আল্লাহ্
তা’আলা তার এই
অনিষ্ঠতা থেকে রক্ষা করল
শরীয়াতের ফায়সালায়
তাকে হত্যা করে।
যে ফায়সালা জিন্দিক
ছাড়া অন্য কারো উপর
হয় না। আর হাল্লাজ
কোরআনের উপর
আক্রমন করেছিল।
আর
সে তা করতে চেয়েছিল
হারাম শরীফে অথচ
আল্লাহ
তা’আলা জিব্রাইলের
মাধ্যমে নাযিল
করেছেন, ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﺮِﺩْ ﻓِﻴﻪِ
ﺑِﺈِﻟْﺤَﺎﺩٍ ﺑِﻈُﻠْﻢٍ ﻧُﺬِﻗْﻪُ ﻣِﻦْ ﻋَﺬَﺍﺏٍ
ﺃَﻟِﻴﻢٍ
এখানে (মসজিদে হারামে)
যে-ই
সততা থেকে দূরে গিয়ে জুলুমের
পথ অবলম্বন
করবে তাকেই
আমি যন্ত্রনাাদায়ক
আযাবের স্বাদ
আস্বাদন করাব। (সূরা:
হজ্ব ২০)
হাল্লাজের এই কাজের
আর কি কাজ এমন
হতে পারে যা সত্য
থেকে দূরে সরায় তার
কাজগুলি মক্কার
কাফের কুরাইশদের
কাজের সাথে সদৃশ্য
রাখে। যেমনটা আল্লাহ
বলেছেন,
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺗُﺘْﻠَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺁﻳَﺎﺗُﻨَﺎ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ
ﻗَﺪْ ﺳَﻤِﻌْﻨَﺎ ﻟَﻮْ ﻧَﺸَﺎﺀُ ﻟَﻘُﻠْﻨَﺎ ﻣِﺜْﻞَ
ﻫَﺬَﺍ ﺇِﻥْ ﻫَﺬَﺍ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﺳَﺎﻃِﻴﺮُ
ﺍﻟْﺄَﻭَّﻟِﻴﻦَ
যখন তাদের
সামনে আয়াত
তিলাওয়াত করা হয়
তখন
তারা বলে আমরা তা শুনলাম,
আমরা যদি চাই
তাহলে এই কোআনের
মত আমরাও কিছু
বলতে পারি। এতো সেই
সব
পুরনো কাহিনী যা আগে থেকে লোকেরা বলে আসছে (সূরা:
আনফাল, ৩১)
(ﺃﺷﻴﺎﺀ ﻣﻦ ﺣﻴﻞ ﺍﻟﺤﻼﺝ)
হাল্লাজের
ভেল্কিবাজী
(হাল্লাজের কিছু
ভেল্কিবাজী): খতীব
বাগদাদী রহ:
বর্ননা করেন, হাল্লাজ
তার সহযোগীদের মধ্য
থেকে বিশেষ
একজনকে নির্দেশ দিল
পাহাড়ি এলাকার
বাহিরে যেতে।। আর
সেখানে গিয়ে প্রথমে বেশী বেশী ইবাদাত
ও দুনিয়া বিমুখতা যেন
প্রকাশ করে। কারন
মানুষ যখন তার ইবাদত
দেখবে তাকে তারা গ্রহন
করে নিবে ও বিশ্বাস
করে নিবে যে এই
লোকটা খুবই ভাল। এই
অবস্থা তৈরী হলে সে যেন
প্রকাশ
করে যে সে অন্ধ
হয়ে গিয়েছে।
লোকেরা তার
চিকিৎসা করতে চেষ্টা করলে যেন
তাদের
বলে হে কল্যানের
জামাত, তোমাদের এই
চেষ্টার কোন
ফায়দা হবেনা। এর
কিছুদিন পর যেন
প্রকাশ
করে যে সে রাসূল (সাঃ)
কে স্বপ্নে দেখেছে।
এবং রাসূল (সাঃ)
তাকে বলেছে কতুবের
সাহায্য
ছাড়া তুমি সুস্থ্য
হবে না। অচিরেই কুতুব
সাহেব তোমার
কাছে আসবে অমুক
মাসের এই দিনে। তার
গুণসমূহ হবে এমন এমন।
হাল্লাজ তাকে বলল ঐ
সময় আমি তোমার
কাছে আসব। অতপর
লোকটি ঐ
শহরে চলে গেল
এবং অনেক ইবাদত
করে নিজেকে প্রকাশ
করল ও কোরআন পাঠ
করত। কিছুদিন
এভাবেই থাকল।
লোকেরা তাকে পছন্দ
করল এবং অনেক
ভালবাসল। হঠাৎ
একদিন সে প্রকাশ
করল যে সে অন্ধ
হয়ে গিয়েছে। কিছু সময়
এ অবস্থায় থাকার পর
সে প্রকাশ করল
যে আমি পঙ্গু
হয়ে গিয়েছি। তখন ঐ
এলাকার
লোকেরা তাকে সবধরনের
চিকিৎসা করাল। কিন্তু
এতে কোন ফল
পাওয়া গেলনা। তখন
সে লোকদের
ডেকে বলল,
ওহে কল্যানের জামাত
তোমরা যা করছ
এতে আমি সুস্থ্য
হবনা কারন
আমি স্বপ্নে দেখেছি রাসূল
(সাঃ) আমাকে ঘুমের
ঘরে বলছেন তোমার
সুস্থতা অমুক কুতুবের
হাতে। অচিরেই
সে তোমার
কাছে আসবে। তখন
লোকেরা তাকে প্রথমে মসজিদে না নিয়ে অন্য
জায়গায় নিয়ে গেল।
কিন্তু
পরে তাকে অনেক
সম্মান করতে শুরু করল
অতপর হাল্লাজের
বেধে দেওয়া সময়ে হাল্লাজ
এ শহরে গোপনে প্রবশ
করল। তার গায়েছিল
সাদা রংয়ের
পশমি পোষাক।
সে মসজিদে প্রবেশ
করল
এবং একটি কোনে বসে ইবাদত
করতে লাগল আর
সে কারো দিকে তাকাত
না। হল্লাজের সাথীর
বর্ণনাকৃত গুন
অনুপাতে লোকেরা তাকে চিনল।
তার সাথে মুসাফা করল,
সালাম দিল ও সম্মান
করল এবং অন্ধ
ব্যক্তিকে তা জানানো হল।
সে বলল তার
গুনগুলি বর্ণনা কর।
লোকেরা গুণ
বর্ণনা করলে সে বলল এ
তো ঐ ব্যক্তি যার
ব্যাপারে রাসূল (সাঃ)
আমকে বলেছেন যে,
তোমার সুস্থতা অমুক
কুতুবের হাতে।
সুতরাং তোমরা আমাকে ঐ
ব্যক্তির
কাছে নিয়ে চল।
লোকেরা তাকে নিয়ে গেল।
তাকে চিনল এবং বলল
হে আল্লাহর বান্দা,
রাসূল (সাঃ)
স্বপ্নে আমাকে আপনার
কথা বলেছেন।
পুরো স্বপ্নের
কথা সে বলল হাল্লাজ
তা শুনে দুহাত দুআর
জন্য উপরে উঠাল
এবং তার জন্য দু’আ
করল। তারপর তার
লালা নিয়ে অন্ধ
ব্যক্তির
চোখে লাগালে তার চোখ
এমন ভাবে ভাল হল যেন
পূর্বে তার চোখ অন্ধই
ছিলনা এমন মনে হল।
অতপর তার লালা পঙ্গু
ব্যক্তির
পায়ে লাগালে সাথে সাথে সে ভাল
হয়ে হাটতে লাগল যেন
ইতপূর্বে তার কোন
রোগই ছিল না।
সেখানে ঐ এলাকার লোক
সকল ও এলাকার আমীর
উপস্থিত ছিল তখন
লোকেরা জোরে চিৎকার
করে উঠল এবং তাকবির
দিয়ে প্রকম্পন
সৃষ্টি করল
এবং তাসবিহ পাঠ করল।
আর
লোকেরা হাল্লাজকে অনেক
অনেক সম্মান
করতে লাগল। এ এলাকার
লোকেরা হাল্লাজকে এত
বেশী ভালবেসে ফেলল
যে, সে যা চাইত
তা তারা দিয়ে দিতে প্রস্তুত
হয়ে গেল। হাল্লাজ ঐ
এলাকা থেকে চলে যাওয়ার
ইচ্ছে করল। তখন
লোকেরা তাকে অনেক
মাল
জমা করে দিতে চাইলে সে বলল,
আমি এই এলাকায়
পৌছেছি দুনিয়াকে পরিত্যাগের
মাধ্যমে। সুতরাং আমার
ধন সম্পদের প্রয়োজন
নেই তবে তোমাদের ঐ
সাথীর প্রয়োজন
থাকতে পারে কেননা তার
অনেক অবদাল
সাথী রয়েছে যারা জিহাদ
করে হজ্ব
করে এবং সদকা করে।
তখন ঐ অন্ধ
ব্যক্তি (হাল্লাজের
সাথী) বলল হা’ আমাদের
শাইখ সত্য বলেছেন
যার মাধ্যমে আল্লাহ
আমায়
দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছে।
সুতরাং আমি বাকী জীবন
জিহাদে কাটাব
এবং বাইতুল্লায় আমার
আবদাল সাথীদের
সাথে হজ্বের মাধ্যমে ,
অতপর হাল্লাজ
লোকদের কে উদ্ধুদ্ধ
করলেন তার
সাথীকে মালা দিতে।
অতপর হাল্লাজ ঐ স্থান
ছেড়ে চলে গেল। আর ঐ
লোক কিছুদিন লোকদের
মাঝে থেকে অনেক
সম্পদ একত্রিত
করে হাল্লাজের
কাছে চলে আসল
এবং দুজন
এগুলোকে বন্টন
করে নিয়েছিল।
আব্দুর রহমান
সালামী বলেন
আমি ইব্রাহীম
ইবনে মুহাম্মদ ওয়ায়েজ
থেকে শুনেছি যে আবু
বকর ইবনে মামশাজ
বলেন দায়নুয়ে আমাদের
কাছে এক
ব্যক্তি উপস্থিত হল
যার ঘাড়ে সবসময়
একটি গাট্টি ঝুলানো থাকত।
তার
গাট্টি থেকে আমরা তালাশ
করে একটি হাল্লাজের
চিঠি পেয়েছি। যার
হেডলাইন ছিল
রাহমানুর রাহিম এর
পক্ষ থেকে(লেখা চিঠি)
অমুকের নিকট। অতপর
ঐ লোক ও চিঠিসহ
ইরাকে পাঠানো হল।
হাল্লাজকে এ
ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে সে তা স্বীকার
করল যে, এই চিঠি তার
নিজের লেখা। তখন
বাগদাদের
লোকেরা তাকে বলল
তুমি (ইতিপূর্বে)
নবী দাবী করেছিলে,
এখনতো দেখা যাচ্ছে তুমি ইলাহ
দাবি ও রব দাবি করছ!
সে বলল না, কিন্তু
আমার কাছে তো শুধু
জমাকৃত, আর
লেখকতো একমাত্র
আল্লাহই, অন্য কেউ
না।
আমিতো একটি যন্ত্রমাত্র।
তখন তাকে বলা হল
তোমার সাথে এই মতের
আর কেউ আছে কি?
তখন সে বলল
হ্যাঁ আছে ইবনে আতা এবং আবু
মুহাম্মদ হারিরিও
আবুবকর শিবলী। আবু
হারিরিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলল
হাল্লাজের
কথা শাস্তিযোগ্য।
শিবলীকে জিজ্ঞেস
করা হলে সে বলল
যে এমন
বলবে তাকে বাধা দেওয়া হবে।
এমনকি এই চিঠিই তার
ধ্বংসের কারণ
হয়ে দাড়ায়। আবু আব্দুর
রহমান সালামী মুহাম্মদ
ইবনে আব্দুর রহমান
রাজী থেকে বর্ণনা করেন
ওজীর হামেদ আক্কাস
যখন
হাল্লাজকে উপস্থিত
করলেন তখন
হাল্লাজকে তার
আক্বীদার
ব্যপারে জিজ্ঞেস
করলে সে তার
আক্বীদার
কথা স্বীকার করেছে।
অতপর
তা লিখে ইরাকের
ফুকাহায়ে কিরামকে জিজ্ঞেস
করা হল। তখন ইরাকের
ওলামাগন
ঘোষনা করলেন
এবং তা লিখে ওজীরের
কাছে পাঠানো হল।
অতপর অজীর
ইবনে আতাকে তার
বাড়িতে ডেকে নিলেন
এবং মজলিসের
মাঝে বসিয়ে ইবনে আতাকে হাল্লাজের
আক্বীদা সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করলেন। তখন
ইবনে আতা বলল,
যে ব্যক্তি এমন
কথা বলে তার কোন
আক্বীদা নেই। তখন
ইবনে আতা অজীরকে বলল
তোমার কি হল? এই
ওলীদের নেতার কথায়।
তখন অজীর,
ইবনে আতার চোয়াল
কেটে ফেলার নির্দেশ
দেয় এবং তার মাথায়
আঘাত করতে নির্দেশ
দেয়
এভাবে তাকে মারতে থাকে।
তার কিছুদিন পর তার
হাত পা কেটে ফেলা হয়।
সাতদিন পর
সে মৃত্যুবরণ করে।
বাগদাদের
উলামায়ে কিরাম
হাল্লাজের কুফরির
ব্যপারে ঐক্যমত পোষন
করেছেন উল্লেখ্য যে, ঐ
সময় বাগদাদ ছিল
ইলমের কেন্দ্র।। খতীব
বাগদাদী বলেন, হাল্লাজ
শেষবারের
মতো বাগদাদে এসেছিল
এবং সূফীদের সঙ্গ
দিয়েছে। বাগদাদের
অজীর হামিদ
ইবনে আব্বাস এর
কাছে এই সংবাদ পৌছল
যে হাল্লাজ অনেক
মানুষদেরকে গোমরাহ
করছে এবং লোকদের
কাছে এটাও ছড়াচ্ছিল
যে, সে মৃতকে জীবন
দিতে পারে ।
জ্বীনরা তার খেদমত
করে এবং যে যা চায়
তা উপস্থিত করে দেয়।
এবং আলী ইবনে ঈসার
কাছে এক বক্তির নাম
আলোচনা করা হলো,
যাকে মুহাম্মদ
ইবনে আলী ইবনে কানাবী কাতেব
বলা হতো।
সে হাল্লাজের ইবাদত
করত
এবং মানুষদেরকে তার
আনুগত্যের
গিকে আহবান করত।
তখন মুহাম্মদ
ইবনে আলী কানায়ীকে গেফতার
করা হলে এ
বিষয়গুলো সে স্বীকার
করল। গ্রেফতারের সময়
কানায়ীর
বাড়ী থেকে হাল্লাজের
কিছু লেখা পাওয়া যায় ।
যেগুলো স্বর্ণপানী দ্বারা লেখাছিল
রেশম কাপড়েরর উপর
এবং সেখানে একটি থলে পাওয়া যায়।
যাতে হাল্লাজের পশ্রাব
পায়খানা এবং হাল্লাজের
রুটির কিছু অংশ ও তার
অন্যন্য জিনিসপত্র।
মুকতাদীরের পক্ষ
থেকে অজীরকে ডাকা হল
এবং হাল্লাজের
বিষয়টি তদন্ত করার
দায়িত্ব দিল। তখন
অজীর হাল্লাজের
সাথীদের
একটি জামাতকে এনে ধমকালো তখন
তারা স্বীকার করল যে,
হাল্লাজ হল আল্লাহর
সাথে আরেক ইলাহ
এবং সে মৃতকে জীবিত
করতে পারে। এভাবেই
তারা হাল্লাজকে উন্মোচন
করেছিল। তখন
আলী ইবনে ঈসা তাদেরকে প্রত্যাখান
করল
এবং মিথ্যাবাদী বলে হাল্লাজের
ব্যপারে বলল
আমি আল্লাহর
কাছে আশ্রয় চাই এমন
লোক
থেকে যে নিজেকে নবী দাবী করেছে এবং ইলাহ
ও রব দাবী করেছে।
আমি একজন সালেহ
ব্যক্তি বেশী বেশী সালাত
ও সাওম
আদায়কারী আর
শাহাদাতাইনের উপর
আমি কোন জিনিস
বৃদ্ধি করবনা এবং আলী ইবনে ঈসা পরে অনেক
বেশী বেশী আল্লাহর
কাছে ক্ষমা চাইত।
অজীর হামিদ আব্বাস
সতর্ক হওয়ার
পূর্বে তার
এখানে সকলেই প্রবেশ
করতে পারত। একজন
আসত যার নাম
কখনো বলত হুসাইন
ইবনে মানসুর আবার
কখনো বলত মুহাম্মদ
ইবনে আহমদ কায়েমী।
আর হেরেমের একজন
যার নাম ছিল নাসরাল
হাজের। সে মানসুর
হাল্লাজের ধোঁকায়
পরে গিয়েছিল।
সে ধারণা করেছিল
যে হাল্লাজ একজন
নেককার লোক। অতপর
হাল্লাজ এর
ব্যপারে খলিফা মুকতাদির
বিল্লাহ
জানতে পারলে তাকে গ্রেফতার
করে হামিদ
ইবনে আব্বাসের
কাছে হস্তান্তর
করে দেয়।
সে তাকে জেলে বন্দি করে রাখে।
অতপর সকল
ফুকাহায়ে কেরাম তার
কুফুরির ব্যাপারে ও
যিন্দিকের
ব্যপারে ফতওয়া দেয়
এবং সে একজন যাদুকর।
এই ফতোয়ার পর
হাল্লাজের সাথীদের
মধ্যে থেকে দু’জন
ফিরে এসেছিল। একজন
হল আবু আলী হারুন
ইবনে আব্দুল আজীজ
আওরাজী, আরেকজন
হল দাব্বাস।
তারা দুজনই হাল্লাজের
হটকারিতা ও
যাদুকরী ও
মানুষদেরকে মিথ্যা ও
ভেলকীবাজীর
দিকে আহবান করত
তা খুলে খুলে বলল।
হাল্লাজের এই
ধেকাবাজীকে আরও
স্পষ্ট করার জন্য
সুলাইমানের
মেয়ে (হাল্লাজের
স্ত্রী)কে উপস্থিত
করা হল। তখন
সে হাল্লাজের আরও
অনেক দোষ-ত্রুটির
কথা বলেন। সে বলল
আমি একদিন ঘুমন্ত
অবস্থায়, সে আমার
উপর বসে বলল
নামাজের জন্য উঠ।
হাল্লাজের ইচ্ছা হল
তার সাথে সহবাস
করবে এবং হাল্লাজ
তার মেয়েকে নির্দেশ
দিল যে, সে যেন
হাল্লাজকে সিজদা করে।
তখন তার
স্ত্রী তাকে বলল মানুষ
কি মানুষকে সিজদা করে?
তখন হাল্লাজ বলল
হ্যাঁ এক ইলাহ আকাশে,
আরেক ইলাহ জমীনে।
অতপর
সে তাকে নির্দেশ দিল
তার আন্ডারগ্রাউন্ড
থেকে যা সম্পদ চাই
তা নিতে সে আন্ডারগ্রাউন্ডে
গিয়ে দেখল
সেখানে অনেক দিনার
দিরহাম।
হাল্লাজকে নিয়ে সর্বশেষ
কাজী আবু ওমর
মুহাম্মদ
ইবনে ইউছুফকে উপস্থিত
করা হল
এবং হাল্লাজকে আনা হল
এবং হাল্লাজের লিখিত
একটি কিতাবও
উপস্থিত করা হল। তখন
তার
কিতাবে একটি লেখা পেল
যাতে লিখা আছে যে কোন
ব্যক্তি হজ্ব করার
ইচ্ছা করল, কিন্তু
সামর্থ নেই, তখন
সে যেন তার
বাড়ীতে একটি ছোট
গৃহনির্মান
করে যাতে কোন ধরনের
নাপাকি থাকবেনা এবং অন্য
কেউ যেন
সেখানে প্রবেশ
না করতে পারে। যখন
হজ্বের সময় হবে তখন
তিনদিন
রোজা রাখবে এবং ঐ
ঘরটার
চারপাশে তাওয়াফ
করবে,
যেভাবে কা’বাকে তাওয়াফ
করা হয়। অতপর সে যেন
হজ্বের কাজগুলো তার
ঘরে করতে থাকে।
অতপর ত্রিশজন
ইয়াতিমকে দাওয়াত
দিয়ে খাওয়াবে এবং তাদের
খেদমত
করবে এবং তাদের
সকলকে একটি করে জামা পরাবে ও
সবাইকে সাত
অথবা তিন দিরহাম
করে দেবে। হজ্বের
জন্য ইচ্ছা পোষণ
কারী এমন করলে তার
হজ্ব আদায় হয়ে যাবে।
এবং যে ব্যক্তি তিনদিন
রোজা রাখবে আর
চতুর্থদিন তা ভাঙবে,
সে একমাস রমজানের
রোজা রাখার সমপরিমান
সওয়াব অর্জন করবে।
আর
যে ব্যক্তি রাত্রের শুরু
থেকে নিয়ে শেষপর্যন্ত
দুইরাকাত সালাত
(নামাজ) পড়বে। এরপর
তার সারা জীবনের
নামাজের পরিমান
সওয়াব পাবে। আর
যারা শহীদদের ও
কুরাইশদের কবরের
পাশে দশদিন থাকবে,
নামাজ পরবে ও
রোজা রাখবে, ইফতার
করবে একটি রুটি ও
লবণ দ্বারা,
তাহলে বাকী জীবনে তার
ইবাদতের জন্য যথেষ্ট
হবে। তখন কাজী আবু
উমর
হাল্লাজকে জিজ্ঞেস
করল
এগুলো তুমি কোথায়
পেয়েছ। হাল্লাজ বলল
আমি এগুলি হাসান
বসরীর ইখলাছ নামক
কিতাবে পেয়েছি। তখন
কাজী আবু উমর বলল
হাল্লাজ
তুমি মিথ্যা বলছ।
তোমার রক্ত হালাল।
আমি হাসান বসরীর
কিতাব মক্কায়
শুনেছি অথচ তাতে এই
জাতীয় কোন কিছু
লেখা নেই।
অতপর অজীর কাজীর
কাছে আসল এবং বলল
সে যে হালানুদ্দাস
তাহা কাগজে লিখেদিন।
কাজীসাহেব
তাহা লিখে দিলে অজীর
কাগজটিকে মুক্তাদির
কাছে পাঠাল। তখন
হাল্লাজ
বন্দী অবস্থায়।
মুক্তাদিরর এর
অনুমোদন দিতে তিনদিন
দেরী করল এবং অজীর
হামিদ আব্বাসের
ব্যপারে খারাপ
ধারনা করে বসল। তখন
সে খলিফার নিকট
একটি চিঠি লিখল
যে হাল্লাজের
বিষয়টি অনেক
প্রচারিত ও প্রসিদ্ধ।
তার ব্যপারে কারো কোন
দ্বিমত নেই। সে অনেক
মানুষকে গোমরাহ
করেছে। অতপর
খলিফার পক্ষ
থেকে উত্তর আসল
যে হাল্লাজকে মুহাম্মদ
ইবনে আব্দুস সনামাদ
জেলার এর
কাছে হস্তান্তর কর
এবং তাকে একহাজার
বেত্রাঘাত করতে বল,
যদি হাল্লাজ বেতের
আঘাতে মরে যায়
তাহলে ত হলই,
অন্যথায় তার গর্দান
উড়িয়ে দেবে। অজীর
খলিফার এই
নির্দেশে খুবই খুশী হল।
এবং জেলার
কে ডেকে তার
হাতে হাল্লাজকে তুলে দেওয়া হল।খতীব
বাগদাদী বলেন
আব্দুল্লাহ
ইবনে আহমদ
ইবনে উসমান সায়রাকী,
আবু ওমর
ইবনে ইয়াহ্ইয়া থেকে বর্ণনা করেন
যখন
হাল্লাজকে কতল করার
জন্য মানুষদের
সামনে বের
করা হল, তখন মানুষদের
প্রচন্ড ভীড় ছিল।
তখন
আমি হাল্লাজকে দেখে তার
নিকটে গেলাম। আর
হাল্লাজ তার সাথীদের
বলতে ছিল,আমার
কতল
হওয়াটা তোমাদেরকে যেন
চিন্তায় না ফেলে।
কারন
আমি ত্রিশদিন পর
তোমাদের
কাছে ফিরে আসব।
সে হত্যা হল। কিন্তু
ফিরে আসে নাই। খতীব
বাগদাদী বলেন, যখন
হাল্লাজকে জেলারের
কাছে হত্যার জন্য
হস্তান্তর করা হল
তখন
সে মুহাম্মদ
ইবনে আব্দুস সামাদ
কে ডেকে বলল
যে,আমার
কাছে কুসতুনতুনিয়া বিজয়
করার
একটি নসীহত আছে।
তখন সে বলল
তা বললেও তোমার
হত্যা বন্ধ করা হবেনা।
অতপর তাকে একহাজার
বেত্রাঘাত করা হল
এবং হাত পা কাটা হল ও
তার
মাথা দেহ
থেকে বিচ্ছিন্ন
করা হল। তার
দেহটাকে আগুন
দিয়ে জ্বালিয়ে দিল ও
তার
ছাইগুলোকে দজলা নদীতে ফেলে দিল।
তার
কাটা মাথাটাকে ইরাকের
ব্রীজের ওপর দুইদিন
লটকিয়ে রাখা হয়েছিল।
হাল্লাজের
সাথীরা ত্রিশ দিন
গুনতে লাগল হাল্লাজ
ফিরে আসে কিনা। কেউ
কেউ
ধারনা করল
যে তারা হাল্লাজকে ত্রিশদিন
পর দেখেছে।
সে একটি গাধার উপর
আরোহিত অবস্থায়
নাহরাওয়ানের
রাস্তায়। অতপর
সে বলল
যাতে লোকেরা এ
ধারনা না করে যে আমি হত্যা হয়েছি।
নিশ্চয় হত্যার
সময় অন্য
লোককে আমার মত
করে দেওয়া হয়েছিল।
হাল্লাজের
অনুসারীরা তা বলতেছিল
যে হাল্লাজের
দুশমনকে হত্যা করা হয়েছে।
ঐ যুগের উলামাগন বলল
তারা সত্যিই
দেখেছে শয়তান
হাল্লাজের
আকৃতি ধারণ
করে এসেছিল,
যাতে মানুষদেরকে গোমরাহ
করতে পারে।
যেরকম
ভাবে নাসারাদের
একটি দলকে গোমরাহ
করেছে।
শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
ইসলামে আসার কাহিনী ১ ৩য় পর্ব
২য় পর্বের পরে === কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলে গিয়েছিলো মার্। মা যখন কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলেন তখন আমি এতোক্ষনে প্রথম কাঁদলাম। আমার জন্য না,মার জন্য। দুআ করতে লাগলাম আল্লাহ যেন মাকে হেদায়েত দেন,এই কষ্ট কমিয়ে দেন আর মাকে আমার বিয়ের জন্য রাজি করে দেন। আমি কাওকে কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু তাই বলে আন ইসলামিক বা আধুনিক মুসলিম ছেলে তো বিয়ে করতে পারিনা।
fb তে ম্যাসেজ দিয়ে ফয়জুন নাহার আন্টিকে সব জানিয়ে রাখলাম। সব শুনে উনি,ইউসুফ,ইউসুফের মা,বোন সবাই আমার জন্য টেনশন করতে লাগলো। ইউসুফের মা আমাকে তখনই নিয়ে আসতে চাচ্ছিলেন। আরেকটু হলে ইউসুফ আমাকে নিয়ে যেতে ফার্মগেট চলে আসতেচেয়েছিলেন। আমি মানা করলাম। অপেক্ষা করতে চাইলাম কিছুদিন। মার প্রতিক্রিয়া ভয়াবহ ছিলো,তবুও মনের কোথাও না কোথাও একটু আশা রয়ে গিয়েছিলো। হয়তো মা রাজি হবে,মেনে নিবেন সব. অপু ভাইয়াও বললেন তারাহুরা করতে না। মা বিয়ের জন্য রাজি না। বাসায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। আমি খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছি বাসায়। সিহিন্তার বাসায় যেতে বা কথা বলতে মা নিষেধ করে দিয়েছিলো। তাই ফোনে ওর সাথে যোগাযোগ ছিলো। ও আমাকে সাহস দিত অনেক। ফয়জুন নাহার আন্টিও রেগুলাম যোগাযোগ রাখতেন। ইউসুফ জানালো যেহেতু মা রাজি না তাই ওরা এক সপ্তাহ পর শুক্রবার বিয়েটা করিয়ে ফেলতে চায়। মাকে ছাড়া বিএ করার ইচ্ছা ছিলোনা। কিন্তু আর উপায়ও নাই। তাই ভাবলাম এটাই ভালো হবে। তবে দুআ করে যাচ্ছিলাম মা যেন রাজি হয়ে যায়। এপ্রিলের ১ তারিখ,২০১৩ তে সিহিন্তা কল করে জানালো ইউসুফ নাকি ভাইয়ার সাথে দেখা করতে এসেছিলো। ওর মা হটাত বিয়ের জন্য রাজি না। কোনো কথাই মানতে চাচ্ছেন না। ছেলেকে বিয়ে করতে দিবেন না। কেনো এমন করছেন ইউসুফও জানেনা। কষ্ট পেয়েছিলাম। অনেক খারাপ লেগেছিলো। সারাদিন কেঁদেছি। মাকে কষ্ট দিলাম, আল্লাহর পথে তাও যা চলতে পারতাম তার পথ বন্ধ করলাম, সালাত পড়তে পারছিনা,ইসলামিক বই পড়তে পারছিনা, আবার কবে পারবো জানিনা। হতাশায় ডুবে থাকলাম পুরা একদিন। পরের দিন আমার অবস্থা দেখে মা পাপা ভয় পেয়ে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে আমার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেছিলো। পাপা অনেক কষ্ট পেয়েছিলো আমাকে দেখে। মা আমাকে ডেকে বললেন যে আমি চাইলে মুসলিম ছেলের সাথেই বিয়ে দিবেন। তবে দাড়ি ছাড়া একটু মডার্ন হলে ভালো হয়। আমি কিছু বলিনি।
এর মাঝে একদিন বড়মামি আসলো বাসায়। জানতে চাইলো আমি কি ইউসুফকেই বিয়ে করবো কিনা। মা রাজি না হলেও কি ওকেই বিয়ে করবো? মানে সে জানতে চাচ্ছিলো সিহিন্তার মতো পালিয়ে বিয়ে করবো কিনা। আমি বলেছিলাম যে আমি তো জানতাম মা রাজী হবেনা,তাও মাকে জানিয়েছি। মাকে ছাড়া আমি বিয়ে করতে চাইনা। আমি চাইলে পালিয়ে যেতে পারতাম কিন্তু মা যাতে আমার বিয়েতে থাকে এজন্যেই আমি মাকে জানিয়েই বিয়ে করবো। মামি যখন বুঝলো আমি অন্য কোথাও বিয়ে করবোনা তখন মামি আমার নানি আর বড়মামাকে বুঝিয়ে রাজী করালো। কারণ তারা রাজী থাকলে আমার বাকি আত্মিয়রাও আর কিছু বলবেনা। এরপর থেকে মার সামনেই ওজু করতাম,যদিও রুমে দরজা আটকে সালাত পড়তাম,মা বুঝতো কিন্তু কিছুই বলতো না। বাসায়ই ইসলামিক বই পড়তাম। মার সাথে বাইরে গেলে মাথায় কাপর দিতাম না কিন্তু এমনিতে মাথায় কাপর দিয়েই বাইরে যেতাম। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ সব অনেক সহজ করে দিলেন। এভাবে হটাত সব ঠিক হয়ে যাওয়া আল্লাহর দয়া ও রহমত ছাড়া আর কিছুই না।কল্পনাও করিনি এভাবে মা মেনে নিবেন! ইউসুফের তখন গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হয়েছে মাত্র। ও চাকরির জন্য খোঁজ করতে লাগলো। চাকরি পেলে সে আবার আমাকে বিয়ের কথা বাসায় জানাবে বলেছে। আমাদের বিয়ের কোনো লক্ষনই ছিলোনা। তাও কেনো জানি মনে হচ্ছিলো বিয়েটা হবেই। দুজনই ইশ্তেখারা পরেছিলাম আর পজেটিভ ফল পেয়েছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। সবর করতে লাগলাম।
ওর মা রাজি না,কিন্তু এতে লাভ হলো আমার মা আমার মুসলিম হবার ব্যপারটা মেনে নিলেন। সিহিন্তার বাসায় যেতেও আর বাঁধা নাই। বিয়ে হওয়ার থাকলে হবেই ইন শা আল্লাহ। আমি সবর করতে লাগলাম ও নিজের ইসলামিক জ্ঞানবৃদ্ধি, চর্চা বৃদ্ধি করার দিকে মনোযোগ দিলাম। কোনো ভাবেই মুমিন না হয়ে পাপের বোঝা নিয়ে আমি আল্লাহর সামনে যেতে চাইনি। আমার সব সময় ও সুযোগ কাজে লাগাবো ঠিক করলাম। আমি দেখেছি যখনই আমি আল্লাহর পথে চলতে চেষ্টা করেছি। আল্লাহ কোনো না কোনো ভাবে আমার জন্য সাহায্য পাঠিয়ে দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। তেমনই কয়েকটা ছোট ছোট ঘটনাআজ উল্লেখ করবো। আমি সিহিন্তার বিয়ের পর ওর থেকে শিখে অনেকটা সুদ্ধ্য করে নিয়েছিলাম আমার সালাত। তবুও কিছু ছোট খাট ব্যাপারে মাঝে মাঝে কনফিউশনে ভুগতাম যে ঠিক হচ্ছে কিনা। টিউশনি ও পড়ার জন্য সিহিন্তার বাসায়ও আগের মতো যাওয়া হচ্ছিলোনা। এমন সময় সিহিন্তার থেকে জানলাম ICD তে বুশরা আপু সালাতের ক্লাস নিচ্ছেন। ৩/৪টা ক্লাসে যাওয়ার সুযোগ করে নিতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ ওই ৩/৪টা ক্লাস করেই অনেক উপকার পাই। সালাতের কিছু ভুল ঠিক করে নিতে পারি। আমি বাংলা কুরআন পড়তাম,কিছু হাদিসের বই পড়তাম কিন্তু রাসূল (সা:) এর জীবনী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা ছিলোনা। মনে মনে ভাবছিলাম উনার জীবনি নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। এমনি সময় একদিন আমার চাচাতো বোন কল করে বলে ইউসুফ নাকি ওর হাসবেন্ডের হাতে আমার জন্য একটা বই পাঠিয়েছে। আমি গেলাম ওর থেকে বইটা আনতে। দেখি ইউসুফ আর-রাহীকুল মাখতুম পাঠিয়েছে আমার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ বইটা এতোই ভালো যে যতোই পড়ি মন ভরেনা। এখনো মনে আছে রাসূল (সা:) ইসলাম প্রচার শুরু করার অংশে আসার পর আর পড়তে পারতাম না। মনেহতো আরো পড়লেই তো রাসূল (সা:) এর মৃত্যুর কথা পড়তে হবে একদিন। রাসূল (সা:) মারা যাবেন ভাবতেও কষ্টে বুক ভেঙ্গে আসছিলো। অনেকদিন পড়া বন্ধ রেখেছিলাম।
ফ্লোরে সালাত পড়তে কষ্ট হচ্ছিলো। হাতে তেমন টাকা ছিলোনা। ভাবছিলাম কিছু টাকা জমিয়ে একটা জায়নামায কিনবো। কিন্তু আর কিছুদিনের মাঝেই আমার ভার্সিটির এক ফ্রেন্ড আমাকে সুন্দর একটা জায়নামায উপহার দেয়। আলহামদুলিল্লাহ! রমাদান মাস সম্পর্কে,এই মাসের ইবাদাত,বিদ'আত ইত্যাদি সম্পর্কে জানার ইচ্ছা ছিলো। সিহিন্তার বাসায় গেলাম ও নিজে থেকেই আমাকে একটা বই দিলো যেটাতে রমাদান সম্পর্কিত ডিটেইলস হাদিস সহ বর্ণনা ছিলো। আলহামদুলিল্লাহ! যেহেতু আমরা কারো মাধ্যমে মুসলিম হইনি, তাই মাযহাব সম্পর্কে আমার ভালো ধারনা ছিলোনা।একদিন ক্লাসে একজন আমাকে প্রশ্ন করেছিলো আমি কোন মাযহাব পালন করি,একটা না একটা মাযহাব নাকি পালন করতেই হয়। সেদিন সিহিন্তার বাসায় তাফসিরে সুমাইয়ার আম্মু বিক্রি করার জন্য কিছু বই আনেন। সেখান থেকে চারজন ইমামের জীবনিমূলক একটা বই ছিলো। ওটা কিনে নেই। রমাদান মাসে আমি আরবি পড়া শিখবো নিয়ত করেছিলাম। কিন্তু আমার তো কোনো শিক্ষিকা নেই। একদিন এ্যান্ড্রয়েডের প্লে স্টোরে একটা খুব ভালো সফট ওয়ের পাই। যেটা থেকে আরবি রিডিং পড়া শিখে যাই একা একা। উচ্চারণ ঠিক না হলেও পড়তে তো শিখে গেলাম আলহামদুলিল্লাহ!!
আরবি পড়া শিখলাম কিন্তু বাসায় আরবি কুরআন নাই। একটা কিনবো ভাবছি,এমন সময় এক ফ্রেন্ড বাংলা অর্থ সহ একটা আরবি কুরআন উপহার দেয়! আলহামদুলিল্লাহ!! এভাবে আল্লাহর সাহায্য আসতেই লাগলো। মন খারাপ থাকলে দেখতাম কেও না কেও ওই বিষয় নিয়েই fb তে পোস্ট করেছে। কোনো বিষয়ে সমস্যা থাকলে ওটা নিয়েই কোনো না কোনো হাদিস বা লেখা পেয়ে যেতাম নেট এ আসলে। সবচেয়ে বড় যে সাহায্য আল্লাহ আমাকে করেন তা হলো আমি চাইলেও আল্লাহ আমাকে অনেক গুনাহ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। যেমন কোনো এক জায়গায় গেলে হয়তো গুনাহ হবে এমন কিছু করতে হতো,দেখা যেত ওইদিনই আমি অসুস্থ্য হয়ে পরেছি বা কোনো বাধাঁ এসে উপস্থিত। আলহামদুলিল্লাহ! প্রতিটা পদে আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেন। কখনো আর নিজেকে একা মনে হয়নি। ইউসুফ ওদিকে চাকরী খুঁজতে লাগলো, আর এদিকে আমি নিজেকে আল্লাহর পথে চলতে আরো বদলে নিতে লাগলাম। আমি ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করছিলাম। অনেকদিনের দু:শ্চিন্তা, ভয় সব দূর হয়ে গিয়েছিলো। মা আমার ইসলাম হবার ব্যাপার মেনে নিয়েছেন, নামায পড়তে বাঁধা দেন না। আত্মীয়রা অনেকেই অনেক কথা শুনায় মাকে কিন্তু আমার সেসব কথা গায়ে লাগতোনা। আমার মামি খ্রীস্টান হয়েও আমাকে অনেক সাপোর্ট দেন। তার কারণের আমার বড় মামা আর নানী আমার মুসলিম হবার ব্যাপারটা মেনে নেন। যদিও মন থেকে মানেনি তাও আমাকে কিছু বলতোনা। আমি ভালোই ছিলাম কিন্তু আমার মাকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। হয়তো মা বাসায় আমাদের সাথে হাসি খুশি থাকতেন। কিন্তু বাইরে গেলে কারো সাথে দেখা হলে হয়তো বলতো,আহারে! তোমার জন্য কষ্ট হয়,তোমার দুই মেয়েই তোমার ধর্ম ছেড়ে চলে গেল। বা বলতো এতো করলা মেয়েদের জন্য কিন্তু ওরা কেও তোমার থাকলোনা। ইত্যাদি এমন অনেক কথাই মাকে সহ্য করতে হতো। মা বাসায় এসে কাঁদতো, মন খারাপ করে থাকতো। কিন্তু কখনও আমাকে জোর করতো না ইসলাম ধর্ম ছেড়ে দিতে। মাঝে মাঝে আমাকে অল্পতেই বকতো। আবার আমার বিয়ে হবে, চলে যাবো ভেবেও কাঁদতো। খুব কষ্ট হতো মার জন্য কিন্তু দুআ করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা আমার্।
ইউসুফ ততদিনে আবার তার পরিবারকে রাজী করায় বিয়ের জন্য। ওরা জুন মাসের এক শনিবার বিয়ের কথা বলতে বাসায় আসবে ঠিক হলো। ওরা যেদিন আসবে তার আগেরদিন icd থেকে একটি বিয়ের উপর দে লং প্রগ্রাম এ্যারেঞ্জ করা হয়। আমরা দুইজনই ওই প্রগ্রামে পার্টিসিপেট করি। সেখানে পাত্র পাত্রি বাছাই, দেখা, ওয়ালীমা, তালাক ইত্যাদি বিয়ে সম্পর্কিত সব বিষয়ে আলোচনা করা হয়। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের বিয়েটা কিভাবে করতে হবে,কি কি করা যাবেনা অনেক কিছুই আমরা শিখতে পারি। পরেরদিন বিকালে আমার বাসায় ও,ওর মা, বোন আর ভাবীকে নিয়ে আসে আমাকে দেখতে। সিহিন্তা আর অপু ভাইয়াও আসেন। কথা ঠিক হয় ও চাকরী পেলে সেপ্টেম্বরে বিয়ে হবে। খুব সুন্দর একটা বিকেল কাটিয়ে ওরা বাসায় চলে গেলো। বাবা মা সবাই খুশি। পরেরদিন সিহিন্তা কল করে জানালো ইউসুফের মা নাকি বিয়েতে রাজিনা। এখন ও না পারছে ওর মাকে কষ্ট দিতে, না পারছে আমাকে মানা করে দিতে। ও আবার সময় চাচ্ছে। আমার কেমন লেগেছে শুনে বলতে পারবোনা। আসলে কোন অনুভূতিই কাজ করছিলোনা। ইউসুফ আবার সময় চেয়েছে তাই অপেক্ষা করতে লাগলাম আবারো। মা বাবা শুনে কিছু বললেন না। আমাকে কোনো প্রশ্নও করলেন না। তারাও বুঝতে পেরেছিলো আমি কষ্ট পাচ্ছি। দুইবার এমন হলো। সবর করতে লাগলাম।
জুন মাসের মাঝামাঝিতে একদিন হটাত অপু ভাইয়া বিকালে কল করে বলেন আমাকে উনার বাসায় যেতে। ইউসুফ আর ওর মা আসবে। ওর মা আমার সাথে কথা বলতে চায়। ইউসুফের সাথে আমার যোগাযোগ নাই। ফলে কেন আসছে,রাজী হয়েছেন কিনা কিছুই জানিনা। বাবার সাথে সন্ধ্যার দিকে গেলাম সিহিন্তার বাসায়। ওর মা আমার সাথে অনেক কথা বললেন। তাদের বাসার অবস্থা, ছেলে মেয়েদের কথা ইত্যাদি অনেক কিছুই বললেন। শরীফুন্নেসা আন্টিও উনাকে আমার সম্পর্কে একটা ধারনা দিলেন। ওর মা আমাকে প্রশ্ন করলেন আমি উনার বাসার অবস্থা সব জেনেশুনে বিয়েতে রাজি কিনা। আমি বললাম রাজি। তখন উনি ইউসুফকে ডাক দিয়ে বললেন, চল বউমাকে বাসায় নিয়ে যাই। আমি আর ইউসুফ দুজনই অবাক! এটা কি হলো!! যিনি বিয়ের জন্য একদমই রাজি ছিলেন না তিনিই আমাকে পারলে এখনই বিয়ে করিয়ে বাসায় নিয়ে যান! আলহামদুলিল্লাহ!! সবর করার ও আল্লাহর প্রতি ভরসা করার ফল হাতে নাতে পেলাম। ওই মাসেই ইউসুফের গাজীপুরে চাকরি হয়ে গেল। মোটামোটি ঠিক হলো বিয়েটা সেপ্টেম্বরে হবে। কিন্তু ওর মা চাচ্ছিলেন বিয়েটা রমাদানের আগেই মানে জুলাই মাসেই হোক। যাতে রমাদানটা আমি উনাদের সাথে থাকতে পারি। আমরা ওদের বাসায় গেলাম। বিয়ে ঠিক হলো জুলাই মাসের ৯ তারিখ। কিন্তু ও থাকবে গাজীপুর আমি থাকবো ঢাকায়। ও প্রতি বৃহ:স্পতিবার আসবে গাজীপুর থেকে। কিন্তু আমি আর ইউসুফ কেও এভাবে থাকতে রাজি হলাম না। পরে ঠিক হলো বিয়ে না আখদ হবে। ও তিনমাস পর গাজীপুরে বাসা নিয়ে আমাকে ওখানে নিয়ে যাবে। সব ঠিক,৮ তারিখ আমার বান্ধবিদের বাসায় দাওয়াত দিলাম। হটাত শুনি ইউসুফ বলেছে ওকে নাকি ছুটি দিবেনা। ও ঈদের ছুটিতে বিয়ে করবে। আবারো বিয়ে নিয়ে ঝামেলা!! আল্লাহ জানেন তখন কেমন লাগছিলো। প্রথমে প্রচন্ড রাগ হচ্ছিলো। একবার মনে হচ্ছিলো বিয়েই করবোনা। রমাদান মাসে ওর জন্য পাঞ্জাবি কিনতে যাওয়ার কথা আমার আর মার্। মা ওর মাপ জানতে ওকে কল করেছিলো। কথায় কথায় ও মাকে বললো যে বিয়ের পর ৬মাস বা এক বছর আমাকে ঢাকায় থাকতে হবে। এখনই সে গাজীপুর নিয়ে যেতে পারবেনা। এবার সত্যি রেগে গেলাম। আমি কোথায় থাকবো, কি করবো আমাকে জিজ্ঞেস না করেই ডিসিশন নিয়ে নিল? আমি জানি এক আর এখন দেখি আরেক! বাস! এটা নিয়ে আমাদের মাঝে ঝগড়া লেগে গেলো। বিয়েটা ভেঙ্গেই গেলো!
এই যখন অবস্থা তখন এতোদিন যিনি বিয়ের বিরোধিতা করেছেন উনিই আসল ভূমিকা পালন করলেন।ওর মা বিয়েটা ভাংতে দিবেন না কিছুতেই। সেদিন রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত অন্তত ৭/৮বার কল করেছেন যেন সকালে ওদের বাসায় যাই। সকালে ওদের বাসায় যাওয়ার পর উনি কিছুই না জেনেও ছেলের হয়ে আমার কাছে ক্ষমা চাইলেন,বার বার মন খারাপ করতে না করলেন। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের মাঝে ভুল বুঝবুঝি মিটে গেলো। ২য় সাবান, ১০ই আগস্ট,২০১৩, ঈদের পরদিন আমাদের বিয়ের ডেট ঠিক হলো। আমাদের বিয়েতে ৩৫,০০০টাকার মতো খরচ হয় সর্বমোট। শরিয়ত মুতাবিক আমার মা বাবা একটা টাকাও খরচ করেনি। ICD তে আমাদের বিয়ে হয়। ৬০জন লোকের খাবার এ্যারেঞ্জ করা হয়। ছেলে মেয়েরা সম্পূর্ণ আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হয়। মেয়েদের ওখানে মেয়েরাই খাবার সার্ভ করে। বিয়ের খাবার যা বেচে যায় মাদ্রাসায় দিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি উচ্ছিষ্ট হাড্ডি,খাবার কুকুর বিড়ালকে খাওয়ানো হয়। বিয়ের মোহর ঠিক হয় ৫০০০০টাকা ও সূরা আল-মূল্ক । টাকা বিয়ের আগেই আমার কাছে দেয়া হয় আর সূরা বিয়ের রাতে ইউসুফ আমাকে তেলাওয়াত করে শুনায়। সেদিন সকাল থেকে অনেক বৃষ্টি হচ্ছিল।খুব সুন্দর একটা দিন। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমার বিয়েতে আমার মা খুশি মনেই উপস্থিত ছিলেন আলহামদুলিল্লাহ। শুধু তাই না আমার খ্রীস্টান আত্মীয়রাও সবাই ছিলেন। আল্লাহ আমার দুআ কবুল করে নিয়েছিলেন। সবাই বিয়ের দিন কাঁদে, কিন্তু আল্লাহ আমার ইচ্ছা এভাবে পূরণ করায় আমি এতো খুশি ছিলাম যে সারাক্ষন আমার মুখে হাসি ছিলো। আল্লহকে যতোই ধন্যবাদ দেই ততোই কম হবে।
আমার বিয়ের পিছে,অনুষ্ঠান সুন্দর করার পিছে অপু ভাইয়া আর সিহিন্তার অবদান অনেক বেশি ছিলো। ওরা প্রতিটা ব্যাপারে খেয়াল রেখেছিলেন যাতে বিয়েটা সুন্দর ভাবে ও শারিয়া মুতাবিক হয়। বিয়ের পর ইসলাম পালনে আমার আর সমস্যা হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। ওর মা,যিনি আমাকে প্রথমে পছন্দ করেননি, এখন উনি সবাইকে বলেন, আমি বউ না, মেয়ে এনেছি বাসায়। মা বলে ডাকেন আমাকে। আমার মা যিনি দাড়ি আলা মুসলিম ছেলে পছন্দ করতেন না,উনি আমাকে এখন সব সময় বলেন ইউসুফ অনেক ভালো ছেলে,ওর বা ওর পরিবারের কারো মনে কষ্ট দিওনা।আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর এতো রহমত, এতো বরকত আমি পেয়েছি যে আমাকে আর পিছে আমার জাহিলি যুগের দিকে ফিরে যেতে হয়নি।
এই ছিল আমার ইসলামের পথে আসার কাহিনী। এখন আমার জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। এবং এখনও প্রতি পদে আল্লাহ আমাকে সাহায্য করে যাচ্ছেন। আলহামদুলিল্লাহ! আমি এখন গর্ব করে বলতে পারি আমি একজন মুসলিমা। ইসলামের পথে আসাই আমার জীবনেরসবচেয়ে বড় পাওনা। আল্লাহ তার বান্দাদের কখনও নিরাশ করেন না। আল্লাহর পথে চলতে গেলে বাঁধা, কষ্ট আসবেই। কিন্তু আল্লাহর উপর ভরসা করে সবর করলে এর ফল অনেক বেশি মধুর হয়। আল্লাহু আকবার! কপি justpaste.it
ইসলামে আসার কাহিনী ১ ২য় পর্ব
১ম পর্বের পরে
===
(আমিও সাথে সাপোর্ট করি :-P ) । সিহিন্তা বিয়ে করতে রাজী হয় কিন্তু মেয়েদের বিয়ের জন্য দরকার একজন ওয়ালি। বাবাকে তো বলা যাবেনা মুসলিম হবার কথা,তাই সিহিন্তা দাদীমার সাথে দেখা করে তাকে জানালো সব। সিহিন্তা বার বার নিষেধ করে দিয়েছিলো সবাইকে যেন কেও বাবা মা কে কিছু না জানায়। কিন্তু আমার ছোট চাচা হয়তো খুশি হয়েই বাবাকে ফোনে সব বলে দেন। কিন্তু আমরা যে ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো। বাবার মাধ্যমে মাও সব জেনে যায়। এরপর যে ভয় আমরা মুসলিম হওয়র পর থেকে করছিলাম তার সম্মুখীন হবার সময় আসলো।
আজকাল দাড়িওয়ালা, ইসলামিক বেশভূষার পাত্র হলে অনেক মুসলিম মায়েরাই মেয়ে বিয়ে দিতে চায়না। সেখানে একজন অমুসলিম মা - যার সঠিক ইসলাম সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই তিনি যে রাজী হবেন না এটাই তো স্বাভাবিক। সিহিন্তা মুসলিম ছেলের সাথে বিয়ে হতে চায় জানতে পেরে মা স্বাভাবিকভাবেই অনেক কষ্ট পান, এবং পরে তা রাগে পরিণত হয়। সিহিন্তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় আর দিন রাত শুধু কাঁদতেন। । অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে দেখে ও বাসায় বলে দেয় যে ও মুসলিম হয়েছে। কিন্তু সবাই ভেবেছে যে ও অপু ভাইয়াকে আগে থেকে পছন্দ করতো এবং ভাইয়াকে বিয়ে করতে মুসলিম হয়েছে। ও যে মনে প্রানে ইসলামকে নিজের দ্বীন হিসেহে গ্রহন করেছে এটা কেউ বুঝতে চাইল না। অবশেষে মা অপু ভাইয়ার সাথে কথা বলতে রাজি হলেন। কিন্তু ভাইয়ার ইসলামিক পরিবার ও ভাইয়ার দাড়ি দেখে না করে দেয়। মা কিছুতেই সিহিন্তাকে ইসলামিক পরিবারে বিয়ে দিতে চায়নি। সিহিন্তা যাতে ইসলামিক ভাবে চলতে না পারে সেদিকেও কড়া নজর রাখা হয়। সবাই ভাবতো ভাইয়াকে ভুলে গেলে ও ইসলামকেও ভুলে যাবে। মার আরো ধারনা ছিলো যে সিহিন্তার মুসলিম বান্ধবিরা ওর মগজ ধোলাই দিচ্ছে মুসলিম হওয়ার জন্য। তাই সবার থেকে ওকে দূরে রাখার চেষ্টা করতো। অবস্থা এতোই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো যে এভাবে প্রেশারে থাকা আর সম্ভব হচ্ছিলোনা। জোর করে তো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস,ইসলামের প্রতি ভালোবাসা,আল্লাহর ইবাদত করা বন্ধ করে দেয়া যায়না। তাই প্রচুর মানষিক কষ্টের মধ্য দিয়ে ওকে যেতে হয়েছে।
মা অনেক কষ্ট পাচ্ছিলো,অনেক কান্নাকাটি করতো। না পারছিলো সিহিন্তা মার কষ্ট দূর করতে না পারতো সঠিক পথ থেকে ভুল পথে যেতে। আমার এখনো মনে আছে সিহিন্তা শুকিয়ে কালো হয়ে গিয়েছিলো টেনশনে। আমার কথা কেও সন্দেহ করেনি বলে আমাকে তখন এই যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়নি।তবে সিহিন্তার অবস্থা দেখে খুব কষ্ট লাগতো। মা যখন আমার কথাও জানবে তখন যে কি হবে আল্লাহই জানেন। আমি নিজেও মানসিক কষ্ট পাচ্ছিলাম। আগেই বলেছি কারো ধারনাও ছিলোনা যে আমরা ইসলামকে সঠিক ধর্ম মানি। ভাবতো হয় সিহিন্তা ব্রেইন ওয়াশড হয়েছে না হয় প্রেমে পরেছে। সিহিন্তা বিয়ে করে ইসলাম পালনের সুযোগ পাবে। কিন্তু আমার কথা জানতে পারলে এই কষ্টের মধ্য দিয়ে কতোদিন যেতে হবে তার ঠিক নাই। আর মার কষ্ট কমানোর জন্যও তো কাওকে এখন মার সাথে থাকা লাগবে। তাই আমার মুসলিম হওয়ার কথা আর প্রকাশ করিনি কারো কাছে।খ্রীস্টান সেজেই থাকতে লাগলাম সবার সাথে। এবং খুবই সাবধানে নামায পড়তাম। বাসার সব ইসলামিক বই লুকিয়ে ফেলেছিলাম। মাকে কোনো ভাবেই মুসলিম ছেলের সাথে সিহিন্তার বিয়ের জন্য রাজী করানো গেলোনা। সিহিন্তা সিদ্ধান্ত নিয়ে পারছিলোনা কি করা উচিত এখন। আগেও বলেছি এই কঠিন সময়ে এনাম আঙ্কেল,হুমায়রা আন্টি,রেহনুমা আপু,তারিনাপু মানসিক ভাবে সাপোর্ট দেয় ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। এরপর অনেক আলাপ আলোচনার পর ঠিক হলো মা-বাবাকে না জানিয়েই সিহিন্তার বিয়ে দেয়া হবে। আমার এক চাচা হবেন ওয়ালি, যার সাথে সারা জীবনে মাত্র কয়েকবার আমাদের দেখা হয়েছে। বিয়ে হবে দাদীর বাসায়। যেহেতু কর্মদিবস ছাড়া ছুটির দিন ও বাসা থেকে বের হতে পারবে না, আবার সন্ধ্যার পরও বের হওয়া যাবেনা, তাই দিন ঠিক হল ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯; সোমবার সকালে।
রামাদানের ২৬ তারিখ। ঐ পক্ষ থেকে বিয়ের হালকা পাতলা শপিং করা হলো। আমিও টিউশনির টাকা থেকে টুকটাক কিছু শপিং করলাম ওর জন্য। কলেজে যাওয়ার পথে লুকিয়ে ওর কিছু জামা-কাপড় দিয়ে আসতাম অপু ভাইয়ার কাছে। এদিকে ভাইয়া ওর এফিডেবিটের কাজটাও সেরে ফেললো। বিয়ের আগের দিন খুব বৃষ্টি ছিল, বৃষ্টির মধ্যে আমরা দুই বোন শেষবারের মত ঘুরতে বের হলাম। বসুন্ধরা সিটিতে ইফতার করলাম একসাথে। সিহিন্তার যে বিয়ে হয়ে যাবে,ও দূরে চলে যাবে সবই জানতাম কিন্তু তখনো মন থেকে মেনে নেইনি। সব এতো দ্রুত হচ্ছিলো যে কখন কিভাবে কি হয়ে যাচ্ছে বুঝে উঠতেই পারছিলাম না। যেন সব আগে থেকেই প্ল্যান করা। আল্লাহ কখন কি হবে সব ঠিক করে রেখেছিলেন। বাসায় ফিরে সিহিন্তা সারা রাত জেগে মাকে একটা চিঠি লিখল। ওর এই কাজের জন্য মা যেন ওকে ভুল না বুঝে, ওর এভাবে চলে যাওয়ার মূল কারন সংক্ষেপে বর্ননা করা হল। পরদিন সকালে মা অফিসে, আমি কলেজে চলে যাওয়ার পর ও মার আলমারিতে চিঠিটা রেখে কাউকে কিছু না জানিয়ে বের হয়ে আসল। কিছু দ্বিনী বোন একটু দূরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। ওদের সাথে ও দাদীর বাসায় চলে গেল। ওরা ছিল NSU এর রিদিতা, মাহমুদা, আয়শা, আইনুর এবং আরো কিছু বোন যাদের নাম এখন মনে পড়ছে না। দাদীর বাসায় খুব দ্রুত বিয়েটা হয়ে গেলো। আমি কলেজ থেকে গিয়েছিলাম। বিয়ের পরপরই ওকে নিয়ে ভাইয়ারা ওদের বাসায় চলে গেলো। আমি বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় আসার পর হটাত করেই কেমন জানি খালি খালি লাগছিলো। এই প্রথম বুঝতে পারলাম সিহিন্তা চলে গেছে। আর আগের মতো একসাথে পড়তে বসবোনা,একসাথে রাত জেগে গল্প করা হবেনা,একসাথে লুকিয়ে সালাত পড়া হবেনা। কলেজ থেকে এসে সারাদিনের কাহিনী বলার কেও নাই। এতো একা লাগছিলো! ওর বিয়ের পর প্রথম বার এতো কাঁদলাম। মা আসলে বাসায়, সবাই জানতে পারলে বিয়ের কথা কি হবে এসব
তখন মাথায় আসেনি। শুধু বুঝতে পারছিলাম আমি একা হয়ে গেছি। [এখন থেকে আমার কাহিনী থাকবে ইন শা আল্লাহ। ] সিহিন্তার বিয়ে হয়ে গেলো। মা- বাবা জানতে পেরে ওর বাসায় ছুটে গেলো। তারা বিশ্বাস করতে পারছিলোনা। সিহিন্তা যে না জানিয়ে বিয়ে করার মতো কাজ করতে পারে তা আসলে কেও ভাবতেও পারেনি। শুধু মা বাবা না,আমার কোনো আত্মিয়ও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি। বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আর কিছু করার নাই। মা-বাবা বিয়েটা মেনে নিলো। কিন্তু মা অনেক কষ্ট পেয়েছিলো। সারাদিন কাঁদতো।মাঝে মাঝে মনে হতো এমন আঘাতে মার মানসিক অবস্থায়ও প্রভাব পরেছিলো। কষ্ট পেলেও মা রোজ সিহিন্তাকে কল করে খোঁজ নিতেন। ওর বাসায়ও যেতেন ওকে দেখতে। মা আসলে আমাদের অনেক বেশি ভালোবাসতো। সিহিন্তার বিয়ে হয়ে গেলো,আর তখন থেকেই আমার আসল পরীক্ষা শুরু হলো।
মা রোজ কাঁদতো আর বলতো যে "তোমার বোন আমাকে কষ্ট দিয়েছে,তুমি এমন কষ্ট দিওনা,তাহলে আমি মারা যাবো।" আমি কিছুই বলতে পারতাম না। চুপ করে থাকতাম। সব আত্মীয়রাও একি কথা বলতো। বলতো যে তুমি তো দেখতেই পাচ্ছো তোমার বোন তোমার মাকে কতো কষ্ট দিয়েছে,তুমি কষ্ট দিওনা। আমি জানতাম আমাকেও এমন কষ্ট দিতে হবে। না পারতাম মাকে কথা দিতে না পারতাম মার কষ্ট সহ্য করতে। এবং এর ফল হলো ভয়াবহ। আমি ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করলাম। সিহিন্তা আমার কষ্ট বুঝতো,কিন্তু ওর কিছুই করার ছিলোনা। আমি সবার থেকে দূরে দূরে থাকা শুরু করলাম। আত্মীয়দের বাসায় কম যেতাম। ক্লাস থেকে দেরি করে বাসায় যেতাম। ক্যাম্পাসে বসে থাকতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। যেদিন ফ্রেন্ডরা থাকতোনা এই দুপুরে রাস্তায় হাটতে থাকতাম। বাসায় যেতে ইচ্ছা করতোনা। অনেক বেশি ডিপ্রেশনে ভুগতাম। কেও যাতে না জানে আমি মুসলিম তাই সকল ইসলামিক বই লুকিয়ে রেখেছিলাম। নেটেও আমার ভালো ইসলামিক ফ্রেন্ড ছিলোনা যে সাহায্য করবে। সিহিন্তাও সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ইসলামের জ্ঞান অর্জনের দিকে আগালে মনে হতো মাকে কষ্ট দিচ্ছি,আবার মার কথা শোনাও অসম্ভব। অসম্ভব মানসিক কষ্টে থাকতাম প্রতিনিয়ত। রুমের দরজা আটকাতে দিতোনা মা। তাই রাতে একসাথে সব ওয়াক্তের সালাত পড়তাম। মনে যাতে কি হবে এই চিন্তা না আসে তাই ক্লাস, পড়া, টিউশনি দিয়ে সারাদিন এতো ব্যস্ত রাখতাম নিজেকে যে রাতে ২/৩ ওয়াক্তের সালাত পড়েই টায়ার্ড হয়ে কখন জানি সেভাবেই ঘুমিয়ে পরতাম। নামায পড়া কমতে লাগলো। ইসলামের থেকে দূরে থাকার ফলে ঈমানও কমতে লাগলো। সিহিন্তার বাসায় যখন যেতাম খুব ভালো থাকতাম। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়তাম। মাথায় কাপর দিয়ে থাকতেও একটুও কষ্ট হতোনা। ওদের বাসার সবাই আমাকে অনেক আদর করতো। অপু ভাইয়া হাজ্ব করতে গিয়েছিলেন।
কুরবানীর ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে ঈদ পর্যন্ত ওদের বাসায় থেকেছিলাম। কুরবানীর ঈদ যে আসলে কেমন হয় প্রথম বুঝলাম ওদের বাসায় ঈদ করে।ঈদের আগেরদিন সবাই মিলে গল্প করতে করতে চালের আটারর রুটি বানালাম।ঈদের দিন কুরবানী দেয়া,গোস্ত ভাগ করা ইত্যাদি অনেক কাজ। প্রথম ভুড়ি সাফ করা শিখলাম হাতে কলমে শরীফুন্নেসা আন্টির কাছ থেকে।ডিপ্রেশনের কথা ভুলেই যেতাম সিহিন্তার সাথে থাকলে। বাসায় আসার পর আবার শুরু হতো সেই পুরান কষ্ট।সিহিন্তা কি সুন্দর ইসলাম পালন করতে পারছে আর আমি পারছিনা। নামাযটাও পড়তে পারছিনা,পর্দা করা,কুরআন তেলাওয়াত শিখে ইত্যাদি তো দূরের কথা।ইসলামিক হালাকা গুলোতেও যেতে পারতাম না কারন বাইরে গেলেই মা কল দেয়। না ধরলে রেগে যাবে। আর হালাকা হয়ও আসরের ওয়াক্তে যখন আমার ক্লাস থাকেনা। আমাকে ফোনে না পেলে ফ্রেন্ডদের কল করলেই জেনে যাবে যে ক্লাস নাই তাও আমি বাইরে আছি।
সিহিন্তা আর আমার মাঝে কতো মিল সবাই জানতো। এবং আমিও যে মুসলিম হয়ে যাবো তা সবাই বুঝতো। সরাসরি জোর করতে পারতোনা যদি পালিয়ে বিয়ে করে চলে যাই এই ভয়ে। ইমোশনাল্লি আমাকে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলতো। তখন থেকে আমার একটা সমস্যা শুরু হয়। আমি একা থাকতে পারতাম না।একা হলেই মাথায় দুনিয়ার দু:শ্চিন্তা আসতে থাকতো আর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেত।সারারাত ঘুমাতে পারতাম না,ছটফট করে কাটিয়ে দিতাম। ইসলাম পালন করতে পারছিনা ঠিক মতো,আল্লাহ যদি নারাজ হয়?ভয় লাগতো। আবার পালন করতে গেলে যদি মা জেনে যায়,আমি কোথায় যাবো,কিভাবে সব সামলাবো এসব ভেবে ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে যেতাম। ঈমান খুব কমে গিয়েছিলো। চিন্তা যাতে মাথায় না আসে তাই নিজেকে ব্যস্ত রাখা শুরু করলাম। ক্লাস শেষে ইচ্ছা করে দেরি করে আসতাম। টিউশনির সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টায় লেগে গেলাম। মার সামনে কম যেতে লাগলাম। মা অনেক বলতো অফিস থেকে আসলে যেন মার সাথে একটু গল্প করি, একসাথে টিভি দেখি। কিন্তু আমি মার কাছে যেতাম না, জানি সিহিন্তার কথা উঠবেই আর আমি যেন এই কাজ না করি বলবেই। কিছু করার না থাকলে গল্পের বই পড়ে বা নেটে ফ্রেন্ডদের সাথে রাত জেগে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতাম। যতোক্ষন না টায়ার্ড হয়ে নিজে থেকে চোখ বন্ধ হয়ে আসতো,ঘুমানোর চেষ্টা করতাম না। মাসের পর মাস কেটে যেতে লাগলো এভাবে। সবাই ভাবতো আমি অনেক হাসিখুশি আছি। কেও বুঝতোনা আমার ভিতরে কি চলছে। নিজের সাথে যুদ্ধ করে করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। অনেকদিন হয়ে গেছে। আমি থার্ড ইয়ারে পড়ি।আমার বোনের বড় ছেলে আনাসের জন্ম হয়ে গেছে। উমারের জন্ম হবে সে বছর্। আমি ডিপ্রেশন থেকে পালাতে নিজেকে এতোই ব্যস্ত করে নিয়েছিলাম যে আমার আর নিজের জন্য সময় ছিলোনা। একটা কোচিং এ পড়াতাম। ৪/৫টা টিউশনি করতাম। একটু সময় ফ্রী পেলে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিয়ে বা ঘুরে কাটিয়ে দিতাম। সালাত পড়তাম,আবার ছাড়তাম। মাঝে মাঝে মাথায় কাপর দিতাম,মাঝে মাঝে দিতাম না। দিন চলতে লাগলো।
আমি সুখি ছিলাম না। সারাক্ষন মাথার মাঝে ঘুড়তো যে আমি মুসলিম হয়েও ইসলাম পালন করছিনা। কোনো কিছুতেই শান্তি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। টিউশনি করে মাসে ভালোই এ্যামাউন্ট হাতে আসতো, পড়ালেখায়ও খারাপ ছিলাম না। তবুও মনে শান্তি ছিলোনা। একদিন দুপুরে বাসায় ছিলাম। কি ভেবে খুঁজে একটা বাংলা কুরআন বের করলাম। সিহিন্তার ছিলো কুরআন টা। অজু করে কুরআন নিয়ে বসলাম। সুরা আল- বাকারা পড়তে লাগলাম। যতোই পড়তে লাগলাম হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগলো। যখন ৭ নাম্বার আয়াতটা পড়লাম কান্না আটকাতে পারলাম না আর। ৭ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, " আল্লাহ তাদের মন ও শ্রবণ-শক্তির ওপর 'মোহর' অঙ্কিত করে দিয়েছেন। এবং তাদের দৃষ্টিশক্তির ওপর আবরণ পড়েছে; বস্তুত তারা কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। " আল্লাহ চাইলে আমার মনের ওপর মোহর অঙ্কিত করে দিতে পারতেন,তাহলে আমাকে জাহান্নামের আগুন হতে কেও রক্ষা করতে পারতোনা। কিন্তু আল্লাহ তা করেননি। আমি ঠিক মতো সালাত পড়িনা,পর্দা করিনা,তাও তিনি আমাকে সুজোগ দিয়ে যাচ্ছেন! আল্লাহু আকবর! আর আমি কিনা তাও আল্লাহর থেকে দিন দিন দূরে চলে যাচ্ছি! যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত এতোদিনে, আল্লাহকে আমি কি জবাব দিতাম?কি মুখ নিয়ে তাঁর সামনে যেতাম!সঠিক পথের সন্ধান পাওয়ার পরেও,সত্য জানার পরেও কিভাবে আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করে,আল্লাহর ইবাদাত না করে থাকতে পারছি! কাঁদতে কাঁদতে দুআ করতে লাগলাম,আল্লাহ আমার মনের ওপর মোহর অঙ্কিত করে দিওনা কখনও। আর আমার মার মনের ওপর মোহর অঙ্কিত করে থাকলে তা সরিয়ে দাও। আমাকে যেভাবে হেদায়েত দিয়েছো আমার মাকেও হেদায়েত দাও। আমি যদি জান্নাতে যেতে পারি আমার মা যেন আমার পাশে থাকে। অনেক কেঁদেছি সেদিন। কাঁদতে কাঁদতে আরো পড়তে লাগলাম। আল্লাহ আরো কি কি বলেছেন জানার চেষ্টা করলাম। সুরা আল-বাকারা এর ৬২ নাম্বার আয়াতে এসে আবার কেঁদে দিলাম। এই আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, "নিশ্চয় জেনো, শেষ নবীর প্রতি বিশ্বাসী হোক, কি ইহুদি, খ্রিস্টান কিংবা সাবীই - যে ব্যক্তিই আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনবে ও নেক কাজ করবে, তার পুরষ্কার তার রব্ব এর নিকট রয়েছে এবং তার জন্য কোনো প্রকার ভয় ও চিন্তার কারন নেই। " আলহামদুলিল্লাহ!! এতোদিনের ডিপ্রেশন ওই এক মূহুর্তেই শেষ হয়ে গেলো। আল্লাহ আছেন,নিজে বলেছেন আমার কোনো ভয় বা চিন্তার কারন নেই। তাহলে কি জন্য আমি হতাশ হবো!
আমি সব সময় দুআ করতাম আমার যেন মাকে না জানিয়ে পালায় বিয়ে করা না লাগে। মা যেন আমার বিয়েতে উপস্থিত থাকে। খুশি মনে মুসলিম ছেলের সাথে আমার বিয়ে দেন। এতোদিন দুআ করতাম আর এখন বিশ্বাস করা শুরু করলাম যে আল্লাহ চাইলে তাই হবে! আবার সালাত পড়া শুরু করলাম। মাথায় কাপর দিতে তখনও সমস্যা হতো তবুও চেষ্টা করতে লাগলাম। অযথা অনলাইনে আড্ডা দেয়া কমিয়ে দিতে দিতে বন্ধই করে দিলাম। আগেই বলেছি নিজেকে এতোই ব্যস্ত করে ফেলেছিলাম যে নিজের জন্যই সময় ছিলনা আমার্। তবুও ইসলাম নিয়ে পড়া শুরু করলাম আবার্। ধীর গতিতে যদিও তা আগাতে লাগলো তবে এবার আর পথভ্রষ্ট হতে হয়নি।কারণ এবার আমার কথা বলার ও শোনার জন্য একজন আছেন। যখনই কষ্ট লাগতো সেজদায় আল্লাহকে সব বলতাম। খুব আপনদের সাথে যেভাবে মানুষ কথা বলে আল্লাহর সাথে সেভাবেই কথা বলতাম (এখনও বলি)। মন হালকা হয়ে যেত। কোনো কষ্টকেই আর কষ্ট মনে হতোনা। আলহামদুলিল্লাহ!! আবার আমি নিজেকে ফিরে পেলাম! ২০১২ সাল,কিছুদিন পরেই রামাদান মাস শুরু হবে। নিয়ত করে রেখেছি এবার যতো বাঁধাই আসুক সব রোজা রাখতে চেষ্টা করবো,কুরআন তেলাওয়াত করতে পারতাম না তখনও তাই ঠিক করেছি বাংলা অনুবাদ টাই পুরাটা পড়ে শেষ করবো। তারাবির সালাত পড়বো,কি কি দুআ করবো,কি কি আমল করবো অনেক কিছুই প্ল্যান করে রেখেছিলাম। এমনকি সা'বান মাসেও কয়েকটা রোজা রেখেছি। পুরাপুরি প্রস্তুত আমি রমাদানের জন্য।
রমাদান মাসের আগের দিন হটাত করেই প্রচন্ড জ্বর উঠে। ১০৩ এর নীচে জ্বর নামেই না। সারারাত জ্বরে ছটফট করলাম। তিনটার দিকে যাও একটু ঘুমালাম,এই রাতে সবার "চোর এসেছে, চোর এসেছে" ডাকাডাকিতে ঘুম ভাংলো। উঠে দেখি চার তালার জানালা দিয়ে চোর আমার প্রিয় মোবাইলটা নিয়ে গেছে! মন খারাপ হয়ে গেলো। পরের দিনও জ্বর কমেনা। ডাক্তারের কাছে গেলাম,টেস্ট করে ধরা পরলো আমার জন্ডিস হয়েছে। ডাক্তার আরও টেস্ট দিলেন,ধরা পড়লো হেপাটাইটিস A ভাইরাস। জন্ডিস হয়েছে,রোজা তো রাখতেই পারবোনা,এতো প্ল্যান এতো প্রস্তুতি কিছুই আর কাজে লাগাতে পারছিনা। মন ভেঙ্গে গেলো। দিন রাত কাঁদতাম। সুস্থ্য হবার নামও নাই এদিকে রমাদান মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে! হেপাটাইটিস A এর চিকিতসা হলো মানসিক ও শারীরিক বিশ্রাম। শারীরিক বিশ্রাম ঠিকই ছিলো কিন্তু মানসিক অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। কোথায় সুন্নাত সহো সালাত পড়বো,তারাবি পড়বো,সেখানে ফরজ সালাত গুলাই কোনো রকমে ইশারায় পড়তে হচ্ছে। কিছু খেতে পারতাম না। মা বাবা চিকিতসার কোনো ত্রুটি রাখেননি। তাও রমাদানের শেষের দিকে এতোই দুর্বল হয়ে পরেছিলাম যে সেলাইন দেয়া লেগেছে ৩টা। ডাক্তারও বার বার বলতো যে কি নিয়ে এতো দুশ্চিন্তা করেন যে অবস্থা দিন দিন এভাবে খারাপ হচ্ছে? সবাইকে বলতাম সামলে 4th year ফাইনাল পরীক্ষা,পড়তে পারছিনা তাই টেনশন হচ্ছে।
রমাদান মাস শেষ হয়ে গেলো,কিছুই প্ল্যান মতো করতে পারিনি। পরের রমাদানে বেঁচে থাকবো কিনা তাও জানিনা। মোবাইলটাও ছিলোনা যে নেট থেকে ইসলামিক লেকচার পড়বো বা শুনবো। পুরা রমাদান হসপিটাল আর আমার রুমের মধ্যে থেকেই কেটে গেলো। আল্লাহর ইচ্ছা ভেবে মেনে নিলাম। প্রায় দুই মাস কষ্ট করে এরপর সুস্থ্য হলাম। একা সারাদিন থাকাতে চিন্তা করার অনেক সুজোগ পাই। অতীতে কি ভুল করেছি, হেদায়ের পাওয়ার পরেও কি ভুল করেছি সব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। নিজের মাঝে কি কি পরিবর্ত্ন আনতে হবে ঠিক করলাম। সেই রমাদান মাস আমার জন্য অনেক বড় শিক্ষা ছিলো। যখন সুজোগ পেয়েছিলাম সালাত পড়িনি,পর্দা করিনি,গুনাহে লিপ্ত ছিলাম। আর যখন এতো প্ল্যান করলাম আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কিছুই করতে পারলাম না। বুঝতে পারছিলাম হেদায়েত পাওয়ার পরেও আর আমার এভাবে পথভ্রষ্ট হওয়া চলবেনা। আল্লাহর এতো বড় রহমত কে আমি এভাবে for granted নিয়ে নিলে হবেনা। আমার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা হয়ে গেলেও এখনও যে গুনাহ করে যাচ্ছি তার শাস্তি তো কম হবেনা। কবরের আজাব,জাহান্নামের আগুন থেকে আমাকে কে রক্ষা করবে তখন! অনেক ভুল করেছি আর না। একটা একটা করে ভুল সংশোধন করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম। ভুলের জন্য তওবা করে নিলাম। সময় খুব ভালো কাটছিলো। সারাদিন টিউশনি করতাম। স্টুডেন্টদের সাথে থাকতে নিজেকেও বাচ্চা মনে হতো,যেন আমিও আবার ছোট হয়ে গেছি। এছাড়া সময় পেলেই হয় আমার ভার্সিটি ফ্রেন্ড শ্বাশতীর বাসায় চলে যেতাম নাহলে সিহিন্তার বাসায় যেতাম। এই দুইজনের সাথে থাকলে হাজার মন খারাপ হলেও তা ভালো হয়ে যেতো। আর আমার দুই পুতুল আনাস,উমার তো আছেই। ওদের সাথে থাকলে দিন কিভাবে চলে যেত বুঝতেও পারতাম না। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ।
uoda তে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স এ ভর্তি হলাম। মজা লাগতো খুব পড়তে। মাঝে একটা স্কুলেও পড়াই কিছুদিন। সময় কেটে যাচ্ছিলো ভালোই আলহামদুলিল্লাহ। ডিপ্রেশন আর ছিলোনা।ইসলাম প্র্যাক্টিস করার প্রতিও দিন দিন আরো বেশি সচেতন হচ্ছিলাম।তবে মাঝে মাঝে নিজেকে একটু একা একা লাগতো। সব মেয়ের মতো আমিও একদিন নিজের সংসার হবার স্বপ্ন দেখতাম। মাস্টার্স করছি, বয়সও তো কম হয়নি তখন! ২০১২ এর শেষের দিকে,নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে একদিন ঠিক করলাম যে আর না,জীবনে যা ভুল করার করেছি। এখন থেকে সব বাদ,সম্পূর্ণ আল্লাহর পথে চলবো।যেই ভাবা সেই কাজ। প্রথমেই fb থেকে খুব পরিচিত আর হাতে গুনা কয়েকজন ইসলামিক ভাইয়াদের বাদ দিয়ে বাকি সব male id ডিলেট করে দিলাম। আগে fb ব্যবহার করতাম চ্যাট করতে কিন্তু এবার ইসলাম জানার কাজে লাগালাম। প্র্যাক্টেসিং বোনদের খুঁজে খুঁজে এ্যাড করা শুরু করলাম। Authentic কয়েকটি ইসলামিক fb পেইজের নাম জোগার করলাম সিহিন্তার থেকে। সেসব পেইজের পোস্ট রেগুলার পড়তাম। সিহিন্তার থেকে বই এনেও পড়তাম। বাসায় সিহিন্তার ইসলামিক বই গুলো সব খুঁজে বের করলাম। আরো বেশি জ্ঞান অর্জনের দিকে মনোযোগ দিলাম। নিজেকে অনেকটাই বদলে ফেললাম। আর তখনই আমার জীবনের আরেকটি বড় ঘটনার সূচনা হলো! আমার ফেন্ড লিস্টে একজন ছিলেন, যাকে ইসলামিক পোস্টের জন্য এ্যাড করেছিলাম আরো আগে। তবে কথা হতোনা তার সাথে। সেই ছেলে আমার স্ট্যাটাস পড়ে যখন জানতে পারলো আমি রিভার্টেড মুসলিম, সে আমাকে ম্যাসেজে একজন বয়ষ্ক মহিলার id দিলো এ্যাড করার জন্য। এবং বললো যে আমার ইসলাম পালনে সমস্যা হলে ওই মহিলার সাথে আলাপ করতে। এ্যাড করলাম উনাকে। উনার নাম ফয়জুন নাহার। খুব ভালো লাগতো উনার সাথে কথা বলতে। উনার কাছ থেকেই জানতে পারলাম উনি সৌদি আরবে থাকেন। যদিও তিনি ইউসুফের আপন মা না তবে ইউসুফ তাকে আপন মার মতোই দেখেন। তিনিও ইউসুফকে তার ছেলের মতো দেখেন। তিনি আমার থেকে আমার বাসার অবস্থা,আমার অবস্থা ইত্যাদি জেনে নিলেন ও বললেন যে তিনি আমার জন্য ছেলে দেখবেন। প্রায়ই উনার সাথে চ্যাটে কথা হতে লাগলো। আমিও আপন ভেবে উনার সাথে আমার সকল সমস্যা নিয়ে আলাপ করতাম। একদিন উনি আমার জন্য একটি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলেন....
ফয়জুন নাহার আন্টির সাথে আমার সম্পর্ক খুব ভালো ছিলো। অনেক কথাই তার সাথে শেয়ার করতাম। তো একদিন উনি আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলেন। উনি ছেলের বর্ণনা দিতে লাগলেন। কী রকম ইসলামিক মাইন্ডের,পরিবার কেমন ইত্যাদি। কিন্তু যতবার প্রশ্ন করতাম ছেলে কী করে, নাম কি, উনি কথা এড়িয়ে যেতেন। তখনই আমি সন্দেহ করি উনি ইউসুফ হোসেনের কথাই বলছে। কারণ উনি কী করেন আমি জানি। আমি উনার কথা শুনছিলাম আর হাসছিলাম মনে মনে। ইউসুফ হোসেন কেন আমাকে উনাকে এ্যাড করার জন্য ম্যাসেজ দিয়েছিলেন তা পরিষ্কার হয়ে গেলো। সেদিন উনার pc তে সমস্যা থাকায় বেশি কথা হয়নি। পরেরদিন উনি জানান যে তিনি ইউসুফের কথাই বলছিলেন। আমি আমার বিয়ের পাত্র খোঁজার দ্বায়িত্ব অপু ভাইয়াকে দিয়েছিলাম। সুতরাং আমি উনাকে বললাম ইউসুফকে বলতে উনি যেনো অপু ভাইয়ার সাথে কথা বলেন। ভাইয়ার পছন্দ হলে এরপর আমি কথা বলবো। ইউসুফ জানতোনা শরীফ আবু হায়াত আমার দুলাভাই,জানার পর তো উনি মহা খুশি। ভাইয়ার ফোন নাম্বার দিয়েছিলাম আমি ফয়জুন নাহার আন্টির কাছে। ইউসুফ ভাইয়ার সাথে কথা বলে দেখা করলেন। ভাইয়া উনাকে খুব পছন্দ করলেন। কথায় কথায় বের হয়ে গেলো উনার ছোট বেলার বন্ধু আমার চাচাতো বোনের হাসবেন্ড। ভাইয়া আমাদের সামনাসামনি দেখা করতে বললেন। এক সপ্তাহ পর ভাইয়ার বাসায় দেখা করবো ঠিক হলো। এই এক সপ্তাহে আমি ফয়জুন নাহার আন্টির কাছ থেকে উনার সম্পর্কে মোটামুটি যা জানার জেনে নিলাম। উনার মা আর বোনও আমার ছবি ও বায়োডাটা দেখে পছন্দ করলেন।
এক সপ্তাহ পর শুক্রবার জুম্মার সালাতের পর উনি আসলেন আপুর বাসায়। সাথে আমার চাচাতো বোন ও তার হাসবেন্ডও আসলো। আমার জন্য একটা বই "আদর্শ নারী" ও চকলেট নিয়ে এসেছিলেন। যখন সামনে গেলাম কথা বলতে, উনি আমাকে প্রথম প্রশ্ন করেছিলো যে আমার দৃষ্টিতে বিয়ে মানে কী! আমার মাথা তখন পুরাই ব্ল্যাঙ্ক। কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে ছিলাম। আমি অনেক বেশি ইমোশনাল তা উনি আন্টির থেকে জানতে পেরেছিলেন। এরপর আমাকে ইমোশন নিয়ে কিছু লেকচার দিলেন। আমি মাথা নাড়ানো ছাড়া আর কিছুই বলিনি। এমনকি উনাকে একটা প্রশ্নও করিনি। আমার যা জানার ছিলো তা তো আগেই আন্টির থেকে জেনে নিয়েছিলাম,তাছাড় া কেনো জানি মুখে কোনো প্রশ্নও আসছিলোনা। যাই হোক আমি প্রশ্ন না করাতে উনি মনে কষ্ট পেলেন। উনার ধারণা হলো যে আমার উনাকে পছন্দ হয়নি। মন খারাপ হয়ে গেছিলো উনার। দুপুরে সিহিন্তার বাসায় খেয়ে উনারা চলে গেলেন। বিকালে অপু ভাইয়া আমাদের দুজনকেই কল করে জানতে চাইলেন আমাদের কী মত। আমরা জানালাম যে আমরা রাজি আছি। এপর্যন্ত সব ঠিক মতোই এগিয়েছে। এখন আসল পরীক্ষা শুরু। তা হলো আমার মাকে রাজি করানো! মাকে জানানোর দায়িত্য অপু ভাইয়া আর সিহিন্তা নিলো। টেনশনে আমার খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো। মুসলিম হবার পর থেকে যে পরীক্ষা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম সেই পরীক্ষার দিন এখন সামনেই। দুআ করতে লাগলাম মা বাবা যেন রাজি হয়ে যায় আর আমার বিয়েতে যেন হাসি মুখে উপস্থিত থাকেন। ইউসুফ আর আমি রাজি,ওর পরিবার রাজি,এখন আমার বাসায় জানানোর পালা। অপু ভাইয়া একদিন উনার বাসায় মা আর বাবাকে যেতে বললেন। মা বাবা যাওয়ার পর সন্ধ্যায় সিহিন্তা আর ভাইয়া উনাদের জানালেন ইউসুফের কথা। মা তো শুনেই না করে দিলো। মুসলাম ছেলের সাথে উনি কিছুতেই আমার বিয়ে দিবেন না। রাগ করেই সিহিন্তার বাসা থেকে চলে আসলো। এদিকে আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। মা বাবা যে রাজি হবেনা তা তো ভালো মতোই জানতাম। এখন বাসায় এসে আমাকে ইসলাম গ্রহনের কথা জিজ্ঞেস করলে কি বলবো,কি করবো এসব ভাবছিলাম। আর দুআ করছিলাম বার বার আল্লাহ যেন সব সহজ করে দেন। আমি চাই মা বাবা বিয়েতে রাজি হয়ে খুশি মনে উপস্থিত থাকুক। তাদের না জানিয়ে বিয়ে করতে চাইনি কখনোই।
মা বাসায় আসার পর প্রথমে শান্ত ছিলেন। আমাকে ডেকে বললেন ভাইয়া আমার জন্য উনার মতো ইসলামিক দাড়িআলা ছেলে ঠিক করেছেন। আমিও কি দাড়ি আলা ছেলে বিয়ে করতে চাই? আমি শুধু বলেছি যে ভাইয়া যদি ঠিক করেন তবে ভালো ছেলেই হবে। তখন আর মার বুঝতে বাকি নাই আমিও মুসলিম হয়ে গেছি। এরপরের প্রতিক্রিয়া হলো ভয়ংকর। অনেক রাগারাগি করলেন,কান্নাকাট ি করলেন,বারবার ইমোশনাল্লি বুঝাতে লাগলেন। আমি পাথর হয়ে দাড়িয়ে ছিলাম। একটা টু শব্দও আর করিনি। এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলিনি। মার কোন প্রশ্নের জবাব দেইনি। মাথা নীচু করে শুনে যাচ্ছিলাম সব। মা পাগলের মতো করছিলেন। একটু পর পর আমার রুমে এসে বকে যেতেন। একবার এসে মোবাইল নিয়ে গেলেন, হাতে যা টাকা ছিলো নিয়ে গেলেন। পরে আবার এসে মোবাইল ফেরত দিয়ে গেলেন। রুমের দরজা আটকাতে নিষেধ করে গেলেন।
ইসলামে আসার কাহিনী ১
তখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। নতুন ভার্সিটিতে উঠেছি,অন্য রকম এক অনুভূতি! নিজেকে অনেক বড় বড় লাগা শুরু হলো।ইন্টারের স্টুডেন্টদেরও মন হতো বাচ্চা! ভর্তি হয়েছি প্রাণরসায়নে,পছন্দের বিষয়। খুব আগ্রহ নিয়ে ক্লাস করতাম। ওভার স্মার্ট ছিলাম না কখনোই তবে ফ্যাশনেবল ছিলাম। চুল স্টাইল করে কাটা থাকতো। ড্রেসের সাথে ম্যাচিং কানের দুল,মাথার ক্লিপ পরতাম। নেল পলিশ দেয়া আমার খুব প্রিয় ছিল। ক্লাসে ছেলে মেয়ে সবাইকে তুই করে বলতাম। কারণ তুই এর সম্পর্ককে অন্যদিকে নেয়া এতো সোজা না যতোটা তুমি এর সম্পর্ককে অন্য কিছুতে কনভার্ট করা সোজা।ক্লাসে আমি আর একটা ছেলে মাত্র খ্রীস্টান ছিলাম।ধর্ম নিয়ে আমার তেমন মাথা ব্যথা ছিলনা। মাঝে মাঝে চার্চেও যেতাম, রেগুলার না। ভার্সিটিতে আমাদের ক্লাসেরই এক ছেলে একদিন হটাত আমাকে ইসলামের উপর একটা বই পড়তে দেয়।মওলানা তারিক জামিলের একটি ঊর্দু বই এর বাংলা ট্রান্সলেশন ছিল ওটা। আমি বইটা বাসায় আনি কিন্তু দুই তিন পাতার বেশি পড়িনি।এমনি ফেলে রেখেছিলাম বইটা। তখনো জানতাম না যে আমার বোন অলরেডি ইসলামের দিকে হাটা শুরু করেছে। ওকে দেখতাম বাইবেল পড়তো,বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করতো। তবে এগুলা নিছক আগ্রহ হিসেবেই দেখতাম। বইটা আমি পড়িনি কিন্তু সিহিন্তা ঠিকই পড়েছে। এবং ওই বইটা পড়ে ওর সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে ধারনা জন্মে এবং ওকে ইসলামের দিকে আরো আগ্রহী করে তোলে। সম্ভবত আল্লাহ বইটা ওর হাতে পৌছানোর জন্যই আমার মাধ্যমে ব্যবস্থা করেন। আমার জীবনে ওই বইএর কয়েক পাতা পড়া দিয়েই ইসলামের সূচনা হয় আলহামদুলিল্লাহ!
আমার বোন প্রায়ই বলতো যে একটা না একটা ধর্ম তো সত্যি হবেই। সব ধর্ম তো একসাথে সত্যি হতে পারেনা। আমি জানতাম ও বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করছে। বাসায় অনেক বই দেখতাম। বাংলা কুরআন ছিলো,বুখারী শরীফ ছিলো,আরো অনেক বই ওকে কিনতে দেখেছি। আমি ক্লাস, পড়া, টিউশনি নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। এসব বই কোনোটাই পড়ে দেখতাম না। ও পড়তো আর আমাকে বলতো যে ইসলাম ধর্মই সত্য। আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা।কুরআনের কিছু মিরাকেল এর কথা বলতো। ও যা যা জানতে পারতো অনেক কিছুই আমার সাথে আলোচনা করতো। আমি জানতাম সিহিন্তা আমাকে মিথ্যা বলবেনা এবং ও যদি বলে কিছু একটা সত্য তাহলে অবশ্যই জেনে শুনেই বলবে। তাই ও যা বলতো তাই এক বাক্যে মেনে নিতাম। যেহেতু খ্রীস্টান ধর্মের প্রতিও আমার খুব একটা আগ্রহ ছিলোনা তাই আমি প্রশ্নও কম করতাম। আমিও মেনে নিলাম আল্লাহই সত্য এবং একমাত্র তার কাছেই দুআ করতে হবে। তবে তখনো আমি সত্যিকার অর্থে ইসলাম কি, রাসূল (সা) এর সুন্নত, কি কি করা যাবে, কি করা যাবেনা, কেনো যাবেনা, কবীরা গুনাহ কোনগুলা ভালো মতো জানতামও না। শুধু মেনে নিলাম আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ! আমরা আসলে আমাদের আসে পাশের মানুষকে দেখে ইসলাম কি শিখতে পারিনা। আমার কিন্তু মুসলিম ফ্রেন্ডই বেশি ছিলো। কিন্তু আমি আল্লাহ বা ইসলাম সম্পর্কে ওদের থেকে কখনো কোনো ধারনা পাইনি। ওরা পুরাপুরি ইসলাম না মানলেও আল্লাহকে যে অনেক ভালোবাসতো তা ঠিকই বুঝতে পারতাম।
আমি ও আমার বোন একসাথে পড়াশোনা করতাম। কয়েকদিন ধরে দেখছিলাম ওর পড়ার ভঙ্গিটা খুব অদ্ভুত। একদম সোজা হয়ে বসে কোলের উপর বই রেখে বির বির করে পড়তে থাকতো। ওর এই পড়ার স্টাইল নিয়ে আমি ফান করতাম ওর সাথে। ততোদিনে আল্লাহ যে সত্যি এবং ইসলামই যে আসল ধর্ম তা পুরাপুরি বিশ্বাস করতাম আমরা দুজন। সিহিন্তা বিভিন্ন বই পড়ে আরো অনেক যুক্তি দেখাতো। যদিও আমি নিজে তেমন বই পড়তাম না। ও যা বলতো তাই মানতাম। এখন বিশ্বাস তো করলাম,কিন্তু মুসলিম হবার প্রথম ধাপ সালাত আদায় করা, যেহেতু আমরা মুসলিম আমাদেরও সালাত আদায় করতে হবে কিন্তু আমরা তো আরবি জানিনা। কারো থেকে যে শিখবো সে উপায়ও নাই। তখন ইন্টারনেটে একটা ওয়েব সাইটের কথা জানলাম সিহিন্তার থেকে। .মাউন্টহিরা! সেখান থেকে সুরা শিখা যায় সহজে। সময় পেলে হেডফোনে ওই পেইজ থেকে সূরা শিখতে লাগলাম। যেহেতু তখন ধারনা ছিলোনা,আমি আয়াতুল কুরসি প্রথমে শিখা শুরু করলাম। এটাকেই নামাযের সূরা ভেবেছিলাম।যখন প্রায় অর্ধেক শিখেছি তখন সিহিন্তা বললো এটা না আগে সূরা ফাতিহা শিখতে! এতো কষ্ট করে এতোখানি শিখলাম এখন বলে এটা না!! আয়াতুল কুর্সি বাদ দিয়ে এবার শুরু করলাম সূরা ফাতিহা শিখা। দিনেবেলা যেহেতু আমার ক্লাস,টিউশনি ইত্যাদি থাকতো তাই রাত ছাড়া আমার সময় ছিলনা শিখার্। কিন্তু রাতে সবাই বাসায় থাকে। তাই সবাই ঘুমায় যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। ঘুমায় গেলে পিসিতে সূরা নিয়ে বসতাম। ফলে ধীরে ধীরে আগাতে লাগলো। এদিকে সিহিন্তার কতোদূর আগালো আমি জানিনা।
একদিন আবার ওর পড়ার স্টাইল নিয়ে হাসছিলাম তখন সে বললো সে এভাবে আসলে ইশারায় সালাত পড়ে! আমি সূরা শিখা শুরু করার আগেই তার সব শিখা শেষ এবং সালাতের পদ্ধতি ও দুআ ও শিখা শেষ! এবং সে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ছাড়াও তাহাজ্জুতের সালাতও পড়ে!! আমি সূরা শিখা শুরু ঠিকই করেছিলাম কিন্তু স্ট্রং ঈমান তখনও ছিলোনা। কিন্তু সিহিন্তার প্রগ্রেস থেকে বুঝলাম ও ইসলামের ব্যপারে আসলে কতোটা সিরিয়াস। নামায পড়া শিখতে আমার অনেক সময় লেগেছে। যেহেতু আমি খুব বেশি কিছু জানতাম না ইসলামের ব্যপারে,তাই খুব বেশি আগ্রহ দিয়ে শিখতামও না। কিন্তু আমার বোন নামায পড়ে আমি পড়িনা,কেমন জানি লাগতো। এক সময় আমিও নামাযের জন্য প্রয়োজনীয় সূরা,দুআ শিখে ফেল্লাম। সারাদিন বাসায় কেও না কেও থাকে। লুকিয়ে নামায পড়ার উপায় নাই। তাই প্রায়ই দেখা যেতো সবাই ঘুমায় গেলে রাতের বেলা পাঁচ ওয়াক্তের নামায এক সাথে পড়তে হতো। তাও আবার ইশারায়। কারন রুমের দরজা খোলা থাকে,কেও বাথরুমে যেতে উঠলে নামায পড়তে দেখে ফেলতে পারে। কতোদিন এমন হয়েছে যে নামায পড়তে থাকতাম রাতে,কেও রুমে ঢুকতো আর লাফায় উঠে বই পড়ার ভান করতে থাকতাম। আমি রাতে পড়ি সব সময়,তাই কেও সন্দেহ করেনি। তাছাড়া ঘুমের ঘোরে থাকতো তাই খেয়ালও করতো না।
আমার নখ বড় ছিলো। আগেই বলেছিলাম নেইল পালিশের হবি ছিলো আমার্। ওজু হবেনা তাই নখ কেটে ফেললাম। সবাইকে বললাম সামনে ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা,নখের পিছে সময় নষ্ট হয় অনেক তাই কেটে ফেলেছি। পরীক্ষার পর আবার রাখবো। তবে পরীক্ষার পর আর রাখিনি।তখন কেও কিছু বললে বলতাম মনে থাকেনা,ভুলে দাঁত দিয়ে নখ কেটে ফেলি!মজার ব্যপার হচ্ছে নামায পড়তাম,সখের নখ কেটে ফেললাম কিন্তু তখনো আমি কুরআন পড়িনি,তেমন হাদিস জানতাম না। রাসূল (সা) সম্পর্কে ভালো ধারনাও ছিলোনা। ততটুকুই জানতাম যা সিহিন্তা বলতো। ও বার বার না বললে মনেহয়না নামায,ওজু এগুলাও এতো তারাতারি শিখা হতো না। আমরা দুই বোন ছোট বেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছি। একজন আরেকজনের উপর অন্ধ বিশ্বাস করতাম,এখনো করি। ও যা বলতো তার সত্যতা নিয়ে তাই মাথায় কখনো প্রশ্ন আসতোনা। তাই আল্লাহ যে সত্য,ইসলামই যে আসল ধর্ম মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম। হিজাব কেনো করতে হবে,পর্দা না করার কুফল কি,কেনো চুল ঢাকতে হবে এগুলা সবই বুঝতাম সিহিন্তার বদৌলতে।
সিহিন্তাক ে দেখতাম বাসা থেকে নরমালি বের হতো,বাসা থেকে কিছুদূর গিয়ে মাথায় কাপর দিতো। আর ফুল হাতা কামিজ পরতো। আমিও থ্রি কোয়ার্টার হাতা বা ফুল হাতা জামা পরতাম। কিন্তু মাথায় কাপর দেয়ার ক্ষেত্রে শয়তান আমাকে আটকে ফেললো। আমি গরম সহ্য করতে পারতাম না। বেশি গরমে থাকলে অসুস্থ্য হয়ে যাই। ক্লাসে মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার রেকর্ডও আছে আমার্।ফলে মাথায় কাপর দেয়াটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো আমার জন্য। কয়েকদিন চেষ্টাও করেছি কিন্তু গলা মাথা ঢেকে বেশিক্ষন থাকতেই পারতাম না। মাথা ব্যথা করতো নাহলে মাথা ঘুরাতো। তাই মাথায় কাপর দেয়া এক রকম ছেড়েই দিলাম। তবে আগের মতো ফ্যাশন করে চুল কাটা, ম্যাচিং চুরি, কানের দুল পরা,ইত্যাদি ছেড়ে দিলাম। মাথায় কাপর দেয়ার ব্যপারে যে শয়তান আমাকে আটকিয়ে দিলো তা তখন এতো ভালোভাবে উপলব্ধি করিনি। এভাবেই কাটতে লাগলো দিন।
তবে অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেছে ততোদিনে। নামায পড়তাম গুরুত্য নিয়ে। হিজাব করতেও চেষ্টা করতাম। সবই ছিল সিহিন্তার থেকে শিখা। আমি নিজে ইসলাম নিয়ে স্টাডি করা বলতে যা বুঝায় তা তেমন করতাম না। এরই মাঝে এসে পরলো পবিত্র রমাদান মাস! লুকিয়ে রোজা রাখাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। একই বাসায় থেকেও না খেয়ে থাকা এবং তা কাওকে বুঝতে দেয়াও যাবেনা! কিন্তু তাই বলে কি আর রোজা রাখবোনা? শুরু হলো আরেক নতুন যুদ্ধ! সবার সাথে থাকবো,রোজা রাখবো আবার তা বাকিদের বুঝতে দেয়া যাবেনা। নি:সন্দেহে কঠিন কাজ। তবুও এটা মুসলিম হবার পর প্রথম রমাদান মাস! রোজা রাখবোনা ভাবাই যায়না! প্রথম সমস্যা হলো সেহেরি করা নিয়ে। রান্নাঘরে যেতে হয় মা-পাপার রুমের মধ্যদিয়ে। সুতরাং ভাত তরকারি পাবার কোনো আশা নাই। পাউরুটি কিনে রাখলাম আমরা রুমে। রাতে সেহেরি তো হবে। এতেই আমরা খুশি। সকালে এমনিতেও আমি নাস্তা না করে ক্লাসে যাই। তাই সকালের ব্যপারে চিন্তা নাই। তাছাড়া মা চাকরী করে।বাসায় মা পাপা কেও থাকেনা সারাদিন। খেয়েছি কিনা দুপুরে দেখার কেও নাই। আর ভাই বাসায় থাকে কিন্তু ও খেয়ালও করবেনা না খেলে।
তো শুরু হলো রোজা রাখা। প্রথম রোজা রাখার অনুভূতি যে কি দারুন ছিলো,কখনোই ভুলবোনা। শুক্রবার মা পাপা বাসায় থাকতো,তাই ওইদিন রোজা রাখতে পারতাম না। দেখা যেতো সারাদিন রোজা রেখেছি,বিকালে টিউশনি করে আসার সময় নানীর বাসায় গেছি দেখা করতে,নানী চা এনে দিলো। খাবোনা বলতে পারিনা কারন নানীর চা অনেক মজার হয় ও আমার প্রিয় সে জানে। কষ্ট করে রোজা রেখে তা ভেঙ্গে ফেলতে হতো। কারো বাসায় যাওয়াই ছেড়ে দিলাম রমাদানে। সেহেরি যে রোজ করতে পারতাম তাও না। যেদিন কিছু থাকতোনা পানি খেয়ে রোজা রাখতাম। রাতে লাইট জ্বালানো যাবেনা তাই পিসির মনিটরের আলোতে আমরা সেহেরি করতাম। একদিন আমরা বনরুটি খাচ্ছি এমন সময় মা রুমে প্রবেশ করলো। সিহিন্তা পিসির সামনেই ছিলো। কি করবে বুঝতে না পেরে মনিটর বন্ধ করে দিলো! আর আমরা খাবার লুকায় ফেললাম। মা কি বুঝলো জানিনা। তেমন প্রশ্ন করেনি। ইফতারিতে খুব একটা সমস্যা হতোনা।ইফতারির আগে রাস্তায় জ্যাম থাকে বলে মা ইফতারির সময় অফিস থেকে বের হতো। তাই ইফতারিতে ভাত খেতে পারতাম। কিন্তু যেদিন আগে বের হতো অফিস থেকে সেদিন ইফতারি আর করা হতোনা। দুপুরে সিহিন্তা ইচ্ছা করে কম ভাত রাধতো যাতে হাড়ি দেখে মা ভাবে আমরা খেয়েছি তাই এতো অল্প ভাত রয়েছে। তখন দিন বড় ছিলো। তবুও রোজা রাখছি এই আনন্দের কাছে না খাওয়ার কষ্ট কষ্টই মনে হতোনা। রাতে একসাথে পাঁচ ওয়াক্তের সালাত পড়তাম,পানি বা পাইরুটি দিয়ে সেহেরি করতাম,ইফতারি পারলে করতান না পারলে পানি খেয়ে রোজা ভাংতাম। তাও সেই রমাদান মাসটা অনেক স্পেশাল ছিলো আমাদের জন্য। একেকটা রোজা রাখতাম আর অন্য এক ধরনের শান্তি অনুভব করতাম মনের মধ্যে! আলহামদুলিল্লাহ!! কিছু ছোট ছোট ঘটনা উল্লেখ করবো। সম্ভবত এই ঘটনা গুলো বাসায় সন্দেহ জাগাতে সাহায্য করে।
আমার বোন খ্রীস্টান ধর্মের ব্যপারে জানার জন্য গ্রানীকে প্রশ্ন করেছিলো কিছু যার উত্তর গ্র্যানী (নানী) দিতে পারেনি। আবার আমার এক দূর সম্পর্কের এক মামা জিহবায় বিশ্বাসি ছিলো। জীহবা হচ্ছে খ্রীস্টানদেরই একটা অংশ যারা বিশ্বাস করে দুনিয়াতেই সবার বিচার হবে,যে ভালো ভাবে চলবে সে ভালো ফল পাবে,যে খারাপ ভাবে চলবে দুনিয়াতেই তার শাস্তি সে পেয়ে যাবে। তারা খ্রীস্টান ধর্মের যে প্রচলিত ভুলগুলো আছে তা বাইবেল থেকে বের করে আলাপ করে কিন্তু এরপর যে আরেক নবী এসেছে ও আল্লাহ যে আখিরাতে বিচার করবেন তা বিশ্বাস করেনা। তো সেই মামা একদিন খ্রীস্টান ধর্মের ভুল গুলো আমার খালার সামনে বলছিলো। আমার বোন তখন সাথে তার কথাকে সাপোর্ট করে এটা নিয়ে পরে খালা মা,নানীর কাছে নিন্দা করে কথা বলে।
তখন ওয়েলকাম টুন নতুন নতুন চালু হয়েছে। আমার বোন মাইকেল জ্যাকসনের peace গানটা ওয়েলকাম টুনে দেয়। গান একটু হলেই কল রিসিভ করে ফেলতো তাই মা ধরতে পারেনি এটা ইসলামিক গান। কিন্তু আমার মামা একদিন সিহিন্তাকে কল করে পুরাটা শুনে এবং মাকে জানায় যে ও ইসলামিক গান দিয়ে রেখেছে। মা রাগারাগি করে তখনই ওকে দিয়ে গানটা ডিলেট করায়। আমি একটা ডায়রিতে কিছু সূরা আর দুআ লিখে রেখেছিলাম পরে মুখস্ত করবো বলে। কিন্তু ওটাও কিভাবে জানি মার হাতে পরে। মা কেন
আমার রুমে ঢুকে আমার ডায়রি বের করে জানিনা। কিন্তু ওটা পড়ে ফেলার পর অনেক রাগারাগি করে। ওটা ছুড়ে বাইরে ফেলে দেয়। আমি তখন ক্লাসে ছিলাম। সিহিন্তা কল করে আমাকে জানায়। বাসায় আসতেও ভয় পাচ্ছিলাম। এবং বাসায় এসে অনেক বকা খাই ওটার জন্য। তাছাড়া আমাদের ফুলহাতা কাপর পরা, চার্চে যেতে না চাওয়া, আমাদের আচরণে, কথা বার্তায় পরিবর্তন ইত্যাদির কারনেও মার মনে সন্দেহ জাগতে থাকে।তবে তখনো সে বুঝেনি যে আমরা ততদিনে মুসলিম হয়ে গেছি। সিহিন্তাকেই সবাই বেশি সন্দেহ করতো। আমার ব্যপার তখনো তারা ধরতে পারেনি কারণ আমি তখনও ওর মতো জ্ঞান অর্জন করতে পারিনি ফলে ইসলামের ব্যপারে কথাই বলতাম না।
এরপর থেকে আমরা আরো সাবধান হয়ে যাই। সিহিন্তা ইসলামিক বই গুলো,যেমন কুরআনের অনুবাদ গুলো,বুখারী শরীফ ইত্যাদি বই এর উপর মলাট লাগিয়ে রাখতো যাতে কেও না বুঝে। দুআ বা সূরা লেখা শিট গুলো ভার্সিটির লেকচার শিটের মাঝে রাখতাম যাতে কেও খুলে না দেখে। ইসলাম চর্চা থেমে থাকেনি কোনো কারণেও আলহামদুলিল্লাহ। ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে বই পড়ার পাশাপাশি ইন্টারনেট ও পিস টিভি থেকে অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারি আমরা। বই এর ক্ষেত্রে মরিস বুখাইলির বাইবেল,কুরআন ও বিজ্ঞান বইটার কথা আমার বেশি মনে আছে। বইটা থেকে কুরআনের মিরাকাল সম্পর্কে একটা ধারনা পাই। কিছু বিদা'তি বইও আমরা পড়েছিলাম তবে আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ পথভ্রষ্ট হতে দেয়নি। সিহিন্তা পিস টিভিতে ইউসুফ এসটেস, হুসেইন য়ে, আসিম আলহাকিম, জাকির নায়েক এদের লেকচার রেগুলার দেখতো। আমি বিকালের আগে ফ্রি হতে পারতাম না তাই পিস টিভি দেখার সুজোগ পেতাম না খুব একটা। আমার ভাই একদিন মাকে বলে দিয়েছিলো যে সিহিন্তা পিস টিভি দেখে। এরপর থেকে বাসায় কেও থাকলে ও-ও পিস টিভিতে লেকচার দেখতে পারতোনা। অনেক বেশি সাবধানে থাকতে হতো।
আমরা youtube এ বাবা আলী ও ইউসুফ এস্টেস এর লেকচার দেখতাম। ইউসুফ এস্টেসের ইসলামে আসার কাহিনী অনেক ইনফ্লুয়েন্স করে আমাকে। উনার প্রতিটা লেকচার খুব খুব ভালো লাগতো। বাবা আলীর লেকচারও তখন খুব ভালো লাগতো,মজা পেতাম দেখে। যদিও এখন আর আগের মতো ভালোলাগেনা। তবে অনেক কিছুই যে জানতে পারি এখান থেকে এতে সন্দেহ নাই। সিহিন্তা নেট থেকে সার্চ দিয়ে ইউসুফ এস্টেসের ইসলাম টুমরো ওয়েবসাইট টা পেয়েছিলো। ওটা ও রেগুলার ব্রাউজ করতো। ওখান থেকেই ও ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটির সন্ধান পায়। এরাবিক রিডিং রাইটিং এর কোর্সটাতে এনরোলও করেছিলো। এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে ইসলাম চর্চা চলতে লাগলো। সিহিন্তার প্রতি সবার সন্দেহ ছিলো। তাই আমার চেয়ে বেশি ওকে সাবধানে চলতে হতো। তখন সুজোগ ছিলোনা কিন্তু ইসলাম চর্চা থেমে থাকেনি। আর এখন এতো সুজোগ তাও আগের মতো পড়িনা বা লেকচার শুনিনা। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিক। লিখতে গিয়ে আবার সেই ঈমানের স্বাদ পেতে ইচ্ছা করছে। কতো কষ্ট করেছি তাও কতো মানসিক শান্তি ছিলো,অন্য রকম এক ভালোলাগা যা লিখে বুঝানো যাবেনা! আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের বাবার জন্ম মুসলিম পরিবারে হলেও অন্যান্য সাধারন মুসলিম নামধারী তরুনদের মত তিনিও সেকুলার ছিলেন।ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবে কোন ধর্মই মানতেন না উনি। "বরং যার যার ধর্ম তার তার" এ বিশ্বাসী ছিলেন (আলহামদুলিল্লাহ আমরা মুসলিম হবার অনেক পরে বাবাও তাওবা করে ইসলাম গ্রহন করেন এবং এখন তিনি একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম)।
বাবা প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন আমার খ্রিস্টান মাকে। ফলে আমারা জন্মের পর থেকে খ্রিস্টান হিসেবে বেড়ে উঠি আমাদের খ্রিস্টান আত্বিয়দের সাথে। মুসলিম আত্বিয়দের সাথে তেমন যোগাযোগ ছিলনা।হয়তো ঈদে দাদীমার বাসায় যেতাম। এছাড়া সারা বছরে দেখাও হতোনা। বাবাও ইসলাম সম্পর্কে আমাদের সাথে আলাপ করতেন না। সিহিন্তা দাদীর বাসার কাছে এক কোচিং এ পড়াতো। ও দাদীর বাসায় যাওয়া শুরু করলো ইসলাম সম্পর্কে আরো জানতে। দাদীর থেকে কিছু বই আনে ও যেগুলা বিদ'আত আর বানোয়াট কাহিনীতে ভরা। তবুও ও খুব আগ্রহ নিয়ে বইগুলো পড়তো। আমি যে মুসলিম হয়েছি তা দাদী জানতোনা তবে তিনি সিহিন্তার ইসলামের আসার কথা শুনে খুব খুশি হন।দাদীর একটা ব্যপার আমার খুব ভালো লাগতো। উনি অনেক অসুস্থ্য ছিলেন। কিডনি প্রায় ৯০% ড্যামেজ। হার্টে ৪/৫টা ব্লক ধরা পরে। বিছানা থেকে উঠতে পারতেন না। তাও উনি সালাত বাদ দিতেন না।
সিহিন্তা দাদীর সাথে সময় কাটাতো জেনে মা খুশিই হয়। অসুস্থ্য দাদীর সাথে নাতী নাতনিরা দেখা করতে গেলে উনার ভালো লাগবে জানতেন। তাই মা কিছু বলতেন না।অবশ্য মা কখনো বাবার পরিবারের সাথে মিশতে বাধা দিতনা। তারা যে আমাদের মুসলিম বানাতে চেষ্টা করবেনা তা মা জানতো। কিন্তু বাবা খ্রীস্টান বিয়ে করাতে এবং আমরা খ্রীস্টান থাকাতে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। উনারা কেও আসতোনা তেমন আমাদের বাসায়,আমরাও যেতাম না। সবাই নিজেদের জীবন নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। আমরা আমাদের খ্রীস্টান আত্মিয়দের সাথেই সব সময় মিশতাম। সিহিন্তা দাদীর থেকে বই আনতো,দাদীর সাথে গল্প করতো,আমিও মাঝে মাঝে যেতাম। এভাবেই দিন চলতে লাগলো। আমরা কোনো নির্দিষ্ট মানুষের কাছ থেকে ইসলাম শিখিনি। আমরা নিজেরাই বই সংগ্রহ করে,পিস টিভি দেখে,নেট থেকে ইসলাম শিক্ষা পাই। একমাত্র আল্লাহই আমাদের গাইড করেছেন। ফলে আমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাইনি আলহামদুলিল্লাহ। বই ও পিস টিভি ছাড়াও আমরা ইসলামিক ফোরাম, islamqa, islamhouse, islami online university ইত্যাদে ওয়েব সাইডে রেগুলার ব্রাউজ করতাম। নেটে ব্রাউজ করতে গিয়ে শিয়া ও অন্যান্য ইসলাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা সৃষ্টিকারী ওয়েব সাইটের পোস্টও আমরা রেগুলার পড়তাম। কিন্তু পরে যখন বুঝতে পারলাম এসব ওয়েবসাইট authentic না তখন সেসব পড়া বাদ দিয়ে দিলাম।
আল্লাহ নিজে আমাদের গাইড করার কারনে প্রথম থেকেই আমরা সঠিক ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করতে পারি। প্রথম থেকেই আমরা বুঝেছিলাম যে বাংলাদেশে সঠিক ইসলাম পালন করা হয়না। বাংলাদেশে যে এমনও মানুষ আছে যারা সঠিক ইসলামিক পদ্ধতিতে চলতে চেষ্টা করে সে ধারনাও আমাদের ছিলোনা। আমাদের খ্রীস্টান নামে id ছিল ফেসবুকে।সিহিন্তা একদিন অন্য নাম দিয়ে ফেসবুকে একটা নতুন আইডি খুলে। ওই আইডি দিয়ে ও বিভিন্ন ইসলামিক গ্রুপ সার্চ দিয়ে বের করে ফেসবুকে। তখন fb তে গ্রুপ গুলোতে discussion board খুব চালু ছিলো। তেমন একটা Discussion board থেকে সিহিন্তার আমাদেরই সমবয়সি সোহানা আপুর সাথে পরিচয় হয়। সোহানার পোস্ট পড়ে ও বুঝতে পারে যে সোহানাও সঠিক ইসলাম পালন করে এবং ও বাংলাদেশে,ঢাকাতেই থাকে দেখে খুবই অবাক হয়। সিহিন্তা সোহানাকে fb তে এ্যাড করে। সোহানা ওর কথা জানতে পেরে ওর থেকে ফোন নাম্বার নেয়। একদিন কল করে দেখা করার ব্যবস্থাও করে। আমি দেখা করতে যেতে পারিনি। সিহিন্তা একাই যায় দেখা করতে।বসুন্ধরা সিটির চার তালায় মেয়েদের নামায পড়ার স্থানে ওরা দেখা করে। প্রথমে আমরা বই পড়ে সালাত পড়া,অজু করা শিখেছিলাম। ফলে অনেক ভুল ছিলো আমাদের সালাত আর অজুতে।সেদিন সোহানাই প্রথম সিহিন্তাকে হাতে কলমে সালাত,অজুর সঠিক পদ্ধতি শিখায়। পরবর্তীতে সিহিন্তা নেট থেকে একটি ফ্ল্যাশ নামায় যেটা থেকে সঠিক পদ্ধতিতে নামায পড়ার পদ্ধতি আরো ভালোমতো শিখতে পারি আমরা। সোহানার মাধ্যমে nsu এর আরো কিছু আপুর সাথে আমাদের পরিচয়। তাদের মাধ্যমে ঢাকায় সঙ্গঠিত ইসলামিক কনফারেন্স গুলোর খোঁজ পাই। সেখান থেকেও অনেক আপুর সাথে পরিচয় হয়। [সিহিন্তার কাহিনী আমি লিখতে গেলে অনেক কিছুই বাদ পরে যায়। তাছাড়া ওর সাথে আলাপ করার সময়ও পাচ্ছিনা। ইন শা আল্লাহ এখন থেকে আমার কাহিনীটাই আগে শেষ করবো]
সিহিন্তার সাথে fb থেকেই এক আপুর সাথে পরিচয় হয়। ফারিহা আপু। সেই আপুই আমাদের এনাম আঙ্কেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এনাম আঙ্কেল আমাদের মসজিদে শাহাদা নেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। শারিয়াত অনুযায়ী আসলে শাহাদা নেয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। মুসলিম হতে হলে আল্লাহতালাকে সাক্ষী রেখে একাকী মন থেকে পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে আল্লাহকে একমাত্র প্রকৃত ইলাহ মেনে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসালামকে আল্লার নাবী মেনে সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে আরবীতে কালিমা-এ-শাহাদাহ মুখে উচ্চারণ করলেই হয়ে যায়। সেই মুহুর্ত থেকে সালাত, সিয়াম, হাজ্ব, যাকাত ওই ব্যক্তির উপর ফরয হয়ে যায়, এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেন। মাসজিদে শাহাদাহ নেয়া, গুসল ইত্যাদি হল নিছক আনুষ্ঠানিকতা। আমরা আগেই সেভাবে মুসলিম হয়েছিলাম, তবে গোপনে হওয়ায় অল্প কিছু মানুষ ছাড়া আর কেউ জানতোনা। ফারিয় সিহিন্তাকে বলেছিল আরেক নও-
মুসলিম ভাইয়ের কথা যে হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছিল, আনুষ্ঠানিকভাবে শাহাদাহ না নেয়াতে, কোন সাক্ষী না থাকাতে মারা যাওয়ার পর তাকে হিন্দুদের শশ্বানে পোড়ানো হয়। আর সিহিন্তার ক্ষেত্রে যেহেতু খৃস্টানের সাথে বিয়ের চেষ্টা চলছিল, স্বাধীনভাবে ইসলাম পালন করা অসম্ভব
ছিল... এমন অবস্থায় একটা মুসলিম কমিউনিটির সাথে যুক্ত হওয়াটা জরুরী ছিল।ওর নাম বদলানোরও প্রয়োজন ছিলনা, তারপরও এফিডেবিট করে নাম বদলাতে হয়েছে, কাগজে কলমে প্রমান রাখতে হয়েছে যে ও নিজের ইচ্ছায় মুসলিম হয়েছে - কারো মাধ্যমে ব্রেইনওয়াশের স্বীকার হয়নি। যাই হোক,আমরা কবে মসজিদে যেতে পারবো আঙ্কেলকে জানালাম। মনে আছে ওইদিন আমি প্রথম কামিজের সাথে মাথায় সুন্দর করে হিজাব পরেছিলাম। এনাম আঙ্কেল আর ফারিহা আমাদের গাড়িতে করে নিতে আসলো। আমার গাড়িতে খারাপ লাগে,তারুপর প্রথম হিজাব পরা,গাড়িতে আমার মাথা ঘুরানো শুরু হয়। মুহাম্মদপুর ইকবাল রোডের আল-আমীন মসজিদে আমরা শাহাদা নেই।
মসজিদে অনেক মানুষ এসেছিলো আমাদের শাহাদা উপলক্ষ্যে। আমরা মসজিদের দ্বিতীয় তালায় গিয়ে বসি। আমার মাথা ঘুরাচ্ছিলো তাই প্রথমে একপাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসি। যখন একটু সুস্থ্য হয়ে তাকাই এতো মানুষ দেখে লজ্জা লাগছিলো। সবার মাঝে একটা খুশি খুশি ভাব। শরীফুন্নেসা আন্টি আমাকে আর সিহিন্তাকে আইনে রাসূল বই দেন ও দুটা খিমার উপহার দেন। এরপর ঈমামের সাথে সাথে আমরা কালিমা পড়ি। আলহামদুলিল্লাহ আমরা সবার সামনে ইসলাম গ্রহণ করি!! কেমন যে লাগছিলো বোঝাতে পারবোনা। মুসলিম হবার আনন্দ,বাসায় জানলে কি হবে তার ভয়,সামনের জীবনের কথা ভেবে উদ্বিগ্নতা,আবার অদ্ভূত এক শান্তির অনুভূতি ছিলো মনে।সব মিলিয়ে অন্য রকম মিস্র এক অনুভূতি। কালিমা পড়লাম সবার সামনে,এরপর গোসল করে দুই রাকাত সালাত আদায় করতে হবে। হুমায়রা আন্টি বলেছিলেন উনার বাসায় গিয়ে গোসল করে সালাত পড়ে নিতে। কিন্তু দেরি হয়ে যাবে বলে আমরা বাসায় চলে আসি। এসে দুজন গোসল করে নেই। এরপর একসাথে দুই রাকাত সালাত আদায় করে নেই। সেদিনের কথা কখনোই ভুলবনা। আমার তখনো অনেক জানা বাকি,বুঝা বাকি ইসলাম সম্পর্কে।সিহিন্তার মতো এতো পড়তাম না আমি ইসলাম নিয়ে। জানতাম সবাই জানতে পারলে মুসলিম হবার কথা সামনে অনেক বড় পরীক্ষায় পরতে হবে। অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে। তবুও একবারো মনে হয়নি ভুল ডিসিশন নিয়েছি। আল্লাহর উপর এতো বেশি বিশ্বাস করেছি যে এই কথা কখনো মাথায়ই আসেনি। এখনো মনেহয় যে আল্লাহ যে আমাকে হেদায়েত দিয়েছেন,এজন্য সারা জীবন সেজদায় পরে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিলেও তা কম হবে। ইসলামের স্বাদ যে কি তা,যে পায়নি সে কখনোই বুঝবেনা। সিহিন্তার বিয়ের জন্য তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু হল। ও বিয়ে করতে চাইতোনা বলে ওকে না জানিয়েই পাত্রী দেখানোর ব্যবস্থা করা হতো মাঝে মাঝে। কিন্তু খ্রীস্টান ছেলে তো ওর পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না।
ইসলাম গ্রহণের পর সবচেয়ে কঠিন যে পরীক্ষায় আমাদের পরতে হয়েছে তা হলো মাকে কষ্ট দেয়া। আমরা জানতাম মা অনেক কষ্ট পাবে,ভেঙ্গে পরবে। কিন্তু মাকেও তো আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন,সৃষ্ট জীবকে খুশি করতে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার থেকে তো আমরা দূরে যেতে পারিনা। ইসলামে মা বাবার গুরুত্ব অনেক। তাদের সকল কথা মান্য করতে বলেছেন আল্লাহ। তবে শুধু মাত্র আল্লাহর বিরুদ্ধে যায় বা আল্লাহর আদেশ কে অমান্য করা হবে এমন কথা মানা যাবেনা। তাই মা কষ্ট পাবে জেনেও আমাদের আর কোনো উপায় ছিলনা। প্রচুর মানসিক কষ্টের মধ্যে থাকতাম।যাকে আমরা অনেক ভালোবাসি তাকে এভাবে জেনে শুনে কষ্ট দেয়ার মানসিক যন্ত্রনা যে কি বুঝানো যাবেনা। সত্য একদিন সামনে আসবেই জানতাম কিন্তু সে সত্যর সম্মুখীন হবার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। সিহিন্তাকে এমন অবস্থায় দুজন মানুষ অনেক সাহস ও সাপোর্ট দিয়ে সহায়তা করেন। তারা হলেন রেহনুমা আপু ও তারিন আপু। প্রকৃত দ্বীনি বোনের মতোই এরা সকল কষ্টে পাশে ছিলেন আলহামদুলিল্লাহ!
আমরা শাহাদা নেই ২০০৯ এর জুন মাসের ২১তারিখ,পরের মাসে মানে জুলাই মাসে শরীফুন্নেসা আন্টি তার ছেলে শরীফ আবু হায়াত অপুর জন্য সিহিন্তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। সে মাসেই এনাম আঙ্কেলের সহায়তায় ICD তে অপু ভাইয়া ও সিহিন্তা দেখা করে কথা বলে। সিহিন্তা বিয়ের ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলোনা। মাকে কষ্ট দেয়ার কথা ভেবে খুবই মানসিক চাপ অনুভব করছিলো। তখন এনাম আঙ্কেল, হুমায়রা আন্টি, তারিন আপু, রেহনুমা আপু সিহিন্তাকে মানসিক সাহস ও সাপোর্ট দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সাহায্য করেন
শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
আয়াত মাক্কী আর সূরা ফাতিহা পড়ার নির্দেশ মাদানী (মাযহাবী হানাফি খুরা যক্তি)
আয়াত মাক্কী আর সূরা ফাতিহা পড়ার নির্দেশ মাদানী (মাযহাবী হানাফি খুরা যক্তি)
সালাতে ইমামের
পিছনে সুরা ফাতেহা
পড়া হারাম
নাকি ফরজ ???
"যখন কুরআন
তেলাওয়াত
করা হয়,তোমরা তা
মণযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ
থাকো যাতে তোমাদের উপর রহম করা হয় "(আরাফ-
আয়াতঃ২০৪)
এই
আয়াতের সংগে
সালাতে ইমামের
পিছনে সুরা ফাতেহা
পড়া বা না পড়ার
কোনো সম্পর্ক নেই।
কারণ
এ আয়াত মক্কায়
নাজিল হয়েছে,
আর নামাজে সুরা ফাতেহা পড়ার নির্দেশ হিযরতের পর রাসুল(সঃ) দিয়েছেন মদিনায়।
[ সূরা: Al-A'raaf (The Heights) মক্কায় অবতীর্ণ সূরা নং: ৭ আয়াত সংখ্যা: ২০৬
204
. ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﻭَﺃَﻧﺼِﺘُﻮﺍ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﺮْﺣَﻤُﻮﻥَ
আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়।]
আবু হুরায়রা(রাঃ) ৭ম হিজরীতে মদিনায় মুসলমান
হয়েছেন,
আর তাকেই সর্ব প্রথম মদিনার ওলীতে গোলিতে এ
কথা ঘোষণা দেয়ার
জন্নে রাসুল (সাঃ)
আদেশ করেন, যে ব্যক্তি সালাতে সুরা ফাতেহা পড়েনা তার নামাজ
হবে না।
(বায়হাকী-খন্ডঃ ২-
পৃস্টাঃ৩৭৫)
সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় আছে, ঐ
সময় ১ ব্যক্তি আবু
হুরায়রার হাত ধরে
বলেনঃ আমরা যদি
ইমামের পিছনে থাকি তা ও
কি পড়া লাগবে?
তিনি বলেন তাও.…
রাসুল (সাঃ) বলেনঃ আমি যখন জোড়ে কেরাত পড়ি তখন তোমরা সুরা ফাতেহা ছাড়া আর কিছুই পড়োনা।
(নাসাঈ,সনদ সহিহ)
এই কথার সাক্ষি যিনি দিলেন
তিনি" উবাদা "
তিনি ইমামের
পিছনে সুরা ফাতেহা
পড়তেন (কিতাবুল কেরাত- বায়হাকি- ২য় খন্ড-১৬৮
পৃষ্টা)..…
উপরের আয়াত
নাজিল হওয়ার কারনঃ রাসুল (সাঃ)
মক্কায় যখন সাধারণ ভাবে কাফেরদের কে কুরআন শুনাচ্ছিলেন
তখন কাফেররা একে অপরকে বলেছিলো তোমরা তা শুননা,
চিল্লা পাল্লা কর।
তাহলে তোমরা জয়ি
হবে,তখন এই উপড়ের আয়াত
নাজিল হল।যে,রাসুল(সাঃ)
যখন কুরআন
পড়ে তোমরা ইহুদিরা তখন
চুপ থাকো ও মনোযোগ সহ তা শুনতে থাকো
হয়তো তোমাদের
উপর রহম করা হবে। বিশ্বাস না হলে দেখুন
সুরাঃ হামিম আস-
সিজদাহর ২৬নং
আয়াতে.…
[ সূরা: Fussilat (হা মিম সাজদাহ) (Explained in detail) মক্কায় অবতীর্ণ সূরা নং: ৪১ আয়াত সংখ্যা: ৫৪
26
. ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﻟَﺎ ﺗَﺴْﻤَﻌُﻮﺍ ﻟِﻬَٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻭَﺍﻟْﻐَﻮْﺍ ﻓِﻴﻪِ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﻐْﻠِﺒُﻮﻥَ
আর কাফেররা বলে, তোমরা এ কোরআন শ্রবণ করো না এবং এর আবৃত্তিতে হঞ্জগোল সৃষ্টি কর, যাতে তোমরা জয়ী হও।]
এইটাকে হানাফিরা চালিয়ে দেয় ইমামের পিছনে মুসল্লীরা চুপ থাকবে ও বলে
হানাফিরা কি প্রমান দিতে পারবে যে আরাফের ঐ আয়াতে মাদানী অর্থাত্ রাসূলের হিজরতের পর নাজিল হয়েছে ?????
আমাদের দলিল হল কুরআন…
লেবেলসমূহ:
ইমাম নুমান ইবনে সাবিত (আবু হানিফা) (রহঃ),
দেওবন্দী,
মাযহাব,
লা মাযহাবী,
সালাত
শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৬
হিন্দু ধর্মের মা কালী ও পাঠা বলীর ইতিহাস
----------------হিন্দু ধর্মের মা কালী ও পাঠা বলীর ইতিহাস--------------------
.কালী দেবীর কাপড় লাগেনা সে সব সময় উলঙ্গই থাকে, তাই কালী দিনে বের হয় না রাতের বেলাতে বের হতে তার ভালো লাগে।। তো কালী একদিন রাতের বেলায় বনের মধ্যে ঘুরতে ছিলো, ঘুরতে ঘুরতে দেখলো সকাল হয়ে যাচ্ছে, কালী এখন কি করবে উলঙ্গ অবস্তায় মানুষে যদি দেখে ফেলে তবেতো কালী লজ্জা পাবে।
কালী চিন্তা করলো এখন কি করা যায়?
আমাকেতো সবাই দেখে ফেলবে হঠাৎ কালী দেখতে পেলো এক যুবক ছাগলের পাল নিয়ে যাচ্ছে, কালী তখন ছাগীর রূপ ধারন করে সেই ছাগলের পালের মধ্যে প্রবেশ করলো।
সেই ছাগলের পালের মধ্যে এক পাঠা নতুন একটা ছাগী দেখে উত্তেজিত হয়ে পাঠা কালী রূপী ছাগীর সাথে সঙ্গম করে ফেললো।
এবার ছাগী রূপী কালী ভীষন ক্ষেপে গেলো, যে এতো বড় সাহস আমি হলাম একজন দেবী আর আমার সাথে এই আকাম কুকাম করলো পাঠা? সুতরাং এই পাঠাকে প্রতিদিন আমার (কালীর) সামনে বলী দিতে হবে।
এভাবে কালপূজায় পাঠা বলীর নিয়ম হয়েছে।।
সূত্রঃ- [কালিকাপু রান:আধ্যায় -১৩: পাঠাবলী খন্ড:ভুবনময় চট্টোপাধ্যায় : ৪র্থ সংকলন ]
হিন্দু নগ্ন সাধুদের বিভিন্ন হাস্যকর ভংগি (শেয়ার করুন)
-----:পেইজে আমরা
হিন্দু নগ্ন সাধুদের
বিভিন্ন হাস্যকর
ভংগি আমরা দেখতে
পারছি।:---- (শেয়ার
করুন)
এদের দেখলে হাস্যকর
মনে হলেও এরা ততটা হাস্যকর নয়।এদের
বলা হয় আগরি,এরা
মূলত শয়তান পূজারি তান্ত্রৃক। এদের জীবন
যাপন সিষ্টেম পুরোটাই
স্যাটনিক।হিন্দুরা যে সাধু দ্বারা পরিচালিত
ও বিভিন্ন পূজা করে
এইটা এদের জিবন
যাপন দেখেই বুঝা যায় যাই হোক এইসব লেংটা
হিন্দু দের সব ভয়ংকর
শয়্তানি কাজকারবার
তুলে ধরব
এই তান্ত্রৃকরা মূলত
লেংটা থাকে কারন
শয়তান মানুষের লজ্বা
উঠিয়ে যার প্রমান
এইসব শয়তান
পূজারিরা,শয়তানের
নামে তারা পশু বলি
দেয় এবং মৃত মানুষের
উপর বসে ধ্যান
করে,যার প্রমান
নিচের ভিডিওটি
বলিকৃত পশু পাখীর
তাজা রক্ত
খায়,প্রমান এই
ভিডিওটি
সবচেয়ে ভয়ংকর যেটা
তারা মানুষের মাংস
পুড়িয়ে পর্যন্ত
খায়,নিচে তাদের
মানুষের মাংস খাওয়ার
ভিডিওটা দিলাম
হিন্দু বৌদি রা আঘোরি
বা সাধু বাবাদের লিঙ্গকে যত্ন ও সেবার
দ্বারা সন্তুষ্ট করে
সন্তানের আশায় ....
আর পুরুষের লিঙ্গ
মৈথুনের পর কি হয় বা
হতে পারে তা কি
বলতে হবে ? হিন্দু
সাধুরা একে অপরের
সঙ্গে সমকামীতায়
লিপ্ত হয়, অবৈধ
যৌনসম্পর্কের মেলা
চলে , নারী পুরুষ একই
সাথে স্নানে নেমে
যৌনমিলন করে
,কুমারী ও অবিবাহিত
মেয়েরা তাদের
সতীত্ব হারায়, গাজা
মদ জুয়ার আসর বসে
এবং সকল প্রকার
অপরাধ হয়,এ কুম্ভ
মেলাকে স্পট
নির্বাচন করে নারী ও
শিশু অপহরনের ঘটনা
ঘটে ,লুট বা ছিনতাই
বা রেপ ও হয় ,এ স্থান
কেন্দ্র করে মাদক সহ
নানান চোরাচালান
কার্যকর হয় , আরও
বহু ইতিহাস আছে,এই
ভিডিওটা দেখতে
পারেন
অপ্রাকিতিক শক্তি
তথা ব্ল্যাক
ম্যাজিকের জন্য
তাদের জন্য এই
ভিডিও এইখানে সাধুরা
যে ব্ল্যাক ম্যাজিক
করে তার প্রমান আছে
এই সাধুরা যে ব্ল্যাক
ম্যাজিক স্পেয়ালিষ্ট
তার আরেকটি ভিডিও
আপনারা হয়ত
অনেকেই জানেন
মুহাম্মদ বিন
কাশিম,মুহাম্মদ ঘূরি
সহ আরো অনেকের
ভারত অভিযানের
সময় এই তৎকালীন
হিন্দুের এগুলি থেকে
বিরত রাখেন।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)