শুক্রবার, ১৩ মে, ২০১৬

প্রশ্ন: কেন আরবদেশের সঙ্গে একই সময়ে সাহরী ও ইফতার খাই না এবং নামায আদায় করি না?

প্রশ্ন করা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে চাঁদ দেখার তারিখ অনুযায়ী বাংলাদেশে রোযা ও ঈদ হবে, তাহলে আমরা কেন আরবদেশের সঙ্গে একই সময়ে সাহরী ও ইফতার খাই না এবং নামায আদায় করি না?
_________________________________________________________________________________________________________
উত্তর
::___________________________________
এখানে একটি মৌলিক কথা মনে রাখতে হবে যে, রোযা ফরয হওয়া নামায ফরয হওয়া এক বিষয়।
আর রোযা আদায় করা নামায আদায় করা এবং সাহরী ও ইফতার খাওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
যে কোন ইবাদত ফরজ হওয়ার ভিত্তিকে আসবাবে উজুুব বা ওয়াজিব হওয়ার কারণ বলে ।
পক্ষান্তরে কোন ইবাদত বাস্তবায়ন করার ভিত্তিকে আসবাবে আদা বা সমাপনের কারণ বলে।
অর্থাৎ প্রতিটি ইবাদতের দুটি দিক রয়েছে।
একঃ ইবাদতটি ফরয হওয়া,
দুইঃ ফরয হওয়া উক্ত ইবাদতকে কার্যের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা। রোযা রাখার ক্ষেত্রেও অনুরূপ।
প্রথমত; রোযা ফরয হওয়া,
দ্বিতীয়ত; রোযাকে কাজের মাধ্যমে পূর্ণতা দেয়া।
প্রথমটি অর্থাৎ রোযা ফরয হওয়া নির্ভর করে চাঁদ দেখার মাধ্যমে মাসের উপস্থিতির উপর।
ফলে পৃথিবীর আকাশে পবিত্র রমযান মাসের চাঁদ দেখার মাধ্যমে রমযান মাস প্রমাণিত হওয়ার সাথে সাথে সমগ্র পৃথিবীর সকল মু’মিন নারী পুরুষের উপর একই সাথে রোযা ফরয হওয়া সাব্যস্ত হয়ে যায়। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ঘোষণা হলো-
ﻓﻤﻦ ﺷﻬﺪ ﻣﻨﻜﻢ ﺍﻟﺸﻬﺮ ﻓﻠﻴﺼﻤﻪ অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই রমযান মাসে উপনিত হবে সে যেন রোযা রাখে।
এখন প্রশ্ন হলো ফরয হওয়া এ রোযা আমরা কিভাবে আদায় করব?
যা রোযার দ্বিতীয় দিক অর্থাৎ রোযাকে কার্যে পরিণত করা যা শুরু হয় সাহরী খাওয়ার মাধ্যমে এবং শেষ হয় ইফতারের মাধ্যমে।
আর দ্বিতীয়টি অর্থাৎ সাহরী ও ইফতারীর মাধ্যমে রোযাকে বাস্তবায়ন করা নির্ভর করে সূর্যের পরিভ্রমনের উপর। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ঘোষণা হলো-
ﻭَﻛُﻠُﻮﺍ ﻭَﺍﺷْﺮَﺑُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺘَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﺨَﻴْﻂُ ﺍﻟْﺄَﺑْﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﻴْﻂِ ﺍﻟْﺄَﺳْﻮَﺩِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ﺛُﻢَّ ﺃَﺗِﻤُّﻮﺍ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡَ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ অর্থাৎ তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে (পূর্ব আকাশে) ভোরের শুভ্র রেখা পরিস্কার হয়। অতপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত।
অত্র আয়াতের ঘোষণা থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে, রোযা কার্যের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করার শুরু হচ্ছে সুবহি সাদিক এবং রোযা সমাপ্ত হবে রাতের শুরুতে যা ইফতারের সময়।
সুবহি সাদিক এবং রাত হওয়া অবশ্যই সূর্যের পরিভ্রমনের সাথে সম্পর্কিত, চাঁদের সাথে নয়।
তাহলে উপরোক্ত দু’টি আয়াতের সারকথা এ দাড়ালো যে, পৃথিবীর কোথাও চাঁদ উদয় প্রমাণিত হওয়ার সংবাদ গ্রহণযোগ্য মাধ্যমে পাওয়ার সাথে সাথে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক মু‘মিন-মু’মিনার উপর রোযা ফরয হবে।
রোযা বাস্তবায়ন করতে হবে সূর্যের পরিভ্রমনের দ্বারা।
তাই সূর্যের পরিভ্রমনের প্রতি লক্ষ রেখেই স্থানীয় সৌর সময় অনুযায়ী পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন সময়ে সাহরী, ইফতার ও নামায আদায় করতে হয়।
যেহেতু বাংলাদেশে সূর্য উদয়-অস্ত মধ্য প্রাচ্যের মক্কা নগরীর উদয়-অস্তের সময় থেকে ৩ ঘন্টা অগ্রগামী সে কারণেই বাংলাদেশে সাহরী, ইফতার ও নামাযের সময় মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের চেয়ে ৩ ঘন্টা আগে হবে।
সুতরাং এ ব্যপারে আর কোন প্রশ্ন থাকতে পারে না।
মনে করুন রাষ্ট্রীয় ঘোষণা মতে সমগ্র বাংলাদেশবাসী শুক্রবার ১ম রমযানের রোযা রাখলেন।
অথচ ঐ দিনই পার্বত্য চট্রগ্রামের মানুষের সাহরীর শেষ সময় ও ইফতারের সময় যখন হয়, তার ১৩ মিনিট পরে হবে পঞ্চগড়বাসীদের সাহরীর শেষ সময় ও ইফতারের সময়। এর কারণ হলো রোযা রাখা হয় চাঁদের তারিখের ভিত্তিতে।
তাই একই চান্দ্রতারিখে সকলে রোযা রাখবে। আর সাহরী, ইফতার ও নামাযের সময় হয় সূর্যের গতি বিধিতে।
ফলে যার যার স্থানীয় সৌর সময়ানুযায়ী সাহরী ও ইফতার গ্রহণ এবং নামায আদায় করবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন