শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৫
"বাউল মতবাদ"
বাউল মতবাদের মুলে রয়েছে স্রষ্টার সর্বেশ্বরবাদ (Pantheism) যা কুফরী।
[[[[ বিঃদ্রঃ শয়তান এই বাউলদের ভন্ডামী তুলে ধরার জন্য লেখা ]
[ইসলাম ধর্মে এই বাউলদের কোন স্থান নেই ]
[এই লেখায় যে কথাগুলো ইসলাম বিরুদ্ধী তা আমার পক্ষ থেকে না MD SAROWER ]]]]
বাউলরা মানুষ এবং সৃষ্টিকর্তাকে অভেদ জ্ঞান করেন। এরা বাহ্যিক কোন ধর্মীয় আচার আচারনে বিশ্বাসী নন। তাদের নেই কোন শাস্ত্রীয় পুস্তক।
বাউলের অসংখ্য গানের মধ্যে তাহা প্রকাশিত।
বাউল মতে, দেহের মধ্যেই বাস করেন পরম পুরুষ।তাকে পেতে দরকার দেহ-সাধনা।
পণ্ডিতদের অনেকের মতে, বাউল শব্দের অর্থ উন্মাদ বা পাগল। শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ 'বাতুল' থেকে। কারো মতে, 'বাউর' (বিশৃঙ্খল) কিংবা 'ব্যাকুল' শব্দ থেকে শব্দটির উৎপত্তি। অন্যমতে।
এটি 'আউয়াল' বা 'আউলিয়া' শব্দের অপভ্রংশ।
আরেক মত, গ্রাম্য উল অর্থ সন্ধান বা অর্থ সঙ্গে। দু'য়ে মিলে বাউল। অর্থাৎ 'সন্ধানের সঙ্গে বর্তমান'।
সংস্কৃত শব্দ 'বাউলা' 'বাউরার' অপভ্রংশও মনে করেন কেউ কেউ।
সাধারনভাবে ধর্মীয় শাস্ত্রাদি ও সামাজিক প্রথা ত্যাগ করে উদাসীনতা ও উন্মাদভাবের আশ্রয় নেওয়ার জন্য এদের অভিহিত করা হয় 'বাউল' নামে।
বাউল তত্ত্বের আদর্শ সমূহ -
১। গুরুবাদ
২। শাস্ত্রহীন সাধনা ৩। দেহতত্ত্ব
৪। মনের মানুষ
৫। রুপ স্বরূপ তত্ত্ব
১।গুরুবাদ- গুরু হচ্ছেন শিক্ষক, পরামর্শদাতা, পথ প্রদর্শক, মুর্শিদ। তিনি মানব গুরু এবং পরম পুরুষ দুই-ই। তাকে ঘিরেই গুরুতত্ত্ব । যেমন গুরু সম্পর্কে লালনের সহজ সরল স্বীকারোক্তি --
'যেই মুর্শিদ সেই তো রাসুল, ইহাতে নাই কোন ভুল,
খোদাও সেই হয়; লালন কয় না এমন কথা, কোরানে কয়।।'
'মুর্শিদ বিনে কি ধন আছে রে এই জগতে?
মুর্শিদ চরন সুধা, পান করিলে হবে ক্ষুধা; করোনা দেলে দ্বিধা।
যে মুর্শিদ, সেই খোদা ...... '
'জান গে যা গুরুর দ্বারে,
জ্ঞান উপাসনা কোন মানুষের কেমন কীর্তি,
যাবে রে জানা ................ '
২।শাস্ত্রহীন সাধনা- বাউলরা মনে করে আনুষ্ঠানিক ধর্মীয় আচার পালন করে 'মনের মানুষ' পাওয়া যায়না। রীতি নীতি বিধান- বিহিতে কিছু নেই। তাই লালন গেয়ে উঠে ....
'কার বা আমি কেবা আমার, আসল বস্তু ঠিক নাহি তার,
বৈদিক মেঘে ঘোর অন্ধকার, উদয় হয়না দিনমণি ...... '
'সত্য কাজে কেউ নাই রাজি সবই দেখি তা না না না
জাত গেলো জাত গেলো বলে এ কি আজব কারখানা ...... '
'বেদ বিধির আগোচর সদাই কৃষ্ণপদ্ম নিত্য উদয়,
লালন বলে মনের দ্বিধায় কেউ দেখেও দেখেনা .................. '
৩।দেহতত্ত্ব- বাউল সাধকদের সাধনা দেহে উপর আশ্রয় করে গড়ে উঠে। কারন ঈশ্বর দেবতা সবই কাল্পনিক, মানুষের বিশ্বাস বিশেষ। সাধারন মানুষের জন্য এগুলো প্রতীক মাত্র। আসলে 'পরম পুরুষ' বাস করেন শরীরে। তাই শরীরের সাধন শ্রেষ্ঠ সাধন। বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাস বলেছেন --
'সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই' । সেই সুত্রে ধরে বাউল কর্তারা রচনা করেছেন --
'কুতবি যখন কফের জ্বালায়,তাবিজ তাগা বাধবি গলায়
তাতে কি আর হবে ভালাই, মস্তকের জল শুষ্ক হলে .........'
'আদি মক্কা এই মানবদেহে, দেখ নারে মন ভেয়ে,
দেশ - দেশান্তর দৌড়ে কেন মরছোরে হাঁপিয়ে .................'
'দেহের খবর যে জন করে, আলেক বাজি সে দেখিতে পারে
আলেক দম হাওয়ায় চলে,
কি আজব কারখানা ............... '
৪।মনের মানুষ- মনের মানুষ হচ্ছে দেহস্থিত আত্মা। আত্মাই বহুনামের মানুষ - ভবের মানুষ, রসিক মানুষ, সোনার মানুষ, আলেক সাঁই ইত্যাদি। লালন তাকে স্মরণ করেন -
'এই মানুষে আছেরে মন,যারে বলে মানুষ রতন।
লালন বলে পেয়ে সে ধন, পারলাম নারে চিনিতে .......... '
'আত্মতত্ত্ব না জানিলে ভজন হবেনা,
পড়বি গোলে আগে জানগা কালুল্লা,
আয়নাল হক আল্লা,
যারে মানুষ বলে পড়ে ভূত এবার,
হসনে মন আমার, একবার দেখনা প্রেমনয়ন খুলে।
আপনি সাঁই ফকির, আপনি ফকির, ও সে লীলার ছলে ........ '
'মুন্সী ও মৌলভীর কাছে, জনম ভর সুধাই সে, ঘোর গেলো না।
পড়ে নেয় পরের খবর, আপন খবর কেউ বলেনা ......... '
৫।রুপ-স্বরূপ তত্ত্ব- দেহ বা কান্তি চেতনাই সব। রুপ হচ্ছে নারী বা প্রকৃতি আর স্বরূপ হচ্ছে নর বা পুরুষ। রুপ এবং স্বরূপ এর দৈহিক মিলনেই সাধন সম্পূর্ণ হতে পারে। রুপ - সরূপ এর ভবের তাৎপর্য বুঝার জন্য হলেও তাদের মিলনের প্রয়োজন।
মূল বাউল তত্ব এর কোন জাত বিচার নেই। শ্রেণীহীন সহজ সরল জীবনের অভিসারী বাউলরা সর্বেশ্বরবাদ , ত্যাগের আদর্শবাদী। কিন্তু সেই সর্বেশ্বরবাদ সত্ত্বা মানেই আল্লাহ, ভগবান, ঈশ্বর কিংবা প্রচালিত কোন সৃষ্টিকর্তা হতেই হবে এমন কোন বাধ্য নিয়ম নেই, অনেক বাউল-ই Mysticism বা অতীন্দ্রিয়বাদে বা অদৃশ্য সত্ত্বায় বিশ্বাসী যাকে কোন নিদিষ্ট সৃষ্টিকর্তার আওতায় ফেলাকে এক অর্থে অসম্ভব ব্যাপার।
কোন কোন বাউল সম্প্রদয়ের মতে, বাউল সাধনায় 'দেহ সাধনা' প্রধান বলেই নর-নারীর আঙ্গিক মিলন অপরিহার্য। এ হচ্ছে যুগল সাধনা। যুগল সাধনা দুই প্রকার - স্বকীয়া এবং পরকীয়া। তবে পরকীয়া বেশি প্রার্থিত।
বাউলদের মতে 'পঞ্চরস' পান না করলে প্রকৃত সাধক হওয়া যায়না।
পঞ্চরসের উপকরন হচ্ছে - মল, মুত্র, ঋতুরক্ত, রতিজনিত স্ত্রী-পুরুষের ক্ষরিত রস ও বীর্য।
যুগল সাধনার ক্ষেত্রে বাউল স্বকীয়া তথা স্ত্রীকেই সাধারণত সাধন-সঙ্গিনী করে।।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন