বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম,
আহলে হক নামধারীদের বিশ্বাস করা খুবই কঠিন। কারণ এরা হকের মাঝেইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়ঠক ঢুকায়। স্বলাতে "আমীন" বলা নিয়ে গুগলে সার্চ দেওয়ায় সামনে আসলো তথাকথিত আহলে হক দাবীদারদের ওয়েব সাইটের একটি পেইজ।
যেখানে রয়েছে কিছু খেজুইরা প্যাচাল যার লেখক মাওলানা আমীন সফদর এবং অনুবাদক বিশিষ্ট (কু) চিন্তাবিদ লুতফুর রহমান ফরাজী।
মূলত আস্তে আমীন বলার একটাও সহীহ হাদিস নেই।
রাসূলুল্লাহ সা: থেকে যত হাদিস বর্ণিত হয়েছে তার সবগুলোই উচ্চৈ:স্বরে আমীন বলা বা প্রকাশ্যে বলার ব্যাপারে।
যেহেতু নিজেদের মাযহাবের মতের পক্ষে কোন সহীহ হাদিস নাই, তাই ইচ্ছাকৃতভাবে
*.জোরে আমীন বলার হাদিস গুলো প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা,
*.সেগুলোর মাঝে সন্দেহ সৃষ্টি করানো,
*.মানুষদের হাদিসগুলোর ব্যাপারে বিভ্রান্ত করা,
*.মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা,
*.সহীহ হাদিসকে যঈফ বানানো হানাফীদের নিকট খুবই পছন্দনীয়।
জোরে আমীন বলার হাদিস:
حَدَّثَنَامُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، أَخْبَرَنَاسُفْيَانُ، عَنْ سَلَمَةَ، عَنْ حُجْرٍ أَبِي الْعَنْبَسِ الْحَضْرَمِيِّ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا قَرَأَ { وَلاَ الضَّالِّينَ } قَالَ " آمِينَ " . وَرَفَعَ بِهَا صَوْتَهُ
ওয়েল বিন হুজর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: যখন ওলাদ্দল্লীন পড়তেন, তখন উচ্চৈ:স্বরে আমীন বলতেন। (আবু দাউদ, হাদিস # ৯৩২)
উপরের আবু দাউদের এই জোরে আমীনের হাদিসকে যঈফ বানানোর জন্য প্রথমে ২টি সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
অভিযোগ-১:সুফিয়ান সাওরী মুদাল্লিস, তিনি আন শব্দে সালামাহ বিন কুহাইল থেকে বর্ণনা করেছেন। তাই এটি যঈফ।
অভিযোগ-২:মুহাম্মদ বিন কাসীর যঈফ
১ নং অভিযোগের জবাব:
সুফিয়ান সাওরী মুদাল্লিস। এটা প্রমাণিত। তিনি সালামাহ বিন কুহাইল থেকে আন শব্দে বর্ণনা করেছেন। এটাও প্রমাণিত। তবে সুফিয়ান থেকে সালামাহ বিন কুহাইলের হাদ্দাসানা মর্মে হাদিস রয়েছে। বিধায়, আন শব্দের বর্ণনা কোন সমস্যা নয়।
প্রমাণ:
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ،عَنْ سُفْيَانَ قَالَ: حَدَّثَنِي سَلَمَةُ بْنُ كُهَيْلٍقَالَ: حَدَّثَنِي مُعَاوِيَةُ بْنُ سُوَيْدِ بْنِ مُقَرِّنٍ قَالَ: لَطَمْتُ مَوْلًى لَنَا فَفَرَّ، فَدَعَانِي أَبِي فَقَالَ لَهُ: اقْتَصَّ، كُنَّا وَلَدَ مُقَرِّنٍ سَبْعَةً، لَنَا خَادِمٌ، فَلَطَمَهَا أَحَدُنَا، فَذُكِرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: مُرْهُمْ فَلْيُعْتِقُوهَا، فَقِيلَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم: لَيْسَ لَهُمْ خَادِمٌ غَيْرَهَا، قَالَ: فَلْيَسْتَخْدِمُوهَا فَإِذَا اسْتَغْنَوْا خَلُّوا سَبِيلَهَا.
সূত্র:আল আদাবুল মুফরাদ, মনিবের ব্যবহার পরিচ্ছেদ, হাদিস # ১৭৮
এছাড়া সহীহ মুসলিমেও সুফিয়ান থেকে আন শব্দে সালামাহ বিন কুহাইল সূত্রে হাদিস বর্ণিত আছে।
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَأَبُو كُرَيْبٍ، قَالَا: حَدَّثَنَا وَكِيعٌ،عَنْ سُفْيَانَ ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ كُرَيْبٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنّ النَّبِيَّ K " قَامَ مِنَ اللَّيْلِ، فَقَضَى حَاجَتَهُ، ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ، ثُمَّ نَامَ
সূত্র: সহীহ মুসলিম, হাদিস # ৫৯৬
আবু দাউদের হাদিস যঈফ হলে তো মুসলিমের হাদিসও যঈফ হয়ে যায়।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, এই অভিযোগটিও অগ্রহণযোগ্য।
==================================================================
২নং অভিযোগের জবাব:
মুহাম্মদ বিন কাসীরকে যঈফ বলাটা বড় ধরণের ভুল। উচ্চৈ:স্বরে আমীনের হাদিসতে যঈফ বানানোর জন্য এই ভুল হানাফীদের গুরুমাওলানা আমীন সফদর করেছেন। আর তার অনুসরণ করেলুতফুর ফরাজীও করেছেন।
তবে আরেক মুফতি,ইজাহারুল ইসলাম একটু ধূর্ত প্রকৃতির। তাই তিনি এমন শব্দ ব্যবহার করেছেন যাতে সাপও মরে, লাঠিও না ভাংগে। তিনি বলেছেন মুহাম্মদ বিন কাসীর বিতর্কিত।
এই বিতর্কিত ট্যাগ লাগানোর ফায়দা হচ্ছে আপনি বুঝতে পারবেন না এই রাবীর বর্ণিত হাদিসটি গ্রহণযোগ্য নাকি অগ্রহণযোগ্য।
তিনি সুফিয়ান সাওরী থেকে জোরে আমীন বলার আরেক হাদিসের বর্ণনাকারী খাল্লাদ বিন ইয়াহিয়া সম্পর্কেও তিনি এমন ট্যাগই লাগিয়েছেন।
আর খাল্লাদ বিন ইয়াহিয়াও বুখারীর রাবী।
ইমাম বুখারী রহ. তাঁর থেকে প্রায়২২টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। এই গ্রহণযোগ্য রাবীদের বিতর্কিত ট্যাগ লাগিয়ে ধোয়াশা সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে মুসলিমরা না বুঝতে পারে এই রাবী গ্রহণযোগ্য নাকি অগ্রহনযোগ্য।
*.মুহাম্মাদ বিন কাসীর আবদী বুখারী ও মুসলিমের রাবী।
*.ইসলাম ওয়েবের তথ্য অনুযায়ী ইমাম বুখারী এই রাবী থেকে প্রায় ৬৪ হাদিস সহীহ বুখারীতে বর্ণনা করেছেন।
*.ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই রাবীকে তাকরীবে উল্লেখ করে সিকাহ বলেছেন। (দেখুন তাকরীবুত তাহযিব, রাবী নং - ৬২৯২)
সুতরাং মাওলানা আমীন সফদর গংদের মুহাম্মাদ বিন কাসীরকে যঈফ বলা ভুল।
================================================================= =
حَدَّثَنَا مَخْلَدُ بْنُ خَالِدٍ الشَّعِيرِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَاعَلِيُّ بْنُ صَالِحٍ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، عَنْ حُجْرِ بْنِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، أَنَّهُ صَلَّى خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ K " فَجَهَرَ بِآمِينَ، وَسَلَّمَ عَنْ يَمِينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ حَتَّى رَأَيْتُ بَيَاضَ خَدِّهِ
ওয়াইল ইবনে হুজর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) এর পিছনে নামায আদায় করা কালে তিনি স্বশব্দে আমীন বলেন এবং (নামায শেষে) ডান ও বাম দিকে সালাম ফিরান এভাবে যে, আমি তাঁর গণ্ডদেশের সাদা অংশ পরিষ্কারভাবে দেখি।
সূত্র:সুনান আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, হাদিস ৯৩৩।
৩ নং অভিযোগ: উপরোক্ত হাদিসটি যঈফ বলা হয়েছে আলী বিন সালেহ শিয়া বলে।
৩ নং অভিযোগের জবাব:
*.আলী বিন সালেহ সিকাহ রাবী;
*.সহীহ মুসলিমের রাবী;
*.সালামাহ বিন কুহাইলের অন্যতম ছাত্র ইমাম মুসলিম একই সানাদে আলী বিন সালেহ সূত্রে সহীহ মুসলিমে ৩৯৬৫ নং হাদিসে উল্লেখ করেছেন।
প্রমাণ:
সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হাদিসটি সহীহ। আলী বিন সালেহ শিয়া নন।
শিয়া হলেই হাদিস বাতিল হয়ে যায় না।
বুখারী ও মুসলিমে অনেক হাদিস রয়েছে যার বর্ণনাকারী শিয়া।
আল্লাহ আমাদের সত্য বলার, সত্যবাদীদের সাথে থাকার ও সত্য গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ আমাদের মিথ্যাবাদীদের মিথ্যার কবল থেকে রক্ষা করুন। (আমীন)।
[ লেখক: Abdullah Arif Lalbagh
http://m.facebook.com/notes/406967502846152/ ]
যাযাকাল্লা খাইরান
উত্তরমুছুন