শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

মুসলিম উম্মাহ’র সকল ইবাদত একই দিনে সালাতের দলিল (১ম পর্ব)

মুসলিম উম্মাহ’র সকল ইবাদত একই দিনে
¤¤¤¤¤¤¤¤¤¤¤¤¤¤¤¤¤¤¤¤¤
সকল প্রশংসা জগত সমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি পরিপূর্ণ দ্বীন হিসাবে আমাদেরকে ইসলাম দান করেছেন, যে দ্বীনে মানুষের পক্ষ থেকে কোন সংযোজন বা বিয়োজনের প্রয়োজন হয় না ৷
সালাত ও সালাম তাঁরই রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি, যিনি আল্লাহর দ্বীনের রিসালাতের দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় করেছেন, কোথাও কোন কার্পণ্য করেননি ।
দ্বীন হিসাবে যা কিছু এসেছে তিনি তা উম্মতের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন ও নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে গেছেন ৷ তার সাহাবায়ে কিরামের প্রতি আল্লাহর রাহমাত বর্ষিত হোক, যারা ছিলেন উম্মতে মুহাম্মাদীর আদর্শ ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ পালনে সকলের চেয়ে অগ্রগামী ৷
পবিত্র কুরআনের সূরা তাওবার ০৯:৩৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে- “নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি, আসমান গুলো ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে । তার মধ্যে চারটি সম্মানিত । এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান । সূতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না”
সূরা ইউনুসের ১০:৫ম আয়াতে বলা হয়েছে- “তিনি (আল্লাহ), যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান এবং চন্দ্রকে আলোকময় বানিয়েছেন এবং ওর (গতির) জন্য মঞ্জিলসমূহ নির্ধারণ করেছেন যাতে তোমরা বছরসমূহের সংখ্যা হিসাব জানতে পার পৃথিবীতে দিন বলতে (রাত্র দিবা অথবা রাত্র রাত্র) সময় ২৪ ঘন্টাকে বুঝানো হয় ।
কোন জনগোষ্ঠীর দিন শুরু হয় রাত্র ১২ টা হতে পরবর্তী রাত্র ১২ টা পর্যন্ত ।
তাদের মাস ফেব্রুয়ারী ব্যতিত সকল মাস ৩০ বা ৩১ দিনে, ১২ মাসে এক বছর এবং বছর ৩৬৫ বা ৩৬৬ দিনে হয় ।
বিশ্বের সকল মুসলিম উম্মার দিন শুরু হয় সূর্যাস্ত হতে পরবর্তী সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত ।
মাস ২৯ বা ৩০ দিনে, ১২ মাসে এক বছর এবং বছরের দিন নির্দিষ্ট নয় (কারন চাঁদের উদয়ের উপর নির্ভরশীল) সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হয় । সমগ্র বিশ্বে (সকল ধর্মে) সময় নির্ধারিত হয় সূর্যের সাথে সম্পর্ক করে ।
তাই পৃথিবীর পূর্ব হতে ক্রমান্বয়ে পশ্চিম দিকে সূর্যদ্বয় এবং সূর্যাস্তের সময়ের পার্থক্য দেখা যায় সর্বোচ্চ ১২ ঘন্টা ।
অতএব মুসলিমদের জন্য কোন দেশে রাত্র (দিন শুরু) আবার কোন দেশে দিবা (দিনের অর্ধাংশ) অর্থাৎ একই দিন ।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সালাতের সময় পৃথিবী সূর্যের আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সময়ের পার্থক্যের সাথে সম্পৃক্ত ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন: ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻛِﺘَﺎﺑًﺎ ﻣَﻮْﻗُﻮﺗًﺎ )ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ১০৩) ‘নিশ্চয় সালাত মুসলিমদের উপর ফরজ নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে’ (সুরা-আন- নিসা: ০৪:১০৩)
আপনার পালন কর্তার সপ্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করুন সূর্যদ্বয়ের পূর্বে সূর্যাস্তের পূর্বে এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করুন রাত্রির কিছু অংশ ও দিবা ভাগে (ত্বোয়া হাঃ আয়াত ২০:১৩০)
অতএব তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা স্বরণ কর সন্ধ্যায় ও সকালে এবং অপরাহ্নে ও মধ্যাহ্নে (আর রুমঃ আয়াত ৩০:১৭, ১৮)
আর দিনের দুই প্রান্তেই সালাত ঠিক রাখবে এবং রাতে ও প্রান্ত ভাগে (হুদঃ আয়াত ১১:১১৪)
সূর্য্য ঢলে পরার সময় থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করুন (বণি ইসরাঈলঃ আয়াত ১০:৭৮)
  • ফজরঃ-(সূর্য দ্বয়ের পূর্বে- ত্বোয়া-হা২০/১৩০; প্রান্ত ভাগে- হুদ১১/১১৪) সূর্যদ্বয়ের আগ পর্যন্ত । রাসুল (সঃ) ফজরের সালাত এমন সময়ে পড়তেন যে, সালাত শেষে মুসল্লিরা একে অপরকে চিনতে পারতেন না (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ৬০ পৃঃ)

  • যোহরঃ-(মধ্যাহ্নে-রুম৩০/১৭, ১৮; দিবা ভাগে-ত্বোয়া হা২০/১৩০) সূর্য মাথার উপর হেলে যাওয়ার পর হতে কোন কাঠি বা মানুষের ছায়া তার সমান দীর্ঘ না হওয়া পর্যন্ত (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ, মেশকাত হাঃ নং ৫৮১)

  • আছরঃ- (অপরাহ্নে- রুম৩০/১৭, ১৮) বস্তুর মুল ছায়া একগুন হওয়ার পর থেকে হলুদ রং হওয়া পর্যন্ত বাকি থাকে (মুসলিম, মেশকাত, হাঃ নং ৫৩৪)

  • মাগরীবঃ- (সূর্যাস্তের পূর্বে-ত্বোয়া হা২০/১৩০; সুর্য্য ঢলে পরার সময় থেকে… ইসরাঈল১৭/৭৮) সূর্যাস্তের পর থেকে পশ্চিম আকাশে লাল আভা দূর না হওয়া পর্যন্ত থাকে (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ৫০ পৃঃ)

  • এশাঃ-(রাত্রির কিছু অংশ-ত্বোয়হা২০/১৩০; রাতে- হুদ১১/১১৪) মাগরীবের পর হতে অর্ধ রাত্র পর্যন্ত (মুসলিম, মেশকাত ৫৯ পৃঃ)

  • জুমআঃ-প্রতি শুক্রবার যোহর সালাতের ওয়াক্তে । সাহাবী সাহল বিন সাআদ (রাযিঃ) বলেন, আমরা জুমুআর সালাতের আগে দুপুরের বিশ্রামও করতাম না এবং দুপুরের খাবারও খেতাম না বরং পরে করতাম (বুখারী মুসলিম, মেশকাত আলবানী ১/৪৪১ পৃঃ)

উপরের আল্লাহর বাণী এবং হাদিসের আলোকে দেখা যায় আমরা বিশ্বের সকল মুসলিমরা একই দিনে সূর্যের সাথে সম্পর্ক করে (শরিয়া অনুযায়ী) ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সালাত আদায় করি ।
এছাড়া কিছু কিছু এলাকাতে (মেরু এলাকাতে) ৬ মাস দিন এবং ৬ মাস রাত হয় । নরওয়েতে কখনই রাত বা সন্ধ্যা হয়না এবং ইউরোপের কয়েয়কটি দেশে কখনও কখনও দিন ২৩ ঘন্টা পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়ে থাকে।
তাদের বলা হয়েছে- পার্শ্ববর্তী দেশের সময়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দিনের বেলায় সেহেরি খাবে, দিনের বেলায় ইফতার করবে ।
আবার যখন ৬ মাস রাত্রি তখন রাতে সেহেরি খাবে আবার রাতেই ইফতার করবে ।
সালাত আদায়ের জন্যও একই নির্দেশ (বুখারি)
যাকাত পবিত্র কুরআন বলে-
তোমাদের বন্ধুতো একমাত্র আল্লাহ তাঁর রাসুল এবং মুমিন বান্দা যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র (সুরা মায়েদার আয়াত ৫৫)
যাকাতের কোন সমষ্টিগত নির্ধারিত কোন সময় দিন নেই ।
এটা যার যার ব্যক্তিগত সময় দিন সম্পদের উপর নির্ধারিত ।
যে দিন হতে কোন ব্যক্তি নিসাব পরিমান (৫২.৫০ তোলা খাঁটি রুপা বা ৭.৫০ তোলা খাঁটি সোনা বা রুপা/ সোনার যে কোন একটির নিসাব পরিমান নগদ টাকা ইত্যাদি) সম্পদের মালিক হবে তার পরবর্তী এক বছরের মধ্যে শতকরা ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে (বুখারী হাদিস নং ১৩৮৮) ।
এটা এক এক জনের বছরের যে কোন দিন হতে পারে ।
চলবে.....-

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন